“যাদু আমার এল কন্যা, গজমোতি নিয়া!”
এই কথাখানা বলেছেন ‘শীত-বসন্ত’ গল্পের শাপে জর্জরিত দুঃখিনী দুয়োরাণী, যিনি বহুদিন ধরে সোনার টিয়ে হয়ে রূপবতী রাজকন্যার ঘরে বাস করছেন। রূপবতী রাজকন্যার স্বয়ম্বরের সময় যখন সে সাজগোজে ব্যস্ত, বারবার টিয়ের কাছে জিজ্ঞেস করে তাকে দেখতে কেমন লাগছে। প্রতিবারই টিয়ে নতুন কোনো এক বেশভূষার কথা বলে। এমন করতে করতে সে একসময় রাজকন্যাকে জানায়, গজমোতি ছাড়া কিছুতেই তার সাজ পরিপূর্ণ হবে না। দুয়োরাণী অবশ্য এমনটা করে নিজের ছেলেকে ফিরে পাবার আশায়।
“রাজকন্যা রূপবতী নাম থুয়েছে মায়। গজমোতি হতো শোভা ষোল-কলায়। না আনিল গজমোতি, কেমন এল বর? রাজকন্যা রূপবতীর ছাইয়ের স্বয়ম্বর!”
সোনার টিয়ের এমন ধিক্কার শুনে রাজকন্যা পণ করলো, যে গজমোতি আনবে– তাকেই সে স্বামী হিসেবে বরণ করবে। বরের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এমন অদ্ভুত সব দাবি রূপকথা বা পুরাণে নতুন নয়। মহাভারতেও দ্রৌপদীর স্বয়ম্বরের সময় তীর দিয়ে মাছের চোখ বেঁধার শর্ত রাখা হয়, যা পরে কুন্তীপুত্র অর্জুন পূরণ করেন।
“সকল রাজপুত্র গজমোতির সন্ধানে বাহির হইলেন। কত রাজ্যের কত হাতী আসিল, কত হাতীর মাথা কাটা গেল— যে-সে হাতীতে কি গজমোতি থাকে? গজমোতি পাওয়া গেল না। রাজপুত্রেরা শুনিলেন,
সমুদ্রের কিনারে হাতী, তাহার মাথায় গজমোতি।”
রূপকথার গল্পে এমন দুষ্প্রাপ্য সব রত্নের দেখা মেলে– যা সাধারণ মণিমুক্তোর মতো হলেও তাতে থাকে বিশেষ কোনো চমক। গজমোতির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এই বিশেষ মোতি পাওয়া যায় ‘গজ’, অর্থাৎ হাতির মাথায়। সে হাতি আবার যে-সে বনে থাকে না, তার বাসস্থান হচ্ছে ক্ষীরসাগর। সেই ক্ষীরসাগর, যা ধবল পাহাড়ের কাছে অবস্থিত– যাতে জলের বদলে বইতে থাকে দুধের নহর। সেখানকার হাতিও যে এমন জাদুকরী হবে, তাতে আর আশ্চর্য কী!