পৃথিবী থেকে চাঁদের অবস্থান বেশ ভালোই দূরে, তবু তাকে লক্ষ করে লোকে গল্প বোনে– রচে যায় কত না অজানা ইতিহাস। আর চাঁদের উপকথায় তো ওতপ্রোতভাবেই জড়িয়ে আছে চাঁদের বুড়ির রূপকথা। একলা সেই বুড়ি থাকেন চাঁদের গায়ে বসে, একমনে চরকায় সুতো কাটেন– কাটতেই থাকেন। মাঝে মাঝে সেই সুতো ফুরিয়ে গেলে হয়তো মনে তারও বড় দুঃখ হয়। কিন্তু চাঁদের বুড়ি কি সবসময়েই বুড়ি? কক্ষনো কি সেও ছিল বালিকা, কিংবা তরুণী? খোদ রবি ঠাকুরও সেই বুড়িকে নিয়ে, তার বয়সের হিসেব কষতে বসেছিলেন ‘শিশু ভোলানাথ’ বইয়ে–
'এক যে ছিল চাঁদের কোণায় চরকা-কাটা বুড়ি পুরাণে তার বয়স লেখে সাতশো হাজার কুড়ি।'
এই চাঁদের বুড়ির জন্মকথা না জানা গেলেও আমরা জানি তার বাড়ির ঠিকানা। এক দমকা বাতাসের পিছু পিছু গেলেই মিলবে চাঁদের বুড়ির হদিস– ঠিক যেমন পেয়েছিল ঠাকুরমার ঝুলি’র সুখু আর দুখু। তাঁতীর দুই স্ত্রীর ঘরের দুটি মেয়ে ওরা। দুজনের সঙ্গে ঘটে দুরকম ঘটনা– দুজনের ভাগ্যে থাকে দুরকম গঞ্জনা। একের কপালে পূর্ণিমা ভাসে, তো অপরের অমাবস্যা। দুঃখী মেয়ে দুখুর সুতা তৈরির সব তুলা উড়ে গেল বাতাসে। সেই দেখে দুখুর দুঃখ আরো বেড়ে গেল। তখন বাতাসেরও হলো মন খারাপ, সে দুখুকে নিয়ে গেল সেই বাড়িতে, যেখানে চাঁদের বুড়ি থাকে।
“তারপর চলিতে চলিতে দুখু বাতাসের সঙ্গে কোথায় দিয়া কোথায় দিয়া এক ধবধবে বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত! বাড়ীতে আর কেউ নাই; ফিটফাট ঘরদোর, ঝকঝক আঙিনা, কেবল দাওয়ার উপরে বসিয়া সূতা কাটিতেছে, সেই সূতায় চক্ষের পলকে পলকে জোড়ায় জোড়ায় শাড়ী হইতেছে।
বুড়ী আর কেউ না, চাঁদের মা বুড়ী! চুলগুলো যেন দুধের ফেনা, চাঁদের আলো; সেই চুল সরাইয়া চোখ তুলিয়া চাঁদের মা বুড়ী দেখে…”
চাঁদের বুড়ির সঙ্গে শুধু দুখুর নয়, সুখুরও দেখা হয়েছিল। নিজের মহৎ স্বভাবের কারণে বুড়ির আশীর্বাদে, পুকুরে ডুব দিয়ে দুখু পেয়েছিল রূপ ও গহনার উপহার, আর সুখুর কপালে জুটেছিল এক অজগর বর!
অবশ্য এসবে বুড়ির কী? সে নিজমনে চরকায় তুলো দেয়, সুতো বানায়– আর তাকে নিয়ে মানুষ বছরের পর বছর ধরে ছড়া কাটে, ছন্দ তোলে।
“ও বুড়ি, ও বুড়ি সুতা কাট– কাইল বিয়ানে অলির হাট। অলির হাট যাবি নি? চরকা বান্ধা দিবি নি?”