Abdul Ali Garuli and Nibaron Shundori

Abdul Ali Garuli and Nibaron Shundori

Bengali Title

আব্দুল আলী গারুলী ও নিবারন সুন্দরী

Category
Puthi Literature

English

In the year 1315, amidst the bustling town of Jhalokati, there dwelled a young lad by the name of Abdul Ali. At just twenty years old, he possessed a striking handsomeness that caught the eye of many. Abdul had a penchant for adventure, and so he often found himself traversing the countryside on horseback, exploring every nook and cranny.

One fateful day, his journey led him to the town of Barisal, where he stumbled upon a troupe of snake charmers. Among them stood a young maiden named Nibaran, whose beauty rivaled that of the morning sun. Instantly captivated by her charm, Ali found himself falling head over heels in love.

However, the daunting task of confessing his affection to Nibaran's father weighed heavily on Ali's mind. What if the old man refused to give his daughter's hand to a stranger? Such thoughts plagued Ali's every waking moment, until he devised a cunning plan.

Under the cloak of darkness, Ali liberated all the serpents from their cage, concealing them away from the snake charmers' sight. When dawn broke and the charmers set out to perform in the village, they were mortified to discover their empty cage. Suspicion fell upon the foreigner in their midst – who else would dare such audacity?

As tensions rose and accusations flew, Ali emerged from the shadows, ready to face the consequences of his actions. Yet, to his surprise, the eldest of the snake charmers intervened, urging restraint. "Let us not harm the foreigner," he counselled, "for he is our guest, and it is not our way to raise hands against our guests."

With this declaration, the mood softened, and the charmers turned their attention to Ali. They welcomed him with open arms, tending to his needs and seeking answers regarding the whereabouts of their snakes.

Ali spoke, "I am a foreigner who has come here, yet none of you have bothered to inquire about me. Therefore, I am upset with you and have hidden all your snakes." The snake charmers, in response, pleaded, "Return our snakes, and in exchange, we shall grant you whatever you desire." Seizing the moment, Ali expressed his wishes before everyone.

The snake charmers readily agreed to Ali's proposal. Amidst great festivities, Nibaran wedded Ali. Following their marriage, Ali and Nibaran went to their own home. Ali's mother welcomed her daughter-in-law with immense joy, and the following months passed by happily.

However, one fateful night, Nibaran had a haunting dream about a colossal python. The serpent demanded a goat be sacrificed for the well-being of her husband. Providing an address, the snake warned that if the sacrifice wasn't made, danger would loom. Trembling with fear after the vision, Nibaran recounted her nightmare to Ali. Yet, Ali, unperturbed, became enraged and resolved to eliminate the snake. Hearing Ali's decision, his mother began to lament and urged him not to proceed. However, Ali disregarded his mother's pleas.

On the 8th of Magh, 1315, Ali assembled seventeen boats and meticulously prepared for his expedition to confront the python. Docking the boats near the serpent's dwelling, Ali left everyone aboard and ventured alone toward the snake's mound. He arrived at the mound and commenced playing the flute. Enchanted by the melody, the snake emerged from its dwelling, hissing menacingly.

In the blink of an eye, the one-foot-long snake swelled into a 45-foot beast, wrapping its body around Ali. Feeling trapped, Ali desperately called out for his mother and wife. Fortunately, a passerby named Tamizuddin noticed blood on the ground and glanced up at the bamboo trees, where he spotted the massive snake constricting a man. Swiftly, he rushed to a nearby boat and shouted, "One of your men has been ensnared by a snake!" Ali's mother, upon hearing the news, began to wail in distress.

Meanwhile, Nibaran was fast asleep. Despite Abdul Ali's mother's lamentations not stirring her, Nibaran's own mother grew furious and began kicking her. After three forceful kicks, Nibaran finally awakened and offered two goats as sacrifice before the serpent. However, the snake remained unappeased. Fearing for Ali's life, Nibaran hurled an enchanted shell at the snake's head. Upon impact, the snake released Ali and reverted to its original size.

Carrying Ali's lifeless body, Nibaran rushed to the Amtali police station. The constable, upon inquiry, attributed Ali's death to a snakebite. However, driven by greed, the constable twisted his words, accusing Nibaran of murdering her husband and blaming the snake. Faced with no other choice, Nibaran bribed the constable with ten rupees, prompting him to list Ali's demise as a result of a snake attack.

After settling matters at the police station, Nibaran brought Ali's body home, where mourners gathered around him. Undeterred, Nibaran began reciting mantras using the shell left by her father. As her chants grew in intensity, the snake, stirred from its unconscious state, became increasingly agitated. Unable to withstand the fervor of the incantations, the serpent sucked the poison from Ali's body and perished.

To everyone's amazement, Ali gradually regained consciousness. In gratitude, blessings poured forth for Nibaran. As her husband recovered, Nibaran ceased her recitations and humbly embraced him. Ali's mother rejoiced with overwhelming happiness. Moved by the ordeal, Ali vowed never to act impulsively again without full understanding.

From that day forth, Ali lived harmoniously with his wife Nibaran and his mother, embracing a life of happiness and understanding.

বাংলা

সন ১৩১৫। সে সময় ঝালকাঠিতে আব্দুল আলী নামের এক যুবক বাস করতো। ২০ বছর বয়সী এই যুবক অত্যন্ত সুদর্শন ছিল। শখের বশে একটা ঘোড়া কিনে তাতে চেপে সে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়াতো সে। এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একদিন গিয়ে পৌঁছালো বরিশালে। সেখানে গিয়ে আলীর দেখা হয় এক সাপুড়ে দলের সাথে। দলের প্রধানের নাম ছিলো ঘাড়ওয়াল। সেই ঘারওয়ালের ঘরে ছিল একটা পরমা সুন্দরী মেয়ে, নাম নিবারণ। নিবারনকে দেখে আলী তার প্রেমে পড়ে যায়।

“ঘাড়ওয়ালের এক মেয়ে ছিল, বয়স পনর ষোল আর্শি চেয়ে চুল ঝাড়ে চিরুণী লাগাই।। যেয়ছা মেয়ের মুখের ছটা, নারাঙ্গি হৃদের গোটা, হুর পরী মোহ যায় থাকুক গোসাই।

কিন্তু সাপুড়েকে কীভাবে জানাবে তার ভালোবাসার কথা? যদি ভিনদেশী যুবকের হাতে মেয়ে তুলে দিতে না চায়? এ নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায় আলী। অনেকক্ষণ ভেবেচিন্তে সে এক ফন্দি বের করে। সাপুড়ের সমস্ত সাপ খাঁচা থেকে বের করে এনে লুকিয়ে নিজের কাছে রাখে। সাপুড়ে অবশ্য ঘুণাক্ষরেও তা জানতে পারে না। পরদিন সাপের খাঁচা নিয়ে বেরিয়ে যায় গ্রামে খেলা দেখাতে। কিন্তু খাঁচায় কোনো সাপ না পেয়ে সে খুব লজ্জায় পড়ে যায়। বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়ি এসে সাপুড়ের দল বৈঠকে বসে যে এমন কাজ কে করলো তাদের সঙ্গে! তখন এক সাপুড়ে বলে ওঠে, সেই ভিনদেশী মানুষটা করেছে হয়তো। অন্য কারো তো এমন করার কথা নয়। এমন সব কথার মধ্যখানেই আলী সেখানে গিয়ে পৌঁছায়।

আলীকে দেখেই সাপুড়েরা তাকে মারতে উদ্যত হয়। কিন্তু বিজ্ঞ একজন সাপুড়ে বলে- “ভিনদেশী আলীকে মেরো না। এর দ্বারা যদি আমাদের কোনো ক্ষতিও হয় তবুও এর গায়ে হাত ওঠানো আমাদের উচিত হবে না। কারণ এ আমাদের মেহমান”। একথা শুনে সব সাপুড়েরা আলীর কাছে যায় কথা বলতে। আলীর কাছে গিয়ে তারা আলীর খুব আদর যত্ন করে। কেউ তাকে পিঁড়িতে বসায় তো কেউ পা ধুইয়ে দেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে তাদের সাপের ব্যাপারে।

আলী তখন বলে- “আমি ভিনদেশী মানুষ এসেছি তোমাদের এখানে, কিন্তু তোমরা কেউ আমার খোঁজ-খবর নাওনি। তাইতো তোমাদের উপর রাগ করে তোমাদের সব সাপ লুকিয়ে রেখেছি”। তখন সাপুড়েরা বলে- “আমাদের সাপগুলো আমাদের ফিরিয়ে দাও, এর বিনিময়ে তুমি যা চাইবে তাই দেওয়া হবে”। সুযোগ বুঝে আলী সবার সামনে নিজের ইচ্ছার কথা বলে,

“তবে শুনহ খবর, নিবারণের সঙ্গে যদি দেও সয়ম্বর– কুণ্ডলী হইতে সর্প করিব খালাস।”

সাপুড়েরা এ প্রস্তাবে খুব সহজেই রাজি হয়ে যায়। খুব ধুমধাম করে আলীর সঙ্গে নিবারণের বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের কয়েক দিন পর আলী স্ত্রী নিবারণকে নিয়ে তার নিজের বাড়িতে যায়। আলীর মা পুত্রবধুকে দেখে খুব খুশি হয়। এভাবেই হাসিখুশির মধ্যে কাটে কয়েক মাস।

কিন্তু এক রাতে নিবারণ স্বপ্নে বিশাল এক অজগর সাপকে দেখে। সাপটা নিবারণের স্বামীর কল্যাণের জন্য পাঠাবলি চায়। নিজের ঠিকানা জানিয়ে সাপটি বলে, তাকে ধরতে চাইলে অবশ্যই আবদুল আলীকে একটি পাঁঠা বলি দিতে হবে। অন্যথা বিপদ! স্বপ্ন দেখে ভয়ে কেঁপে ওঠে নিবারণ। কাঁপতে কাঁপতে আলীকে বলে তার ভয়ানক দুঃস্বপ্নের কথা। আলী অবশ্য খুব একটা পাত্তা দেয় না, বরং রেগেমেগে সেই সাপটাকে মেরে ফেলার বুদ্ধি করে। আলীর এমন সিদ্ধান্ত শুনে তার মা বিলাপ শুরু করে এবং আলীকে যেতে নিষেধ করে। কিন্তু আলী মায়ের কথাও উপেক্ষা করে।

দিনটা ছিল ১৩১৫ সালের ৮ই মাঘ। একে একে ১৭টা নৌকা জড়ো করলো আলী। এই বিশাল প্রস্তুতি নিয়েছ সেই অজগর অভিযানের জন্য। অজগরের বাসস্থানের কাছে গিয়ে নৌকা ভিড়িয়ে দেয় আলী, এরপর সবাইকে নৌকায় রেখে একা এগিয়ে যায় সাপের ঢিবির দিকে। ঢিবির কাছে গিয়ে শুরু করে বীণ বাজাতে। সেই বীণের শব্দে সাঁপটি ফোঁসফোঁস করতে করতে ঢিবি থেকে বেরিয়ে আসে।

“ছত্রিশ রাগিনী আবদুল বাঁশিতে ফুকোয় শুনিয়া সে বাশির সুর, সর্পে অঙ্গরে ফুলায়।”

সোয়া হাত সাপটি চোখের পলকে ফুলেফেঁপে পঁয়তাল্লিশ হাত হয়ে আলীকে আষ্টেপৃষ্টে পেঁচিয়ে ধরে। আলী তখন উপায়ান্তর না দেখে মা আর বউকে ডাকতে থাকে। সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিলো তমিজউদদীন। সে মাটিতে রক্ত দেখে উপরে বাঁশঝাড়ের দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে বিশাল এক সাপ একটা মানুষকে পেঁচিয়ে আছে। দূরে সে নৌকা বাঁধা দেখে নৌকার কাছে গিয়ে চিৎকার করে বলে- “তোমাদের লোককে সাপে ধরেছে”। একথা আলীর মা শুনতে পেয়ে বিলাপ করতে থাকে।

“আহারে পাপিষ্ঠ সর্প দুষ্ট দুরাচার বধূসঙ্গে দর্প করি হইলাম সংহার। নিবারণের সঙ্গে কত করিলাম জেদ মরণকালে না শুনিলাম মায়ের নিষেধ!”

নিবারণ তখন ঘুমাচ্ছিলো। আবদুল আলীর মায়ের বিলাপেও তার ঘুম ভাঙে না, তখন শ্বাশুড়ি তাকে রাগের চোটে লাথি মারতে থাকে। তিন লাথির পর নিবারণ জেগে ওঠে এবং স্বামীকে বাঁচানোর জন্য জোড়াপাঁঠা নিয়ে গিয়ে বলি দেয় সেই সাপের সামনে তবুও সাপকে শান্ত করতে পারে না। উপায় না পেয়ে নিবারণ মন্ত্রপড়া কড়ি সাপের মাথায় নিক্ষেপ করে। সেই কড়ির মন্ত্রের আঘাতে সাপটি আলীকে ছেড়ে দেয় এবং আগের সোয়া হাত আকারে ফিরে যায়।

“নড়িতে চড়িতে সর্পের শক্তি না রহিল ষোল পেচি লেজ ক্রমে খসাইতে লাগিলো আপন লেজের পেচ খসাইয়া লয় পাচল্লিশ হাত সর্প ছিল, সোয়া হাত হয়।”

মৃত আলীকে কোলে নিয়ে নিবারণ আমতলী থানায় যায়। থানার দারোগা আলীর মৃত্যুর কারণ জিজ্ঞেস করলে নিবারণ বলে সাপে কেটে আলী মারা গেছে। কিন্তু দারোগা ঘুষ খাবার লোভে সে কথাতেও ভুল ধরা শুরু করে– “নিজেই স্বামীকে মেরে এখন সাপের দোষ দিচ্ছ?” নিবারণ তখন উপায় না পেয়ে দারোগার হাতে দশ টাকা ঘুষ দেয়। তখন দারোগা শান্ত হয়ে আলীর নাম সাপে কাটা মরার তালিকায় দিয়ে দেয়।

থানার ঝুটঝক্কি মিটিয়ে নিবারণ বাড়িতে ফিরে আসে আলীকে। মৃত আলীকে ঘিরে সবাই বিলাপ করতে থাকে। কিন্তু হাল ছাড়ে না নিবারণ। সে তার বাবার রেখে যাওয়া কড়ি নিয়ে মন্ত্র পড়া শুরু করে। মন্ত্রের প্রকোপে কড়ি জাগ্রত হয়ে সেই অজগর সাপের মাথায় বাড়ি দিতে থাকে। সেই আঘাতে সাপ অস্থির হয়ে মাটিতে পড়ে তড়পাতে থাকে। তখন নিবারণ মন্ত্রের তেজ আরো বাড়ায়। সাপ তখন সহ্য করতে না পেরে আলীর শরীরের বিষ তুলে নেয় নিজের শরীরে এবং মারা যায়।

আস্তে আস্তে আলীর জ্ঞান ফেরে। এমন ঘটনা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় সবাই। নিবারণের নাম ধরে সবাই ধন্য ধন্য করতে থাকে। স্বামী সুস্থ হলে নিবারণ মন্ত্র পড়া বন্ধ করে স্বামীর পায়ে প্রণাম করে জড়িয়ে ধরে স্বামীকে। আলীর মা ও যেন তার হারানো সাত রাজার ধন ফিরে পায়। আলী তখন প্রতিজ্ঞা করে যে, না বুঝে গায়ের জোরে সে আর কোনোদিন কিছু করবে না।

তারপর আলী স্ত্রী নিবারণ ও তার মাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে দিন কাটাতে থাকে।