Jiyat Kunda - The well of life

Jiyat Kunda - The well of life

Plot Summary

English

In the year 1636, Shah Ali Asghar, the ruler of the Balkh region in Afghanistan, wished to pass on all the responsibilities of the kingdom to his son. However, his son had no interest in the throne. Instead, he aspired to become a missionary.

The kingdom-averse prince was named Shah Sultan Balkhi. He was a disciple of the pious Sheikh Toufic from Damascus. Following the Sheikh’s orders, he left the throne and dedicated himself to missionary work. One day, the Sheikh instructed him, “Now go to Bengal and focus on spreading the faith.”

Balkhi arrived in Sandwip by a peculiar fish-shaped boat, marking the beginning of his campaign in the region. Because of his arrival in such an unusual vessel, he was commonly known as Mahiswar (the Fish Rider). When he came to Bengal, he was not dressed as a king or sultan but in the simple garb of a fakir. Despite being a missionary, his royal blood did not go unnoticed. Whenever Hindu rulers resisted his mission, he would declare war and ultimately conquer their territories.

One such ruler was King Parashuram of Mahasthangarh. Initially, he did not prevent Mahiswar from staying in the region. He even granted him freedom to move within his own capital, Pundravardhan. However, King Parashuram was strongly opposed to Mahiswar’s missionary efforts.

Trouble began when one of Parashuram's council members converted to Islam. This event led to a fierce conflict between Mahiswar and King Parashuram. The dispute escalated into a significant and intense battle.

Despite killing countless soldiers with his sword, Mahiswar was unable to secure victory. This troubled Shah Sultan Balkhi greatly. Upon investigation, it was discovered that next to King Parashuram’s palace was a remarkable well. This well had the extraordinary power to revive the dead; soldiers who fell in battle were restored to life after touching the well's water. It was reminiscent of the magical rejuvenation stick from fairy tales.

Mahiswar had his own supernatural powers, so he sent a messenger with a piece of cow meat. When the meat was thrown into the well, it contaminated the water, causing it to lose its miraculous ability to revive the dead. The immortal well lost its magic of immortality. Consequently, the fallen soldiers could no longer be revived. King Parashuram was defeated, and Hindu rule in Mahasthangarh came to an end.

The legend says that King Parashuram was famously known as ‘Narasimha Parashuram’. Both parts of this name, ‘Narasimha’ and ‘Parashuram,’ are indeed avatars of Vishnu. This naturally raises the question: Could the Parashuram of the Mahabharata and Ramayana be the same as King Parashuram?

According to a story, the Earth once took the form of a cow and went to Vishnu to express its suffering and distress. Vishnu assured the Earth that he would take the form of Parashuram to alleviate its troubles and hardships. It is possible that, as a fulfillment of this vow, Parashuram made the Earth free of Kshatriyas twenty-one times. Since the Kshatriyas, through their wars, often caused widespread unrest, conflict, and violence, Parashuram viewed himself as the Earth's protector each time he eliminated an unjust Kshatriya.

As a result of his penance, Parashuram obtained an axe, with which he vowed to eliminate all heretical Kshatriyas. He targeted those Kshatriyas who abused their power, deviated from the path of righteousness, or angered him in some way. His axe became a symbol of his resolve to punish and remove those who misuse their authority and acted against the principles of dharma.

Indeed, the legend of Parashuram has not been forgotten, nor has the remarkable power of his rejuvenation well. His legend is intertwined with the history and heritage of Mahasthangarh. According to whispers of legend, during the twelfth century, Parashuram ruled over Mahasthangarh in Bengal. The ruins of his palace can still be found nearby, and right beside the palace lies the famous Jiyon Kund or Jiyon Kupa, the well whose water was said to bring the dead back to life.

After defeating Parashuram in battle, Mahiswar captured the fortress of Pundranagar. Parashuram’s daughter was Shila Devi, a woman renowned for her exceptional beauty and virtues, highly praised by all around. Mahiswar intended to take her along with other captives. Shila Devi, however, preferred death over the loss of her honor at the hands of the invaders. Thus, she chose a dignified death over a life of dishonor.

When the sounds of battle ceased and the captives were to be taken away, Shila Devi made a final prayer to the Creator and slowly descended into the waters of the Karatoya River. There, she submerged herself, choosing self-sacrifice over dishonor. The spot where Shila Devi gave her life is still known today as Shila Devi's Ghat. In some accounts, Shila Devi is also referred to as Parashuram’s sister rather than his daughter.

The sacred Shila Devi's Ghat is revered by many Hindus as a place of great spiritual merit. Every year, on the 10th day of the Shukla Paksha (waxing phase) of the month of Jyestha, a holy bath is performed at the ghat. Devotees come to the waters of the Karatoya River to cleanse themselves of sins and seek purification. In addition, every twelve years, a special sacred bathing ritual known as Poush Narayani Yoga is held at the ghat. It is believed that taking a bath at the Karatoya Ghat and observing a three-night fast can bestow merit equivalent to performing the ancient Ashwamedha Yagna.

If there is uncertainty about the historical existence of Parashuram, then the existence of Shila Devi is also subject to doubt. According to an alternative origin story, the ghat may have been used in ancient times for unloading and storing numerous stones brought by river transport. Over time, the name evolved to "Shila," meaning "stone" or "rocky place," which could have eventually transformed into the name Shila Devi and Shila Devi’s Ghat.

The area around Shila Devi's Ghat, and throughout Mahasthangarh, is rich with legends and a blend of historical and mythical elements, leaving behind numerous archaeological traces. One such site connected to Bengali folklore is ‘Lakshindar’s Mela,’ associated with the famous characters Behula and Lakshindar. On the west bank of the Karatoya River, there is also the Skandhamandir, or Skandher Dhap, tied to other legendary narratives.

বাংলা

সময়টা তখন ১৬৩৬ সাল। আফগানিস্তানের বলখ অঞ্চলের শাসক শাহ আলি আসগর নিজের ছেলেকে রাজ্যের সকল দায়িত্ব তুলে দিতে চাইলেন। কিন্তু ছেলের তো সিংহাসনে মন নেই। তিনি চান ধর্ম প্রচারক হতে।

রাজ্যবিমুখ এই যুবরাজের নাম ছিল শাহ সুলতান বলখী। দামাস্কাস নগরের পীর শেখ তৌফিকের শিষ্য ছিলেন তিনি। পীরের আদেশেই তিনি সিংহাসন ছেড়ে দিয়ে ধর্ম প্রচারের কাজে যোগ দেন। একদিন পীর তাকে বললেন, “এবার তুমি বাংলায় গিয়ে ধর্ম প্রচারে মন দাও।” বলখি তখন এক মাছ আকৃতির নৌকায় করে পৌঁছে গেলেন সন্দ্বীপে, সেই থেকেই এ অঞ্চলে বলখির অভিযান শুরু। মাছের আকৃতির অদ্ভুত নৌকায় করে এসেছিলেন, তাই তাকে মাহীসওয়ার (মৎস্য আরোহী) নামেই বেশি ডাকা হয়। বাংলায় আসার সময় তার পরনে কোনো রাজা বা সুলতানের পোশাক ছিল না, ছিল এক ফকিরের আলখেল্লা। কিন্তু ধর্ম প্রচারক হলেও তার রক্তে বইছে রাজরক্ত, তাইতো যে হিন্দু রাজারা তার প্রচার মেনে নিতো না, তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করতেন। এবং শেষমেশ তাদের রাজ্য দখল করে নিতেন।

এমনই একজন ছিলেন মহাস্থানের রাজা পরশুরাম। প্রথমে অবশ্য তিনি মাহীসওয়ারকে এ অঞ্চলে থাকতে বাধা দেননি। নিজের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধনেও তার চলাফেরার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। কিন্তু মাহীসওয়ারের ধর্ম প্রচার নিয়ে তার ঘোর আপত্তি ছিল। ঝামেলা বাঁধে, যখন পরশুরামের এক সভাসদ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ফেলেন। এরপর যা হওয়ার, তা-ই হলো। মাহীসওয়ারের সাথে বেঁধে গেল রাজা পরশুরামের এক তুমুল যুদ্ধ। তলোয়ারের আঘাতে পরশুরামের অগণিত সৈন্যকে হত্যা করার পরও কোনোভাবেই জিততে পারছিলেন না মাহীসওয়ার। কিন্তু কেন? চিন্তায় পড়ে গেলেন বলখের শাহ সুলতান। খবর নিয়ে জানা গেল, পরশুরামের প্রাসাদের পাশে আছে আশ্চর্য এক কুয়া। সে কুয়ায় স্নান করে মৃত মানুষও ফের জীবিত হয়ে ওঠে। পরশুরামের দলের যে সৈন্যই মারা যাচ্ছিল, সেই জীয়ন কূপের ছোঁয়া পেয়ে আবার যুদ্ধে ফিরে যাচ্ছিল। এ যেন রূপকথার সেই জীয়ন কাঠিরই নামান্তর।

অলৌকিক শক্তি ছিল মাহীসওয়ারেরও, তাইতো তিনি এক চিলকে দূত করে পাঠালেন মুখে এক টুকরো গো-মাংস দিয়ে। সেই গো-মাংস কূপের জলে ফেলতেই জল অপবিত্র হয়ে গেল, হারিয়ে গেল তার মরা মানুষকে জিইয়ে তোলার ক্ষমতাও। অমর কূপ হারালো তার অমরত্বের জাদু। মৃত সৈন্যদের আর বাঁচিয়ে তোলা গেল না। হেরে গেলেন রাজা পরশুরাম। শেষ হলো মহাস্থানে হিন্দুদের রাজত্ব।

কিংবদন্তি বলে, রাজা পরশুরাম ‘নরসিংহ পরশুরাম’ নামে বিখ্যাত ছিলেন। এই নামের দুটি অংশ, অর্থাৎ ‘নরসিংহ’ ও ‘পরশুরাম’ উভয়েই কিন্তু বিষ্ণুর অবতার। এ থেকে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, তবে কি মহাভারত-রামায়ণের পরশুরাম আর রাজা পরশুরাম একই? আদৌ কি রাজা পরশুরাম ছিলেন?

একটি গল্প অনুযায়ী, খোদ পৃথিবী একবার একটি গাভীর রূপ ধারণ করে এবং বিষ্ণুর কাছে নিজের দুঃখ-দুর্দশার কথা জানায়। তখন বিষ্ণু পৃথিবীকে আশ্বাস দেন, তিনি পরশুরাম হয়ে জন্মগ্রহণ করে এই দুঃখ-দুর্দশা দূর করবেন। হতে পারে, এই প্রতিজ্ঞারই ফল হিসেবে পরশুরাম পৃথিবীকে একুশবার ক্ষত্রিয়শূন্য করেন। যেহেতু ক্ষত্রিয়দের যুদ্ধের ফলেই পৃথিবীময় বহু অশান্তি, হানাহানি, হত্যা ঘটতো, তাই প্রতিবার কোনো অন্যায়কারী ক্ষত্রিয়কে হত্যার সময় পরশুরাম নিজেকে পৃথিবীর রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখতেন।

তপস্যার ফলে তিনি একটি কুঠার লাভ করেন, যার আঘাতে একে একে সব ধর্মবিরোধী ক্ষত্রিয়কে হত্যার প্রতিজ্ঞা করেন পরশুরাম। যে ক্ষত্রিয়রা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করতো, ধর্মের পথে চলতো না এবং কোনো না কোনোভাবে পরশুরামকে রাগিয়ে দিত– তাদের উপরই নেমে আসতো পরশুরামের কঠোর কুঠার।

তবে কিংবদন্তি পরশুরামকে ভোলেনি, ভোলেনি তার জীয়ন কূপের আশ্চর্য জাদুশক্তির কথাও। তার কিংবদন্তি জড়িয়ে আছে মহাস্থানগড়ের ইতিহাস, ঐতিহ্যের সাথে। কিংবদন্তির ফিসফিসানিতে শোনা যায়, দ্বাদশ শতকের দিকে বাংলার মহাস্থানগড়ে রাজত্ব করতেন তিনি, এখনো খুঁজলে মিলে যায় তার প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। আর সেই প্রাসাদের ঠিক পাশেই রয়েছে সেই জীয়নকুণ্ড বা জীয়নকূপ, যে কুয়োর জল মৃত মানুষকে প্রাণ ফিরিয়ে দিত।

পরশুরামের সাথে যুদ্ধে জিতে যাওয়ার পর মাহীসওয়ার পুন্ড্রনগর দুর্গ দখল করে নেন। পরশুরামের মেয়ে ছিলেন শীলা দেবী। রূপে-গুণে অনন্য এই নারীর প্রশংসায় আশেপাশের সকলেই মুখর ছিল। এমন বিদুষী নারীকেও অন্য বন্দিদের সঙ্গে তুলে নিয়ে যেতে চান মাহীসওয়ার। শীলাদেবীর তখন মনে হয়, যবনের হাতে পড়ে সম্মান হারানোর চাইতে প্রাণ দেয়াও ভালো। তাই তিনি অসম্মানের জীবন থেকে বরং বেছে নেন সম্মানের মৃত্যু।

যুদ্ধের বাজনা যখন থেমে গেল, বন্দীদের নিয়ে যাওয়া হবে, তখন স্রষ্টার কাছে শেষ প্রার্থনা করে শীলা দেবী ধীরে ধীরে নেমে যান করতোয়ার জলে। সেখানেই ডুব দিয়ে আত্মাহুতি দেন তিনি। শীলা দেবী যে স্থানটিতে নিজেকে বিসর্জন করেন, সেটিই এখনো পর্যন্ত শীলা দেবীর ঘাট নামে পরিচিত। মতান্তরে অনেক সময় শীলা দেবীকে পরশুরামের মেয়ে নয়, বরং বোন হিসেবে জানা যায়।

পুণ্যবতী শীলা দেবীর ঘাটকেও পুণ্যলাভের স্থান হিসেবে দেখেন বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাইতো প্রতি বছর জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা দশমী তিথিতে এ ঘাটে পুণ্যস্নান হয়। পাপতাপ বিসর্জন দিতে লোকে আসে করতোয়ার জলে। এছাড়া প্রতি বারো বছর পরপর পৌষ নারায়ণী যোগেও বিশেষ পুণ্যস্নান হয় এখানে। কথিত আছে, করতোয়ার এ ঘাটে স্নান ও তিন রাত উপবাস করলে প্রাচীনকালের অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পুণ্য হয়।

কিন্তু ইতিহাসে পরশুরামের থাকা না থাকা নিয়েই যদি রহস্য থাকে, তবে তো শীলা দেবীর অস্তিত্বও সংকটাপন্ন। তাই মতান্তরে এ ঘাটের আরেকটি উৎপত্তিকথাও জানা যায়। অনেকে বলেন, স্থানটি একসময় নৌপথে আমদানি করে আনা বহু পাথর খালাস ও স্তূপীকৃত করে রাখার জন্য ব্যবহার করা হতো। আর সময়ের সাথে বদলে গিয়ে এর নাম হয় শিলা, অর্থাৎ পাথুরে দ্বীপ, যার পরিবর্তিত রূপই সম্ভবত শীলা দেবী এবং শীলা দেবীর ঘাট।

শীলা দেবীর ঘাটের আশেপাশে, সমগ্র মহাস্থান জুড়ে রয়েছে এমন বহু কিংবদন্তি, ইতিহাস-কল্পনার মিশেলে তৈরি বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ছাপ। বাংলা লোকগাথার অন্যতম দুই চরিত্র বেহুলা-লখিন্দরের সঙ্গে জড়িত ‘লক্ষীন্দরের মেধ’ নামে একটি স্থানও আছে এখানে। করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে আরো পাওয়া যায় স্কন্ধমন্দির বা স্কন্ধের ধাপের কথা, যার সাথে জুড়ে আছে কিংবদন্তির অন্য সব গল্পকথা।