Merchant Amir and Bhelua

Merchant Amir and Bhelua

Bengali Title

আমির সদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী

Category
Puthi Literature

তেলৈন্না নগরের রাজা মনোহর আর ময়না সুন্দরীর কোল আলো করে এলেন এক অপূর্ব কন্যা— ভেলুয়া সুন্দরী। তার রূপ? যেন ইন্দ্রলোকের অপরূপ অপ্সরা, যার চেহারায় মিশে আছে স্বর্গীয় জ্যোৎস্নার মায়া। তার চোখ? যেন পদ্ম ফুলের মাঝে কালো ভ্রমর— গভীর, রহস্যময়। তার হাসি? বিজলি রেখার মতো ঝলকে, আর দাঁত যেন মুক্তো ছড়ানো। বারো বসন্ত পেরিয়ে সে যখন মন্দিরঘরে একা একা থাকে,তার সৌন্দর্য ভাসে যেন ধূপছায়া দিঘির জলে।

শামলা বন্দরে, এক দূরের দেশে, বড় হয়ে উঠছে আরেক তরুণ— আমির সদাগর, মানিক সদাগর আর সোনাই সুন্দরীর সন্তান। সে চৌদ্দ বছরের যুবক, রূপে যেন মধ্যাহ্নে পুর্নিমার চাঁদ। একদিন তার মনে হলো, তেলৈন্না নগরে যেতে হবে, শিকারের নেশায়। সে মাঝিকে আদেশ দিল— চৌদ্দ ডিঙ্গা সাজাও আমার যাত্রার জন্য।

প্রত্যেক ডিঙ্গা সাজানো হলো যত্নে, কখনো মশলা আর চাল, কখনো মিষ্টির পসরা, আর কোথাও কোরআনের পবিত্র আয়াত। একটি ডিঙ্গার নাম হলো হংসমালা, আরেকটি কাঞ্চনমালা, আর সাথে সৈন্যদের সারি— শক্তি ও সাহসের প্রতীক। তেলৈন্নার পথে আমিরের ডিঙ্গা ভাসে, সেই যাত্রার ইঙ্গিত নিয়ে যার স্রোত বয়ে চলে দু’জনার নিয়তির দিকে।

চৌদ্দ দিনের পথ যেন তিন দিনেই মিলিয়ে গেল। তেলৈন্না নগর, যার আকাশে ভাসে ৯ লক্ষ কবুতরের রূপকথা। আমির শিকারি মন নিয়ে তীরের ফলা ছুঁড়ে দিলো; গোলাপের পাঁপড়ির মতো ঝরল এক সোনার কবুতর। কিন্তু সেই সোনার কবুতরটি ছিল ভেলুয়া সুন্দরীর অতি প্রিয়। পাখির শোকে ভেলুয়া বিলাপ করতে লাগল৷ সেই কান্না শুনে ছুটে এলো ভেলুয়ার সাত ভাই। ঘটনা জানতে পেরে তারা আমিরের কাছে গেল৷ কিন্তু আমিরের মনে কোন অনুতাপ নেই৷ বরং তার মাঝি গর্ব করে বলল কবুতরের মূল্য কত। তারা সেটা শোধ করে দেবে৷ এই শুনে সাত ভাই ভীষণ ক্রোধে ফেটে পড়লো। তারা সিদ্ধান্ত নিল আমিরকে সাগরে ডুবিয়ে মারবে৷ শুরু হয়ে গেল সাত ভাই এর সাথে আমির সদাগরের তুমুল যুদ্ধ।

কামান গোলা বারুদ সব নিয়ে দুই পক্ষ ঝাপিয়ে পড়লো। লাখ লাখ মানুষ মারা গেল সেই যুদ্ধে৷ সাত দিন পর যুদ্ধে পরাজিত হলো আমির৷ সাত ভাই আমিরকে বন্দী করে নিয়ে এলো। অনেক প্রহার করার পর তার বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে আটকে রাখল।একদিন ভেলুয়ার মা আমিরের কান্না শুনে তার কাছে গিয়ে কথা বলতে বলতে জানতে পারলো তার বাবা মা আর নগরের নাম৷ একি এতো তার বোনের ননদের ছেলে যার সাথে তার মেয়ের বিবাহ দিবে হলে সে কথা দিয়েছিল। সে তার সাত ছেলেকে বলল আমিরকে মুক্ত করতে৷ তারপর তাকে কোট, ধুতি, তাজ আর চীনা জুতায় সজ্জিত করল৷

এবার শুভ দিন দেখে আমির আর ভেলুয়ার বিবাহ সম্পন্ন হল। দুই জনের রূপ দেখে মনে হল যেন চন্দ্র আর সূর্যের মিলন হল। নতুন বধু নিয়ে আমির নিজের নগর শামলা বন্দরে ফিরে আসে৷ মা বাবার কাছে কান্নাকাটি করে সে ভেলুয়াকে নিয়ে ঘরে প্রেমময় দিন কাটাতে থাকে৷ কিন্তু আল্লাহ তার কুদিন ফিরিয়ে দেয়৷

আমিরের এক অবিবাহিত বোন ছিল নাম বিবলা সুন্দরী৷ সে আমির আর ভেলুয়ার সুখী দাম্পত্য জীবন সহ্য করতে পারে না৷ সে বার বার করে আমিরকে খোটা দিতে থাকে এই বলে যে সে কেন বানিজ্য করা বাদ দিয়ে শুধু বধু নিয়ে ঘরে বসে আছে। অবশেষে আমির মা-ভগ্নিকে বলল সে বাণিজ্যতে যাবে। কিন্তু আমিরের যাবার কথা শুনে ভেলুয়া বিলাপ জুড়ে দিল।

“আমারে শুপিয়া তুমি যাবে কার হাতে শাশুড়ী ননদী ঘরে অগ্নি বরাবর জ্বালাইয়া মারিবে মোরে কাঠের আকার “

আমির তার মা ও বোনকে অনুরোধ করেছিল যেন তারা ভেলুয়া সুন্দরীকে আর কোনো কাজ করায় না। তবে যাত্রার আগে তার মনের আকাঙ্ক্ষা ছিল ভেলুয়ার হাতের রান্না খাওয়া। ভেলুয়া আন্তরিকভাবে তার জন্য অনেক কিছু রান্না করে খাওয়ায়। খাওয়ার পর আমির তামাক খেতে চাইলে ভেলুয়া আগুন আনতে অস্বীকার করে। এতে রাগে আমির হুক্কার নল দিয়ে ভেলুয়াকে আঘাত করে। ব্যথায় ভেলুয়া বেহুশ হয়ে পড়ে, আর তাকে রেখেই আমির বানিজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নৌকার মাঝি গৌরল তখন বলে, "ভেলুয়ার মনে কষ্ট দিয়েছ, সুতরাং পথ হারাবে।" রাতভর নৌকা চালানোর পর তারা দেখতে পায়, আবার সেই ঘাটেই ফিরে এসেছে। এরপর আমির বুঝতে পারে ভুল, ফিরে এসে ভেলুয়ার সাথে দেখা করে।

আমির চলে গেলে ভেলুয়ার মন ছটফট করে, আর সে আল্লাহর কাছে মানত করে—হাজার টাকার সিন্নি দেবে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের নামে, আরেক হাজার টাকার সিন্নি গাজি কালুর নামে। গাজি কালুকে হুমকি দেওয়া হয়, "যদি আমিরকে ভেলুয়ার কাছে নিয়ে না আসো, তবে মাথা ফাটিয়ে দেব।" এক পথিক বিহঙ্গ পাখিকে দিয়ে আমিরকে ভেলুয়ার কাছে পাঠানো হয়। পাখির পিঠে চড়ে আমির ভেলুয়ার সাথে দেখা করতে আসে।

স্বামীকে দেখে ভেলুয়ার আনন্দ বাঁধ মানে না। তারা দুজন রাতভর প্রেমে মত্ত থাকে। ভোর হলে পাখি তিনবার ডাক দেয়, আর আমির তাড়াহুড়ো করে দরজা খোলা রেখেই চলে যায়। ভেলুয়া তখন গভীর ঘুমে অচেতন। ঘুম থেকে উঠে দেখে, তার প্রিয় স্বামী নেই। তার চারপাশের মানুষরা তখন তাকে অসতী বলে দোষারোপ করতে থাকে। ভেলুয়া বিলাপ করে -

কোরান দিও কেতাব দাওরে আমি খোদার ঘর ছুই এক স্বামী বিনেরে আমি আর না জানুম দুই৷

কিন্তু কেউ তার কথা বিশ্বাস করেনা৷ যে ভেলুয়া ছিল মা বাবা আর সাত ভাইয়ের আদুরের দুলালী, যার সোনার পালংকে গা থাকত, মাটিতে পা পড়ত না সেই মেয়েকে আমিরের বোন বিবলা বাড়িতে দাসী বানিয়ে রাখে। হাজার হাজার গরুর গোবর পরিষ্কার করতে বলে তাকে। সাড়ে তিম সের মরিচ বাটতে বলে। এরপর যমুনা থেকে একা একা পানি আনতে আদেশ করে।

“বানিজ্যতে গেলরে সাধু মোরে করি একেশ্বরী শ্বাশুড়ি ননদী মোর রে হৈল কালবড়ী।। “

যমুনার জলে কলসী ভরে ভেলুয়া স্নান করতে নামল। চুলের ভারে সে পানি থেকে আর উঠতে পারছিল না। ভেলুয়া তখন সাহায্যের আশায় ডাকাডাকি করতে লাগল৷ তার ডাক শুনে কয়েকটি ছেলে এসে হাজির হল। ভেলুয়া তাদেরকে অনুরোধ করল তাকে কূলে তোলার জন্য৷ বিনিময়ে তাদের বিভিন্ন রকম ফল ফলাদি উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিল৷ তারা একটা গাছের ডালের সাহায্যে তাকে তীরে তুলল।

এবার আমরা একটু ভোলা সদাগরের কাহিনী শুনব৷ সে গিয়েছিল মাছলী বন্দর। বানিজ্য শেষে সে এসে ভিড়ল আমির সাধুর ঘাটে৷ ভেলুয়াকে সেখানে দেখে তার মনে হল যেন নদীর কুলে পুর্নিমার চাঁদ উঠেছে। ভেলুয়া যেন স্বর্গের হুর৷ ভোলা তার গিয়ে পরিচয় জানতে চায়৷ ভেলুয়া তাকে বাবা মা আর স্বামীর নাম বলে। নাম শুলে ভোলা বলে যে আমির সদাগর মৃত্যু বরণ করছে। তাকে মাছলী বন্দরে সমাহিত করা হয়েছে৷ ভেলুয়া সে কথা বিশ্বাস করতে চায় না৷ সে বলে আমিরের মৃত্যু হলে তার সিঁথির সিঁদুর মলিন হয়ে যেত৷ ভোলা তখন তার মনের বাসনা ব্যক্ত করে বলে সে ভেলুয়াকে লুট করে কাট্টলি নগরে নিয়ে যাবে। ভেলুয়া আমিরের জন্য কাঁদতে লাগল৷ আমির থাকলে ভোলার ডিংগা সাগরে ডুবায় দিত। কিন্তু এসব কথায় ভোলার কিছু এসে যায় না। সে ভেলুয়াকে নিয়ে তার ডিংগা ভাসাল সাগরে।

আস্তে আস্তে সে ভেলুয়ার কাছে এসে ঠাট্টা-তামাশা করার চেষ্টা করল। ভেলুয়া তাকে সাবধান করে দিল যে তার কাছে এলে ভোলা অন্ধ হয়ে যাবে। তবুও ভোলা ভেলুয়ার কাছে আসাতে চাইল। সতী ভেলুয়ার অভিশাপে ভোলার দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেল৷ ভেলুয়ার এই জাদুকরী ক্ষমতা দেখে মাঝিরা তাকে মা মা বলে প্রনাম করতে লাগল৷ ভোলার চোখ ভাল করে দেয়ার অনুরোধ করল বার বার। তারা কথা দেয় ভোলার চোখ ফিরে পেলে সে আর ভেলুয়ার সামনে আসবে না৷ এসব শুনে সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে৷ ভেলুয়ার দোয়ায় ভোলা আবার দৃষ্টি ফিরে পায়৷

এভাবে কিছুদিন চলে যায়৷ তারপর আবার ভোলা ভেলুয়ার দিকে কুদৃষ্টি দেয়৷ ঠিক সে সময় তার নৌকা চরে আটকে গেল৷ ভোলার এই কুকীর্তি দেখে মাঝি ভীষণ বিরক্ত হল। মাঝির মনে শংকা হল ভোলার জন্য তারা সবাই না ডুবে মরে। এজন্য তারা ভেলুয়ার পা ধরে ক্ষমা চাইল৷ ভোলা আর ভেলুয়াকে বিরক্ত করবে না। ভেলুয়া এটা শুনে বলল যে সে ভোলাকে ছয় মাসের জন্য বাবা ডাকবে৷ ভেলুয়া এই কথা বলা মাত্র ১৬ নৌকা চরে থেকে ভেসে উঠল।

এবার ভেলুয়া আমির সদাগরের কাছে চিঠি লিখে তার প্রস্থানের পর যা যা ঘটনা ঘটেছে সব লিখে তাকে অনুরোধ করল ছয় মাসের মধ্যে কাট্টালী নগরে এসে ভেলুয়ার সাথে দেখা করতে। তারপর আমিরের কাছে সেই চিঠি পৌঁছে দিল ভোলা সদাগর । চিঠি পাঠ করে গৌরল মাঝিকে নিয়ে ১৪ দিনের পথ এক দিনে পাড়ি দিয়ে তার মা বাবার কাছে এসে ভেলুয়ার খবর জানতে চাইল। তারা জানায় ভেলুয়া মারা গেছে এবং তার কবরও বিবলা দেখিয়ে দেয়৷ তারা আমিরকে বলে ভেলুয়ার চরিত্র খুব খারাপ৷ আমির কবর খুড়ে দেখে সেখানে একটা কালো কুকুর। সে রাগ করে কাদতে কাদতে রাগন্যা চলে যায়৷

এদিকে চিঠি পাঠিয়ে ভেলুয়া বিরহে কাতর হয়ে যায়৷ নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয়৷ শীত,গ্রীষ্ম, বর্ষা, হেমন্ত, বসন্ত শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা৷

“বৎসর পুরিল, বন্ধু না আসিল, মোর হৈল সর্বনাশ। “

এদিকে আমির রাগিন্যাতে গমন করেছে। সেখানে সে এক সারিন্দা বানাল৷ তার একতার বলে আমির সদাগর এর কথা, আরেক তার ভেলুয়ার কথা। অন্য তার ভোলার কাহিনি বাজাতে লাগল। এভাবে আমির কট্টালী নগর পৌঁছে গেল। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সেদিনই ছিল ভেলুয়ার বিবাহের দিন। ভেলুয়ার সাত সখী নদীতে স্নান করতে গিয়ে আমিরের সারিন্দা বাজানো শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়। ছয় সখী ভেলুয়ার কাছে ফিরে গিয়ে জানায় যে তার নাম নিয়ে এক ফকির সারিন্দা বাজাচ্ছে৷ কিন্তু বড় সখী ঘাটেই রয়ে যায় ফকিরের কাছে। আমির বাতাসকে বলল সখীর কাপড় উড়িয়ে নিতে৷ এই সুযোগে সে কলসিতে আংটি ফেলে দিল৷ সেই কলসির জল দিয়ে যখন ভেলুয়া স্নান করতে গেল, সেই আংটি তার দৃষ্টি গোচর হল। সাথে সাথে সে ভোলাকে বিবাহ থামাতে বলল৷ সে বলল তার বাপের বাড়ির দেশ থেকে এক ফকির এসেছে৷ সে তার গান শুনতে চায়৷ তার ইচ্ছায় বাধা দিলে ভোলা আবার অন্ধ হয়ে যাবে৷ ভোলা ভেলুয়ার কোঠা ঘরে ফকিরকে থাকতে দেয়৷ রাতের বেলা ভেলুয়া গিয়ে আমিরের সাথে দেখা করে পালিয়ে চলে চায় দুই জন মিলে৷ কিন্তু আমির পালাতে রাজি হয় না৷ আমির ভোর বেলা উঠে মুনাফ কাজীকে জানাল যে ভোলা তার বিবাহিত স্ত্রীকে জোর করে বিয়ে করতে যাচ্ছে৷ ওয়ারন্ট গিয়ে ভোলাকে ধরে আনল। ভোলা দাবী জানাল যে এই আমির এক প্রতারক ফকির৷ সে দেশে দেশে গান গেয়ে বেড়ায়৷ আর কারো সুন্দরী বধু দেখলেই নিজের বধু বলে দাবী করে৷ ভোলা বলল আদালতে ভেলুয়াকে আনা হোক সে যাকে স্বামী মানবে তার কাছেই ফিরে যাবে৷ ভেলুয়া মুনাফ কাজির কাছে এসে জানাল যে আমির ফকিরই তার প্রাণের স্বামী৷ কিন্তু পালকির মাঝে ভেলুয়াকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। এই কথা শুনে ভোলা আমিরের সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। ভেলুয়াকে ডিংগাতে তুলে আমির যুদ্ধের ডংকা বাজায়৷

বাড়িতে ফিরে আমিরের মা বোন কিছুতেই মেনে নেবে না যে ভেলুয়া সতী৷ তারা ভেলুয়ার পরীক্ষা নিতে চায়৷ ভেলুয়া জাত তুলে আল্লাহর নিকট প্রাথর্না করল যেন সে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে৷ প্রথমে তাকে লোহার চাল দিয়ে ভাত রান্না করতে বলল। কিন্তু সেই পরীক্ষায় সে পাশ করল৷ এরপর তাকে তুলা পরীক্ষা দিতে হবে৷ অনেক অনেক তুলা জমা করে তাতে ৭০মণ ঘি দেয়া হল। তারপর তাতে ভেলুয়াকে বসিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হল। ভেলুয়া প্রচন্ড বিলাপ করতে লাগল। মৃত্যু আসন্ন ভেবে সে আমিরকে দেখতে চাইল৷ কিন্তু আগুনের হল্কা তাকে আকাশে উড়িয়ে নিল৷ এই দৃশ্য দেখে ফেলে সাত পরী৷ এদের সাথে ভেলুয়ার খুব ভালবাসা ছিল৷ তারা ভেলুয়াকে নিয়ে রোকাম শহরে চলে গেল৷

এদিকে যুদ্ধ থেকে ফিরে ভেলুয়াকে না পেয়ে আমির পাগল প্রায় হয়ে যায়৷ ঘুরতে ঘুরতে সে এক জংগলে চলে এলো। সেখানে তার এক ফকিরের সাথে দেখা হল৷ তার কান্না শুনে ফকির তাকে আশ্বস্ত করলো৷ সে জানাল রোকাম শহর থেকে আলোক রথে চড়ে সাত পরী ফকিরের কাছে আসে মাঝে মাঝে৷ ফকির তাকে একটা গায়েবি টুপি দেয়। এই টুপি পড়লে মানুষ অদৃশ্য হতে পারে৷ আমির সেই টুপি পরে রথে করে পরীদের সাথে ইন্দ্রপুরি চলে এল। ইন্দ্রপুরিতে রাজা পরীদের নাচ করতে বলল৷ সে সময় অদৃশ্য আমির মৃদংগ বাজাতে লাগল। রাজা রাগান্বিত হয়ে টুপি খুলে আমিরের দেখা পেল৷ রাজা হুংকার দিয়ে বলে তোমাকে কি দিলে বাজনা বন্ধ করবে৷ সে তখন ভেলুয়াকে চায়৷ রাজা খুব রেগে গিয়ে ভেলুয়াকে জিজ্ঞেস করে সে কেন মিথ্যা কথা বলেছে। রাজা তো জানত ভেলুয়ার বিবাহ হয়নি৷ রাগে রাজা ভেলুয়াকে পাথর বানিয়ে দেয়৷ কিন্তু আমিরের বিলাপ শুনে রাজা তাকে আশা দিয়ে বলে এক বছর পর ভেলুয়া জেগে উঠবে৷ এরপর কেটে যায় ১২ মাস৷ ভেলুয়া জেগে ওঠে৷ তিন বছর রোকাম শহরে থাকার পর ভেলুয়াকে নিয়ে সে নিজ দেশে গিয়ে সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল৷