নিমাই সন্ন্যাসী
Plot Summary
English
Nimai was quite renowned in his neighborhood. He ran a small school, or 'tol,' where he not only taught but also entertained the local boys with various stories beyond the usual lessons. His charismatic presence and engaging storytelling made his 'tol' a lively hub for learning and laughter.
At home, Nimai lived with his mother, Shachidevi, and his newly wedded wife, Vishnupriya. Before Vishnupriya, he was married to another sweet-natured girl named Lakshmipriya. Unfortunately, Lakshmipriya met a tragic end; she passed away after being bitten by a snake.
Nimai had an elder brother named Vishvarupa. Before Nimai could understand much, Vishvarupa left household life and became a monk. Since then, their mother Shachidevi has been very worried, fearing that the younger son might follow the same path! But the neighbors always praised Nimai and told her, "Don't worry, Shachi. Nimai won't become a monk." Nimai thought the same way.
He joyfully runs his school and manages his household. His nature is very lively. He is on good terms with the washerman and the grocer at the general store. Even without a single coin in his pocket, everyone comes and gives him things. Everyone loves Nimai dearly.
Once, Nimai went to Gaya Dham to perform the ritual of offering for his deceased father. After returning, he was no longer the same. He would lose consciousness frequently, and looking into his eyes, it seemed like nothing in the world interested him anymore. Even his beautiful wife Vishnupriya—if she said ten things, Nimai would only listen to one.
Mother Shachidevi noticed everything. Could it be that her fears were about to come true? She went to her friend Malini, crying, and said, “Nimai isn’t like before, my friend. Since returning from Gaya, he seems different.” Malini dismissed her concerns, saying, “What change in Nimai? He’s always smiling. People say Nimai doesn’t walk on the road—he practically flies! He’s such a spirited boy!”
But a mother’s heart senses everything. Now, Nimai’s face and eyes are filled only with Krishna’s name. The real story, however, is known to no one else. Only Nimai knows. And his guru is from Gaya—his name is Ishwar Puri. When Nimai went to Gaya, he met him there. It was there that he received the mantra, but upon returning home, he told no one.
One day, Nimai woke up and started crying incessantly, then laughing at moments. Seeing his behavior, everyone thought Nimai had gone mad. Ignoring everyone else, Nimai said to his mother, "Someone appeared to me in my dream, Mother! A dark-complexioned youth, whose black hue seemed to illuminate the entire world."
"He looked at me in such a way, Mother, that it felt like his eyes were not just eyes—they were two lotus flowers blooming in a pond! I must go to that youth, Mother. Don't stop me anymore."
A few days passed like this. Then one day, Nimai left home. Where he went after leaving, only a few of his close companions knew, but no one else did.
The people of the neighborhood murmured, "Nimai Pandit of Nabadwip has taken sannyas!" Shachi Maa sat with her head in her hands. No one saw when the kajal on Vishnupriya’s eyes was smeared by her tears. Nimai did return once, but only to bid farewell to his mother and wife.
Wearing a torn blanket, Nimai roams the streets. Whenever someone comes to beat him, he stretches out his arms and says, "Beat me!" His calm and gentle demeanor combined with this peculiar behavior stirs thoughts in people’s minds. They, too, start following Nimai, enchanted by some magical charm.
Nimai wins everyone over with talks of devotion, love, and compassion. His speech is filled with Krishna’s name, and he becomes ecstatic with every mention of it. Whenever he regains his senses, he resumes chanting Krishna’s name. One day, his friend Gadadhar came and scolded him severely, urging him to return home.
Nimai asked only one question, "Friend, can you tell me, where does Krishna reside?" Gadadhar then comforted him, saying, "Oh, Krishna resides in your heart—don't you know?" Hearing this, the mad Nimai tried to cut open his chest. Such was his behavior. Years passed, and Nimai, now known as Sri Chaitanya, began his work of spreading religion in Navadvipa.
In Navadvipa, there lived two other brothers, Jagannath and Madhai. Together, they were known as Jagai-Madhai. Although their names had religious connotations, the two brothers were notorious rascals. One day, they would throw stones at someone's house, and the next, they would raid another's home. Being notorious drunkards, these brothers were responsible for maintaining order in the city. Far from being protectors, they were more like predators. No one liked them due to their rowdiness and thuggery, and many avoided them out of fear.
A close associate of Sri Chaitanya was Nityananda. One day, he noticed the names of Jagai and Madhai. He thought, if even such wicked people could be brought to the path of religion, what could be greater? Nityananda went to the two brothers and said, "Brothers, chant the holy name of Hari. The name of Hari is very sweet." Jagai and Madhai became very angry and came charging at Nityananda to beat him.
The next day, Jagai and Madhai encountered Nityananda again. This time, they were drunk in broad daylight. Blocking Nityananda's path, they said, "Who are you? Do you have a fancy for chanting the holy name?" Nityananda, smiling, replied, "Brothers, give up poison and partake in the nectar." In a fit of rage, Madhai threw a shard of a broken pot lying nearby.
Immediately, his head was split open, and blood began to flow profusely. Hearing the news, Sri Chaitanya rushed over. Seeing his devotee in such distress, he lost his composure. In a fit of rage, he shouted, "Wretched! How dare you, being a Brahmin's son, do this? If you harm a devotee, even God does not spare you from punishment!"
Saying this, with a thunderous roar, he declared, "Sudarsana, Sudarsana!" Immediately, from somewhere, a fearsome and blazing ball of fire, Vishnu's Sudarsana Chakra, came rushing. Nityananda realized that he had to appease the Lord's anger, or else there would be chaos.
He quickly came forward, holding the weapon in his hands, and said, "What are you doing, Lord? You had promised not to wield the discus in the Kali Yuga. You must keep your word. Please withdraw the Sudarsana Chakra and forgive these two fools." Hearing these words from his devotee, Sri Chaitanya calmed down.
Seeing everything, Jagai and Madhai fell silent. They approached Nityananda and Mahaprabhu with folded hands. From then on, they both engaged in chanting the holy names of Hari, traveling from village to village. Inspired by their example, even the local drunks and ruffians turned to the path of dharma.
In the holy abode of Navadvipa, the Lord was born,
In Katwa, the Lord's sacred place you must surely know.
The birthplace of Ekachakra and residence in Khardaha,
And Nityananda's two sacred abodes, know them well.
বাংলা
নিমাইয়ের পাড়ায় অনেক নামডাক। একখানা টোল খুলে সে তার পণ্ডিতি চালিয়ে যায়। পাড়ার ছেলেপুলেরা তার কাছে পড়তে আসে, পড়ার বাইরেও বহু গল্পকথা শুনে তারা মেতে থাকে নিমাই পণ্ডিতের টোলে। ঘরে নিমাইয়ের মা শচীদেবী, আর সদ্য বিয়ে করা বউ বিষ্ণুপ্রিয়া। এর আগেও তার একটি বউ ছিল, সেও ভারি মিষ্টি মেয়ে- নাম লক্ষীপ্রিয়া। বেচারি সাপের কামড়ে মারা যায়।
নিমাইয়ের এক বড় ভাইও ছিল। নাম বিশ্বরূপ। নিমাইয়ের জ্ঞানবুদ্ধি হবার আগেই বিশ্বরূপ গেরস্থালি জীবন ছেড়ে সন্ন্যাস জীবনে চলে যায়। সেই থেকে মায়ের বড় ভয়, ছোট ছেলেও না একই পথ ধরে! তবে পাড়া-পড়শি সবাই নিমাইয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মাকে এসে তারা বলে, “তুমি কোনো চিন্তা করো না শচী। নিমাই সন্ন্যাসী হবে না।” নিমাইও এমনটাই ভাবে। সে মহা আনন্দে তার টোল চালিয়ে যায়, ঘরে এসে সংসার করে। তার স্বভাব বড় চঞ্চল। ধোপার সঙ্গে, মনোহারি দোকানের মুদির সঙ্গে তার বড় ভাব। পকেটে এক কানাকড়ি না থাকলেও সবাই তাকে এসে জিনিসপাতি দিয়ে যায়। নিমাইকে সবাই বড় ভালোবাসে।
একবার নিমাই গয়াধামে গেল, মৃত বাবার পিন্ডিদান করতে। এরপর যে সে ফিরে এলো, তার আর আগের ভাব নেই। কথায় কথায় সে জ্ঞান হারায়- তার চোখের দিকে তাকালে মনে হয় যেন সংসারের কিছুই আর তার মনে ধরছে না। এমনকি অত সুন্দরী বউ বিষ্ণূপ্রিয়া, সে দশটা কথা বললে নিমাই শোনে একটা। মা শচীদেবীর নজরে পড়লো সবই। তবে কি মনের ভয় সত্যি হতে চলেছে? সখী মালিনীর কাছে গিয়ে শচী কাঁদেন আর বলেন, “নিমাই আর আগের মতো নেই গো সখী। গয়া থেকে ফিরে তার অন্য রকম ভাবসাব।” মালিনী কিছুই মানে না- “নিমাইর আবার ভাব কী? সবসময়ই তো তার মুখে হাসি। লোকে বলে, নিমাই তো পথে হাঁটে না- একেবারে উড়ে চলে। এমনই দুরন্ত সে ছেলে!”
কিন্তু মায়ের মন সবই টের পায়। নিমাইর মুখে-চোখে এখন কেবলই কৃষ্ণনাম। আসল ঘটনা তো ভালো করে কেউই জানে না। শুধু জানে নিমাই। আর তার গয়ার্য গুরু। নাম তার ঈশ্বর পুরী। সেই যে গয়ায় গিয়েছিল, সেখানে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল নিমাইর। সেখানেই সে মন্ত্র নিয়েছে, বাড়ি ফিরে কাউকে বলেনি।
একদিন নিমাই ঘুম থেকে উঠে কেবলই কাঁদে, ক্ষণে ক্ষণে হাসে। ভাব দেখে সকলে ভাবলো, নিমাই বুঝি পাগল হয়ে গেছে। নিমাই কারো দিকে মন না দিয়ে মাকে বলে, “স্বপ্নে আমায় কে যে দেখা দিলো মা! এক কৃষ্ণবর্ণ যুবক সে। তাঁর গায়ের কালো রঙে যেন জগত হলো আলো। আমার দিকে এসে সে এমন করে তাকালো মা, মনে হলো চোখ তো নয়- দুটো সরোবরে ফুটে আছে পদ্ম! আমি সেই যুবকের কাছে যাব মা। আমাকে কেউ থামিও না আর।” এই রকমে দিন কতক গেল। একদিন নিমাই ঘর ছাড়লো। ঘর ছেড়ে সে কোথায় গেল, তা শুধু তার কয়েকজন সঙ্গী ছাড়া কেউই জানে না। পাড়ার লোকে বলাবলি করলো, “নবদ্বীপের নিমাই পণ্ডিত সন্ন্যাসে গেছে গো!” মাথায় হাত দিয়ে শচীমা বসে থাকে। বিষ্ণুপ্রিয়ার চোখের কাজল লেপ্টে গেছে চোখের জলে সেই কবে, কেউ দেখেনি এসে। এরপর আবার একবার নিমাই ফিরে এসেছিল বটে, তবে তা শুধুই মা-বৌয়ের কাছে বিদায় নিতে।
ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিকে ওদিকে নিমাই পথে পথে ঘুরে বেড়ায়, যে-ই তাকে মারতে আসে, সে দুই হাত মেলে দিয়ে তাদের সামনে গিয়ে বলে- “মারো আমাকে!” তার শান্ত-সৌম্য চেহারার সঙ্গে এই ক্ষ্যাপাটে ভাব দেখে লোকের মনেও ভাবের জন্ম হয়। তারাও তখন কোন জাদুবলে নিমাইয়ের পিছু পিছু সঙ্গ নেয়। ভক্তির কথা বলে, প্রেমের কথা বলে- করুণার কথা বলে নিমাই সকলকে নিজের করে নেয়। তার মুখে কৃষ্ণনাম, কথায় কথায় সে জ্ঞানহারা হয়। জ্ঞান ফিরে পেলেই আবারো কৃষ্ণ নাম জপে। একদিন তার বন্ধু গদাধর এসে তাকে খুব করে বকে দিলো, বললো ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও। নিমাই শুধু একটি কথাই জিজ্ঞেস করলো, “বন্ধু বলতে পারো, কৃষ্ণ কোথায় থাকে?” গদাধর তখন তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, “আহা, কৃষ্ণ তোমার বুকের মাঝে- জানো না বুঝি?” এই শুনে পাগলপারা নিমাই নিজের বুক চিরে ফেলতে যায়। এমনই কান্ড-কারখানা চলতে থাকে। বছরের পর বছর যায়। নিমাই এখন শ্রী চৈতন্য নাম নিয়ে নবদ্বীপে ধর্ম প্রচারের কাজ করে।
সেই নবদ্বীপেই থাকতো আরো দুই ভাই। জগন্নাথ আর মাধম। দুজনকে একসাথে লোকে ডাকতো জগাই-মাধাই। নামের মধ্যে ধর্ম থাকলেও দুই ভাই ছিল বড্ড নচ্ছাড়। আজ এর বাড়িতে ঢিল ছোঁড়ে তো কাল ওর বাড়িতে হামলা করে। স্বভাবে পাঁড় মাতাল এই দুই ভাইয়ের উপর আবার নগর রক্ষার দায়িত্ব ছিল। রক্ষক তো নয়, একেবারে ভক্ষক। তাদের মাতলামি আর গুন্ডামির জন্য কেউ তাদের পছন্দ করতো না। আবার অনেকে ভয়েও তাদের ধার ঘেঁষতো না।
শ্রী চৈতন্যের খুব কাছের সহচর ছিল নিত্যানন্দ। একদিন তার চোখে পড়লো জগাই-মাধাইয়ের নাম। সে ভাবলো, যদি এদের মতো দুষ্টু লোককেই ধর্মের পথে না আনা যায়- তবে আর কী হবে? দুই ভাইয়ের কাছে গিয়ে নিত্যানন্দ বলল, “ভাই, তোমরা হরিনাম করো। হরিনাম বড় মধুর।” জগাই-মাধাই খুব খেপে গেলো। একেবারে তেড়ে মারতে এলো নিত্যানন্দকে।
এর পরের দিনও নিত্যানন্দের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল নগররক্ষী দুই ভাইয়ের। তারা আজ দিনের বেলাতেই মদ খেয়ে চুরমার। পথ রুখে দাঁড়ালো নিত্যানন্দের, “কে রে তোরা? খুব হরিনামের শখ হয়েছে?” নিত্যানন্দ হাসিমুখে তাদের বলল, “তোমরা বিষপান ছেড়ে মধুপান করো ভাই।” রাগের চোটে তখন মাধাই পাশে পড়ে থাকা কলসির ভাঙা টুকরা ছুঁড়ে মারলো। তক্ষুণি মাথা ফেটে দরদর করে রক্ত পড়তে লাগলো। খবর পেয়ে দৌড়ে ছুটে এলেন শ্রী চৈতন্য। ভক্তের এমন দুর্দশা দেখে তার আর মাথা ঠিক থাকলো না। রাগের চোটে চিৎকার করে উঠলেন- “কুলাঙ্গার! বামুনের ছেলে হয়ে এ কী দশা তোদের? ভক্তের গায়ে আঁচড় লাগলে ভগবানও শাস্তি দিতে ছাড়েন না।”
এই বলে বজ্রের মতো হুঙ্কার দিয়ে তিনি বললেন, “সুদর্শন, সুদর্শন!” ওমনি কোত্থেকে যেন ভয়ংকরভাবে জ্বলন্ত আগুনের গোলা হয়ে ছুটে এলো বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র। নিত্যানন্দ বুঝতে পারল, প্রভুর রাগ থামাতে হবে- নয়তো গোলমাল হয়ে যাবে। তিনি তাড়াতাড়ি এসে হাতে ধরে বলল, “এ কী করো প্রভু? তুমি তো বলেছিলে, কলিযুগে চক্র হাতে নেবে না। কথা দিয়ে কথা রাখতে হবে যে। ফিরিয়ে নাও সুদর্শন চক্র। ক্ষমা করো এই দুই মূর্খে।” ভক্তের মুখে এ কথা শুনে শান্ত হলেন শ্রী চৈতন্য। সবকিছু দেখে তখন জগাই-মাধাইয়ের কথা বন্ধ হয়ে গেছে। সোজা পায়ে এসে পড়লো নিত্যানন্দ ও মহাপ্রভুর। সেই থেকে তারা দুজনেও হরিনাম করে, গাঁয়ে গাঁয়ে ঘুরে বেড়ায়। তাদের দেখাদেখি আর গ্রামের মাতাল, গুন্ডা সকলেই ধর্মের পথে ফিরে আসে।
নবদ্বীপ ধামে প্রভুর জন্ম হয় কাটোয়া প্রভুর ধাম জানবা নিশ্চয়।। একচক্রা জন্মভূমি খড়দহে বাস। শ্রীনিত্যানন্দের দুই ধাম জানিবা নির্যাস।।