আলালের ঘরের দুলাল
Plot Summary
English
In a certain country, there lived a merchant named Alal Saudagar. He lived happily with his beautiful wife and son, Dulal. As Dulal grew older, when he turned twelve, he insisted on going hunting in the deep forest. His parents couldn’t refuse their only son, even though they had a bad feeling about it. Despite their worries, they allowed Dulal to venture into the woods. Once in the forest, he lost his way and couldn't find the path back home. Wandering aimlessly, Dulal became a drifter, as if the magic of the forest made him forget about returning to his parents. On the other hand, Rupa Sundari's beauty seemed to fade day by day with worry for her son. Alal Saudagar's trading ship sank, yet Dulal did not return home. How could he? He had lost his way and ended up in a completely different land. In that new land, Dulal met the king, Salim Badshah. The king asked him, "Boy, where is your home?" Dulal, unable to recall much about his home, simply replied, "In an unknown city." Seeing the boy’s carefree nature, the king felt pity for him and decided to keep him close. Dulal roamed freely and lived comfortably, with no memory of his past life. In the meantime, Dulal had grown strong and robust. One day, he thought to himself, "How long will I continue to live idly, doing nothing? What will people say? It's time I find some work." Even though he had little interest in work, these thoughts led him to approach the king. Dulal asked for a task, and the king readily handed him the keys to the royal granary, instructing him to manage it carefully. At the end of the year, the king would expect an account of the granary from Dulal. Though Dulal had taken on the responsibility of managing the granary, keeping track of it was not his forte. He ate some of the supplies, let some go to waste, and invited anyone he came across to help themselves to the granary. In just a few days, the royal granary was in utter disarray due to Dulal's negligence. Meanwhile, Dulal's parents, Alal Saudagar and Rup Sundari, were frantically searching for him across distant lands. They had handed over all their wealth to the caretaker and now wandered as beggars. One day, by a stroke of fate, they arrived at the gates of King Salim's palace, disguised as a poor couple. But alas, misfortune struck—Dulal, now absorbed in his duties at the royal granary and blinded by the luxuries of palace life, failed to recognize his own parents. Dulal didn’t even glance at them, and in their sorrow, the merchant and Rup Sundari passed away that very day. That night, Dulal dreamt of the moon and sun falling from the sky and crashing to the ground. Though he couldn’t make sense of the dream, it left him deeply unsettled. His restless heart became even more troubled. Without telling anyone, he took the king’s horse from the stable and set off into the unknown in the dead of night. No one had a clue that Dulal had left the kingdom. By then, he had wandered into a new, unknown realm. Deep within a forest of that land, he tied his horse under a tree and lay down to sleep. Suddenly, a bear woke him up and said, "The one who’s come here—food for the enchantress’s feast. What will this lost traveler do? By tomorrow, he'll be her beast!" Dulal paid no attention to the bear and lay down again, undisturbed. The bear, though kind-hearted and harmless, neither ate anyone nor caused fear. Its sole purpose was to warn forest dwellers of the dangers posed by enchantresses. But when Dulal ignored its warning, the bear simply went back home, baffled. It had never encountered such a stubborn boy before! The night passed like this. As soon as Dulal ventured out of the jungle the next day, an enchantress caught him in her spell. No matter which way Dulal turned, he always ended up in the same spot. He had no objections to falling under her control. When the enchantress asked him to marry her, Dulal happily agreed. She performed magic while Dulal watched in awe. Fascinated by her powers, he too wanted to learn magic. One by one, his new bride taught him every spell. Dulal had never met anyone as intriguing as her. Dulal mastered all sorts of magic—tree magic, fish magic, and more—until everything was within his grasp. After a while, they had a son, but the child of a human and an enchantress faced challenges. Soon, the boy passed away, and Dulal's heart shattered. He informed his wife that he could no longer stay there and decided to leave for a new land. However, his wife was no ordinary woman; she was a renowned enchantress. She would not let him go so easily, especially since Dulal was her own disciple. For quite some time, a peculiar magical battle ensued between them. The wife cast her spells, but Dulal quickly countered them. Suddenly, the enchantress transformed into a massive banyan tree. Dulal, however, remained unfazed and continued on his path, undeterred by any obstacles in his way. In this new land, Dulal heard the sounds of drums and festivities all around him. He asked the people and learned that the king’s palace was in need of soldiers! Seizing the opportunity, Dulal took the job. To bond with another soldier, he asked, "Brother, is there a wedding at the king's palace?" The soldier replied, "Oh, brother, there’s a wedding every day! The king's daughter needs a new groom daily. No one knows where the old grooms go!" Hearing this, Dulal wondered what the mystery meant. That night, he couldn't sleep. He kept watch outside the princess's room. Eventually, he saw a mad ascetic taking the new groom away. Dulal followed him and saw the ascetic performing some rituals while seated with the king's groom. Looking around, the ascetic gobbled up the groom! Dulal's eyes widened in shock. This wasn’t an ascetic; it was a demon! Today, he had taken the princess as well! Today, he felt particularly hungry. He also had to keep an eye on the new soldier—he was quite plump! Just then, Dulal stepped forward and said, “Ascetic, please show me how to perform the worship!” “What a surprise!” thought the ascetic, “He has come to me himself. Let me show him the rituals.” As soon as the demon in ascetic guise lowered his head, Dulal swiftly severed it with his sword. He turned to the princess and said, “Don’t be afraid. I am Dulal the soldier, roaming the roads.” Hearing the commotion, the king and everyone from the royal palace rushed there. Finally, it became clear where the king's sons-in-law had been disappearing every night! Both the king and the princess were very pleased with Dulal's cleverness. Dulal became the king’s new son-in-law. But who knew how long he would be satisfied with this new role, given his restless nature? Perhaps soon he would embark on another adventure. However, for quite some time, there was no news about Dulal; it was said he had settled down and was living a comfortable family life.
বাংলা
এক দেশে ছিল এক সওদাগর। নাম তার আলাল সওদাগর। বউ রূপ সুন্দরী আর ছেলে দুলালকে নিয়ে তাদের ভালই দিন কাটছিল। দিনে দিনে দুলালও বড় হলো। তার বয়স যখন বারো, সে বায়না ধরলো– গহীন বনে শিকারে যাবে। একমাত্র ছেলের কথা বাবা-মা ফেলতেও পারে না। মন কু ডাকে, তবু তারা দুলালকে বনে যেতে দেয়। বনে যাবার পর সে কেমন যেন পথ গুলিয়ে ফেলে। কোনোমতেই আর বাড়ি যাবার হদিস বের করতে পারে না। নিজের মনে হাঁটতে হাঁটতে দুলাল হয়ে যায় এক ভবঘুরে ছেলে, তার বাবা-মার কাছে ফেরার কথাও যেন আর মনে থাকে না বনের জাদুতে।
ওদিকে ছেলের চিন্তায় রূপ সুন্দরীর রূপ যেন দিনে দিনে মলিন হয়ে যায়। সওদাগরের বাণিজ্যতরী ডুবে যায়। তবু দুলাল ঘরে ফেরে না। ফিরবে কীভাবে? সে যে পথ ভুলে গিয়ে হাজির হয়েছে আরেক নতুন দেশে।
সেই নতুন দেশের বাদশার সাথে দুলালের দেখা হলো। নাম তার ছলিম বাদশা। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন– “এই ছেলে, তোমার বাড়ি কই?” বাড়ির কথা দুলালের ভালো করে মনে নেই কিছু। সে তাই উত্তর দেয়, “অচিন শহরে।” এমন আলাভোলা ছেলেটিকে দেখে বাদশার মনে মায়া হয়। তিনি তাকে নিজের কাছেই রেখে দিলেন। দুলাল আরামসে ঘুরে বেড়ায়, আগের জীবনের কথা তার কিছু খেয়াল হয় না। এরই মাঝে সে বড় শক্ত-সবল হয়ে গেছে। মনে মনে একদিন ভাবলো, “আর কতদিন কিছু না করে শুধু খেয়েদেয়ে বেড়াব? মানুষজন কী বলবে? এবার একটা কাজকম্মো কিছু করলে হয়।” কাজকম্মে মন নেই, তবু এসব ভেবেই বাদশার কাছে গিয়ে কাজ চাইলো দুলাল। বাদশাও তাকে এক কথায় রাজ্যের খাদ্যভাণ্ডারের চাবিকাঠি তুলে দিয়ে বললেন, ভালো করে দেখাশোনা করে রাখতে। বছর শেষে তিনি দুলালের কাছ থেকে ভাণ্ডারের হিসাব নেবেন।
কাজ করতে কাজ নিয়েছে বটে, কিন্তু ভাণ্ডারের খেয়াল রাখা দুলালের কম্মো নয়। সে কিছু নিজে খায়, কিছু ফেলে নষ্ট করে। যেখানে যাকে পায়, নিয়ে এসে ভাণ্ডারে ছেড়ে দেয়। ক’দিনেই যেন রাজার ভাণ্ডারে সে যাচ্ছেতাই অবস্থা করে ফেললো।
ওদিকে দুলালের বাবা-মা, আলাল সওদাগর ও রূপ সুন্দরী পাগলপারা হয়ে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে দেশ-বিদেশে। ধন-সম্পদ যা ছিল, সবই নায়েবের হাতে তুলে তারা নিয়েছে ফকিরের বেশ। একদিন ভাগ্য করে তারা দুজনে ফকির-ফকিরনী রূপে এসে দাঁড়ালো ছলিম বাদশার দুয়ারে। কিন্তু হায় রে অভাগা! নিজের বাবা-মাকে চিনতেও পারল না দুলাল। সে তখন বাদশার ভাণ্ডার নিয়েই ব্যস্ত। বাদশার আদরে সে যেন চোখের মাথা খেয়েছে।
ছেলে তাদের দিকে ফিরেও তাকালো না– এই দুঃখে সওদাগর আর সুন্দরী সেদিনই মারা গেল। সেই রাতে দুলাল স্বপ্নে দেখলো, আসমানের চাঁদ-সূর্য খসে মাটিতে লুটাচ্ছে। স্বপ্নের আগামাথা কিছুই না বুঝলেও দুলালের বড় মন খারাপ হলো। ভবঘুরে মন আবারো পাগল হয়ে উঠলো। তক্ষুনি কাউকে না জানিয়ে সে আস্তাবল থেকে বাদশার ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অজানার পথে। রাত তখন নিশুতি। কাকপক্ষীও জানতে পেল না, দুলাল রাজ্য ছেড়ে চলে গেছে। সে তখন অন্য নতুন এক রাজ্যে ঢুকে পড়েছে। সে রাজ্যের গহীন এক জঙ্গলে গিয়ে গাছের তলায় ঘোড়া বেঁধে দুলাল শুয়ে পড়লো। তখন এক ভাল্লুক এসে তার ঘুম ভাঙালো। ভাল্লুক তাকে বললো,
“এইখানেতে এসেছে যে– জাদুগিন্নির মুখের খাবার। অচিন পথিক করেছে কী– হবে যে কাল দিনে সাবাড়!”
দুলাল তাকে কোনো পাত্তাই দিল না। নিজের মতো শুয়ে পড়লো আবার। ভাল্লুকটি বড় ভালো ছিল, সে কাউকে খায় না– ভয়ও দেখায় না। বনের মানুষজনকে জাদুগিন্নিদের হাত থেকে সাবধান করাই তার কাজ। কিন্তু দুলাল যখন তার কথা কানে তুললো না, সে তখন বাড়ি ফিরে গেল। এমন বেয়াদব ছেলে সে কখনো দেখেনি!
রাত এভাবেই কাটলো। দিনের বেলায় দুলাল যে-ই বের হয়েছে জঙ্গল থেকে, অমনি এক যাদুগিন্নির তাকে নজরবন্দী করে ফেললো। এরপর দুলাল যে পথেই যায়, ঘুরেফিরে একই জায়গায় আসে। যাদুগিন্নির হাতে বশ হতে দুলালের কোনো সমস্যা ছিল না। যাদুগিন্নি এসে যখন তাকে বিয়ে করতে চাইলো, সে খুশিমনেই চললো। যাদুগিন্নি জাদু করে– দুলাল বসে বসে দেখে। সেও জাদু শিখতে চায়। একে একে তাকে সব জাদুই শিখিয়ে দেয় বউ, এমন মজার মানুষ সে আর কখনো দেখেনি। গাছা জাদু, মাছা জাদু– পইখা জাদু, দিনে দিনে সবই হাতের মুঠোয় আসে দুলালের। কিছুদিন পর তাদের একটা ছেলে হলো– কিন্তু মানুষ আর জাদুকরের ছেলে কি আর সহজে বাঁচে? ক’দিন যেতেই ছেলেটি মারা গেল। আর অমনি দুলালের মনও ঘুরে গেল। সে বউকে জানিয়ে দিল, এইখানে আর সে থাকবে না। সে চললো নতুন দেশে। কিন্তু বউও তো যে-সে নয়, একেবারে প্রসিদ্ধ জাদুগিন্নি। সে কি আর ছেড়ে কথা কইবে? ওদিকে দুলালও তারই শিষ্য।
বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাদের মধ্যে চললো এক অদ্ভুত জাদুর লড়াই। বউ গাইছা জাদু করে তো দুলাল মুহূর্তের মাঝে সেই জাদু ফিরিয়ে দেয়। আর অমনি জাদুগিন্নি হয়ে চায় এক বিশাল বটগাছ। দুলাল আবার নিজের মনে পথ চলে। পথে কোনো বাধাই তার ভালো লাগে না।
নতুন সেই দেশে এসে দুলাল দেখে– চারিদিকে তোপের আওয়াজ। ঢাক-বাদ্যি, নাচনেওয়ালা-গানেওয়ালা সকলেই আছে। মানুষকে জিজ্ঞেস করে দুলাল জানতে পারে, রাজার বাড়ি সিপাই লাগবে নতুন! সুযোগ বুঝে দুলাল সিপাইর চাকরি নিলো। আরেক সিপাইর সাথে ভাব জমাতে দুলাল জিজ্ঞেস করে, “ভাই রাজার বাড়ি কি বিয়ে?” সিপাই জবাব দেয়, “আরে ভাই, রাজার বাড়ি প্রতিদিনই বিয়ে! প্রতিদিনই রাজার মেয়ের নতুন একটা বর লাগে। পুরান বর কই যায়, কেউ জানে না।”
এমন কথা শুনে দুলাল ভাবে, এই রহস্যের মানে কী? সে রাতে সে ঘুমায় না। জেগে জেগে পাহারা দেয় রাজার মেয়ের ঘর। পরে দেখে, নতুন জামাইকে নিয়ে এক পাগলা সন্ন্যাসী কোথায় যেন যাচ্ছে। দুলাল তার পিছু পিছু যায়, দেখে সন্ন্যাসী কীসব যজ্ঞ করছে বসে বসে। সামনে রাখা রাজার জামাই। এদিক ওদিক চেয়ে সন্ন্যাসী জামাইটাকে গপ করে খেয়ে ফেললো! দেখে তো দুলালের চক্ষু চড়কগাছ। সন্ন্যাসী তো নয়, এ যে রাক্ষস! আজকে রাজকন্যাকেও ধরে নিয়ে গেছে সন্ন্যাসী। তার পেটে আজ একটু বেশিই খিদে। নতুন সিপাইটাকেও চোখে চোখে রাখতে হবে– যা নাদুস নুদুস! অমন সময় দুলাল সামনে এলো, বললো, “সন্ন্যাসী ঠাকুর, পূজা কীভাবে করে একটু দেখিয়ে দিন না!” “এ তো মেঘ না চাইতেই জল!” সন্ন্যাসী ভাবে, “এ দেখি নিজে থেকেই হাজির হয়েছে। দেখাই একটু পূজা দেখিয়ে দিই।” এই বলে যে-ই না সন্ন্যাসীরূপী রাক্ষসটা মাথা নিচু করেছে, অমনি দুলাল তলোয়ারের কোপে তার মাথা আলাদা করে ফেললো। রাজকন্যাকে বললো, “কোনো ভয় নেই তোমার। আমি দুলাল সিপাই, পথে পথে ঘুরে বেড়াই।”
হৈ-হুল্লোড় শুনে ততক্ষণে রাজাসহ রাজবাড়ির সকলেই সেখানে এসে হাজির হলো। এতদিনে বোঝা গেল, প্রতি রাতে রাজার জামাইগুলো কোথায় হাপিস হচ্ছিল! দুলালের বুদ্ধি দেখে রাজা-রাজকন্যা দুজনেই খুব খুশি। দুলাল হলো রাজার নতুন জামাই। কিন্তু তার যে বাউন্ডুলে স্বভাব, কদ্দিন রাজার জামাই হয়ে মন ভরবে– কে জানে! হয়তো আরেক নতুন অভিযানে সে শিগগিরই বেরিয়ে পড়বে। তবে অনেকদিন দুলালের কোনো নতুন খবর জানা যায় না, শোনা যায়, এদ্দিনে সে নাকি বেশ সংসারী হয়েছে।