তিয়র রাজার দিঘী
English
Many years ago, in a region adjacent to the Sundarbans called Tala-Kalaroa, there was a village named “Sujan Saha”. The villagers were suffering from a severe lack of water. A kind-hearted man from the village named Sharaf Khan decided to address the issue by digging a large pond. Work began on the pond, but as the project progressed, news reached the king.The king lives in a nearby village.In the capital of Manikhar. The king was furious when he heard about the pond being dug.
"A pond is being dug in my kingdom, without informing me? I'll deal with this."
As the king went to halt the pond's construction, a divine message reached his ears: "O foolish king, have you forgotten your past? If you value your life, stop immediately." The king was taken aback, and a forgotten chapter of his past came rushing back to him.
The king then approached Sharaf Khan and said, "I didn't realize my kingdom was facing such trouble. I want to help you with this project." With that, the king donated a significant amount of wealth to the pond's construction. The excavation was completed ahead of schedule. It was a rainy day, and on top of that, it was a huge thirty three-acre pond. The people of the village thought that now the problem of water will be solved. But even in such a deep lake, not a single drop of water is seen. Any water that accumulated disappeared quickly, and the villagers' problems persisted. They soon discovered the cause of this issue.
It is a weekend market in the village. The pond was the main topic of conversation. No one could find a solution. Then, one person said, "Hey! Tior King has a curse on his forehead! There is no water in the pond because of him.!" “What did you say, brother?” they asked, but the man who said it could not be found anywhere. However, everyone became furious with King Tior.At first, there was laughter, whispering, and murmuring. Then, the suppressed anger against the king emerged. As people talked, more words were exchanged, and the king's hidden history was revealed to everyone.
"What is that history?" someone asked.
"Oh, you don't know? The king isn't a true royal. He was once a sailor's son named Tepa Majhi. Many years ago, he used to ferry people for trade. One stormy day, no one wanted to board his boat except for an old man named Vinod Bamun. Tepa insisted on taking him across the river."
"Why did he insist so much?"
"The sailor's son had evil intentions. Vinod Bamun was a great man and carried a magical stone called Parashmani that could turn anything to gold. Tepa knew this and seized the opportunity. He threw Bamun into the river and stole the Parashmani. With its power, Tepa became the king. But before he died, Vinod Bamun cursed him, saying that one day the people of the kingdom would turn against him. And now it seems that curse is coming true."
Many such conversations took place. The market dispersed, and people returned home, but their anger and resentment towards the king did not lessen. The words reached the king's ears as well. Overwhelmed with worry, he seemed to have stopped eating and drinking. The sins of killing the Brahmin and his deceit weighed heavily on him. Now, people were also denouncing him. Despite being a king, Tior Raja found no peace in his life. The king then thought it was necessary to atone for his sins. The truth was, he was no longer attached to wealth. He had received and enjoyed much in life. What more could he gain in this final stage of life? So, he opened the royal treasury to all the poor and needy. People took whatever they needed. But even this did not bring peace to his mind. The king still couldn't sleep at night, and the pond still had no water.
A few days later, the king received another divine message in a dream: "Do you think giving away your wealth at the end of your life will earn you virtue? Listen, foolish king—if you want to bring water to the pond, someone must sacrifice their life for it. Only then will the problem be solved. Think about it, what will you do?"
The king was now in such a state that he wouldn't regret giving his own life. But asking someone else to do so? Another life? The king was lost in a sea of thoughts. He had committed only sins his whole life. Would anyone else give their life for him? Still, there was no harm in trying. He approached relatives, friends, even the officials of the kingdom, humbling himself and begging for a life. But what greater wealth is there than life itself? No one was willing to give up their life in exchange for wealth.
Then, to atone for his sins and to help the villagers, the king went once more to the kind-hearted Sharaf Khan’s house. The king, for the last time, shared his sorrow with him. After that, the king didn’t need to say anything more. Sharaf Khan, without any demand for money, prepared himself to sacrifice his life in the pond for the king and the people of the kingdom. The king was humbled by Sharaf Khan’s kindness. His long-held royal pride crumbled into dust. Sharaf Khan said, “Return to the palace, King. I will be present at the pond tomorrow morning.”
The news spread quickly. The next morning, Sharaf Khan went to the center of the pond, took a deep breath, and began to dig. As he did, a fountain of water erupted, and Sharaf Khan began to sink. His family rushed to save him, but they too were swallowed by the water. The entire Khan lineage disappeared into the pond of water. It was the curse of Khandal Tior King. Only Sharaf Khan's elderly mother survived, wailing at the pond's edge crying and yelling, ""O cursed pond! You have swallowed my children and my grandchildren (Puri)!"!" Since then, the pond has been known as 'Purikheko Dighi' (The Pond That Ate People).
It is said that after this, the king became a better person and worked for the welfare of his people. The ruins of his palace can still be found in the village of Manikhar, but Sharaf Khan lives on only in the stories. His descendants did not survive, all claimed by the ancient Purikheko Dighi.
বাংলা
বেশ অনেক বছর আগের কথা। সুন্দরবনের পাশের একটি অঞ্চল তালা-কলারোয়া। সেখানকারই একটি গ্রামের নাম ‘সুজন সাহা’। এ গ্রামের সকলেই তখন পানির অভাবে ভুগছে। তাই শরফ খাঁ নামে গ্রামেরই এক ভালো লোক একটি বড় পুকুর কেটে দেবার কথা ভাবলেন। কাজ শুরুও হলো। কিন্তু পুকুর কাটার কাজ যেমনি অনেকটা এগিয়ে গেছে, ওমনি রাজার কাছে খবর গেল। রাজা থাকেন পাশের গাঁয়ে। তার রাজধানী মানিকহারে। দিঘির খবর শুনে রাজা তো মনে মনে রেগে আগুন!
“আমারই রাজ্যে পুকুর কাটছে, আমাকেই না জানিয়ে! দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা।”
রাজা যে-ই পুকুরের কাজ বন্ধ করতে যাবেন, ওমনি কোত্থেকে যেন তার কানে ভেসে এলো এক দৈববাণী– “ওরে গণ্ডমূর্খ রাজা, তুই কি তোর অতীত ভুলে গেছিস? প্রাণের ভয় থাকে তো, এক্ষুনি থাম।” রাজা চুপসে গেলেন। রাজার দাপুটে ভাবও আর থাকলো না। অতীতের ভুলে যাওয়া এক অধ্যায় যেন তার চোখে সামনে পরিষ্কার হয়ে গেলো।
রাজা তখন গিয়ে শরফ খাঁর সাথে দেখা করে বললেন, “আমার রাজ্যের এমন দুর্দিন, আমিই জানি না। আপনার এই কাজে আমি সাহায্য করতে চাই।” এই বলে রাজাও পুকুর কাটার কাজে বহু ধন-সম্পদ দান করলেন। নির্দিষ্ট দিনের আগেই খননের কাজ শেষ হলো। একে তো বর্ষার দিন, তার উপর তিন একর তেত্রিশ শতকের বিশাল একখানা দিঘি। গাঁয়ের লোকে ভাবলো, এবার বুঝি জলের কষ্ট দূর হয়। কিন্তু এত গভীর দিঘিতেও এক ফোঁটা জলের দেখা নেই। বর্ষায় একটু জল জমে, তো পরক্ষণেই উধাও! গাঁয়ের লোকের সমস্যা দূর হলো না। তবে তারা এই সমস্যার কারণ জানতে পারলো।
গ্রামে সেদিন সপ্তাহান্তের হাটবার। সকলের মধ্যে দিঘি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। কেউই সুরাহা করতে পারছে না। এরই মধ্যে একজন বলে উঠলো, “আরে তিয়র রাজার কপালে অভিশাপ আছে! ওর জন্যই তো দিঘিতে জল নেই।” “কী বললে ভাই?” – বলে যেই লোকটিকে খোঁজা হলো, আর তার টিকির নাগালও পাওয়া গেল না। কিন্তু তিয়র রাজার বিরুদ্ধে সবাই তেঁতে উঠলো। প্রথমে হাসি-ঠাট্টা, কানাকানি, গুজগুজ-ফুসফুস। এরপরই রাজার উপর চেপে রাখা রাগ। কথায় কথায় অনেক কথা বাড়ে। রাজার লুকিয়ে-ছাপিয়ে রাখা ইতিহাসটাও সকলের বলাবলিতে বেরিয়ে আসে।
“কী সেই ইতিহাস?”
“আরে জানো না। তিয়র রাজা তো আর রাজার ছেলে নয় গো। এ যে মাঝির ছেলে মাঝি– নাম ছিল তার টেপা মাঝি। অনেক বছর আগে– তার বয়েস যখন একেবারে কম, তখন সে খেয়াপারে নৌকো চালাতো। একদিন খুব ঝড়-বাদলার দিন। কেউ নৌকায় উঠতে চাইছে না। বুড়ো বিনোদ বামুনকে অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে টেপ্পা তার নৌকোতে তুলে নিলো।”
“কেন, অত জোর করলো কেন!?
“আহা, মাঝির ছেলের মাথায় কুবুদ্ধির শেষ ছিল না। আশেপাশের সকলেই জানতো, বিনোদ বামুন বড় গুণী লোক। তার থলেতে ছিল এক জাদুর পরশ পাথর। যে পাথর ছোঁয়ালে মাটির ঢেলাও সোনা হয়ে যায়। এ কথা জানা ছিল টেপা মাঝিরও। তাইতো সে সুযোগ বুঝে বামুনকে নদীর জলে ফেলে দিল, আর তার থলে থেকে ছিনিয়ে নিলো সাত রাজার ধন– পরশ পাথর। সেই পরশ পাথরের গুণেই মাঝি আজ রাজা। তবে মরে যাবার আগে বিনোদ বামুন তাকে শাপ দিয়ে গেছিল– একদিন রাজ্যের লোক তার গায়ে থু থু মারবে। কে জানে, সে কথা বোধহয় সত্যি হতে চললো।”
এইমতো শত কথা হয়। হাট ভাঙে। মানুষ বাড়ি ফেরে। কিন্তু রাজার উপর রাগ-ক্ষোভ কারুরই কমে না। কথাখানা রাজার কানেও গেছে। চিন্তায় চিন্তায় তিনি যেন নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বামুনহত্যা, ছলচাতুরির পাপ তো আছেই। এখন লোকজনও ছি ছি করছে। রাজা হয়েও জীবনে শান্তি মিললো না তিয়র রাজার। রাজা এবার ভাবলেন, প্রায়শ্চিত্ত করা দরকার। আসলে কথাটা কী– ধন-সম্পদের মোহ তার আর নেই। অনেক তো পেয়েছেন, অনেক ভোগ করেছেন। এই শেষ বয়সে আর নতুন কীইবা পাবেন! তাই তিনি রাজকোষ খুলে দিলেন সকল দীন-দুঃখীর জন্য। যার যা দরকার, নিয়ে যেতে থাকলো। কিন্তু এতে যদি মনের শান্তি মিলতো! রাজার এখনো রাতে ঘুম হয় না। দিঘিতে জলও ওঠে না।
এভাবেই বেশ কিছুদিন কেটে গেল। এক রাতে আবারো স্বপ্নে শোনা গেল সেই অলৌকিক দৈববাণী– “শেষ বয়সে ধন-সম্পদ ছেড়ে দিয়ে তুই বুঝি পুণ্য কামাবি? ভাগ্যদেবতা অত বোকা বুঝি? শোন রে দুষ্ট রাজা– যদি দিঘিতে জল আনতে চাস, তবে তোর জন্য এই দিঘিতে কাউকে প্রাণ দিতে হবে। তবেই সব সমস্যার সমাধান হবে, নইলে নয়। ভেবে দেখ, কী করবি।”
রাজার এখন এমন অবস্থা, নিজের প্রাণ দিতে তার কোন আফসোস হবে না। কিন্তু অন্য কাউকে! আরো একটি প্রাণ? চিন্তার সাগরে ডুবে গেলেন রাজা। সারা জীবন শুধু পাপই করেছেন। তার জন্য কি আর কেউ জীবন দেবে? তবু চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি নেই। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, এমনকি রাজ্যের গোমস্তা, কারো দুয়ারই বাকি রইলো না– যেখানে তিয়র রাজা তার মাথা নিচু করে প্রাণভিক্ষা চাইলেন না। কিন্তু প্রাণের চেয়ে বড় সম্পদ আর কীইবা আছে, তাই কেউই ধন-সম্পদের বিনিময়ে জীবন দিতে রাজি হলো না।
তখন রাজার পাপ খন্ডাতে আর গাঁয়ের লোকদের ভালো করতে আরো একবার এগিয়ে গেলেন সেই দয়াশীল শরফ খাঁ। রাজা শেষবার তার বাড়িতে গিয়েই মনের দুঃখ খুলে বলেছিলেন। এরপর রাজার আর কিছু বলতে হয়নি। শরফ খাঁ নিজেই কোনো ধরনের টাকাকড়ি ছাড়া রাজা ও রাজ্যের লোকের জন্য দিঘিতে জীবন দিতে প্রস্তুত হলেন। শরফ খাঁর দয়ায় রাজার মাথা হেঁট হয়ে গেল। এতদিনের রাজগরিমা ধুলায় মিশে গেল। শরফ খাঁ বললেন, “মহলে ফিরে যান রাজা। কাল সকালেই আমি দিঘিতে হাজির থাকব।”
এ খবর পৌঁছে গেল সবার কাছে। পরের দিন সকালবেলা মাথায় গামছা বেঁধে, হাতে মস্ত বড় এক কোদাল নিয়ে শরফ খাঁ দিঘির একেবারে মাঝখানে চলে গেলেন। তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে দিঘির তলানিতে কোপ বসিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই জলের ফোয়ারা ছিটকে বেরিয়ে এলো। নিমেষে মধ্যে ডুবে যেতে থাকলো শরফ খাঁ। তাকে বাঁচাতে নাকি ছুটে এসেছিল তার ছেলেপুলে, নাতি সকলেই। তাদেরকেও বাঁচানো যায়নি। এক দিঘি জলের মধ্যে খাঁ বংশের সবাই উধাও হয়ে গেল। খণ্ডাল তিয়র রাজার অভিশাপ। বেঁচে ছিল শুধু শরফ খাঁর বুড়ি মা– যে সবাইকে পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে দিঘির ধারে চিৎকার করে বলছিল, “ওরে সর্বনাশা দিঘি! তুই আমার ছাওয়ালডারে খাইলি, আমার পুরিটাও খাইলি!” সেই থেকে এই দিঘির নাম হয়েছে ‘পুরিখেকো দিঘি’।
শোনা যায়, এর পর থেকে তিয়র রাজা বড় ভালো লোক হয়ে গেছিলেন। প্রজাদের কল্যাণে কাজ করতেন। আজো মানিকহার গ্রামে খুঁজে দেখলে পাওয়া যাবে সেই রাজার রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ। তবে শরফ খাঁ শুধু বেঁচে আছেন গল্পেই। তার বংশের কেউ বেঁচে নেই– সবই গিলে খেয়েছে ওই পুরিখেকো দিঘি।