The farmer and the beggar from a foreign land

The farmer and the beggar from a foreign land

Bengali Title

চাষী ও ভিনদেশী ফকির

Category
Indigenous Folktale

সে বহু বহুকাল আগের কথা। এক দেশে বাস করতো এক গরীব চাষী পরিবার। দিন আনতে দিন খায় অবস্থা তাদের। আশপাশের অন্য চাষীদের ফসল ভালো হলেও দুর্ভাগ্যবশত তাদের ফসল খুবই খারাপ হতো। কিন্তু পরিবারটির সব সদস্যই ছিল খুব দয়ালু ও লোভহীন। যার ফলে এত কম ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও, হাঁড়িতে ভাত না চড়লেও তাদের মুখে হাসি লেগে থাকতো। প্রতিবেশীদের প্রতি তাদের মনে কোনো ঈর্ষা ছিল না। নিজেদের অবস্থা নিয়ে কিছুটা হতাশ হলেও তারা কখনো অন্যদের দোষ দিত না। এভাবেই অভাবে-অনটনে দিন কেটে যাচ্ছিল তাদের। হঠাৎ এক রাতে এক ভিনদেশী ফকির এসে দরজায় কড়া নাড়লো। বহু পথ ঘুরে ক্লান্ত ফকির তাদের কাছে এক বেলার খাবার আর এক রাত আশ্রয় চাইলেন। তারাও সাতপাঁচ না ভেবে বেশ সাদরেই স্বাগত জানালো অতিথিকে। এত সুন্দর আপ্যায়ন পেয়ে ফকির অত্যন্ত খুশি হলেন। সকালে যাবার সময় তিনি পরিবারের সবাইকে ডেকে বললেন,

“তোমরা বড় ভালো মানুষ। চেনো না জানো না আমায়, তবু কত যত্ন করলে। তোমরা যদি চাও, আমি তোমাদেরকে এমন একটি পথ বলে দিতে পারি, যাতে তোমাদের অভাব মিটে যাবে। কিন্তু আমায় কথা দিতে হবে, অনেক ধন-সম্পদ হলেও তোমরা এখনকার মতোই দয়ালু থাকবে।”

এক কথায় রাজি হয়ে গেল সবাই।

ফকির তখন তার ঝোলা থেকে বের করলেন একটি ছোটখাটো, নাদুস নুদুস খরগোশ। সেটিকে সামনে রেখে ফকির বললেন,

“বহু সাধনার ফল এটি। আমাকে বলা হয়েছিল, এই খরগোশটি রান্না করে খেলে আমি অনেক অর্থ-বিত্ত পাব। তা আমি ফকির মানুষ, অত অর্থ দিয়ে হবেই বা কী? আসলে অনেক দিন ধরে থাকার ফলে খরগোশটির উপর আমার বড় মায়া পড়ে গেছে। আমার দ্বারা ও কাজ হবে না। আমার বয়সও কম হলো না, আর বেশিদিন বাঁচব না হয়তো। তোমাদের বড় অভাব, তোমরা এ খরগোশটি নাও। নিজেদের ভাগ্য ফেরাও। তবে সাবধান, আমার মতো মায়া যেন না হয়! তবে আর ভাগ্য ফিরবে না।”

এ কথা বলে ফকির তার ঝোলা নিয়ে চলে গেলেন। অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চাষী পরিবার। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল তাদের, এমনটাও হয় নাকি? কিন্তু এমন অভাবের দিন যদি কেটে যায়, তবেই বা মন্দ কি! অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করা হলো, সেই রাতেই খরগোশটি রান্না করা হবে। চাষীগিন্নি বাড়িতে থাকল রান্নার জন্য, ছেলে আর বর গেল চাষের কাজে। ওদিকে ছেলেবউয়ের বাচ্চা হবে, তাই সে বেশ অনেকদিন ধরে বাপের বাড়িতে। আজ রাতই ফিরবে, সে ফকিরের কথা কিছু জানে না।

সবাই চলে যাওয়ার পর চাষীগিন্নি বসে বসে দিবাস্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করলো। অনেক টাকা-পয়সা হলে তারা কত কী করবে, খাবারের জন্য আর কোনো কাজ করতে হবে না, পায়ের উপর পা তুলে জীবনে কাটিয়ে দেয়া যাবে! সে যত ভাবে, তত তার মনে লোভ বাড়ে। লালসার ভূত তার মাথায় চড়ে বসে। এক সময় তার মনের দয়া-মায়া, ভালো চিন্তা সব উড়ে গেল, মনে থাকলো শুধু লোভ আর লোভ। তখন সে খরগোশটিকে কেটে উনুনে রান্না চড়ালো। সন্ধ্যা পেরিয়ে যাচ্ছে এমন সময়, তার ছেলেবউ বাড়ি ফিরলো। অনেক লম্বা সফর ছিল, সে বেশ ক্লান্ত। ওদিকে হাঁড়ি থেকে খুব সুন্দর রান্নার ঘ্রাণ আসছে। তাদের বাড়িতে তো এত ভালো রান্না হয় না, সে তাই কৌতূহল ভরে শ্বাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলো। ওদিকে শ্বাশুড়ি তো আর আগের মতো নেই। একেবারে মুখ ঝামটা দিয়ে বললো, “এসেই খাই খাই করছো যে বউ? বাপের বাড়ি্বখেতে-পরতে দেয়নি বুঝি?” এমন বকাঝকা শুনে বউ বড় দুঃখ পেল। কিন্তু কিছু বললো না। তবে যেমনি শ্বাশুড়ি একটুখানি রান্নাঘরের বাইরে গেছে, খিদের চোটে সে এক খাবলা মাংস নিয়ে খেয়ে ফেললো। শ্বাশুড়ি এসে তাকে হাতেনাতে ধরলো আর মারতে লাগলো। মার খেয়ে ছেলেবউ বাড়ির উঠানে বসে কাঁদতে লাগলো। তখনই চাষী আর তার ছেলে ফিরে এলো বাড়িতে। বউয়ের এমন দুর্দশা দেখে মায়ের উপর রাগ করে ছেলে তখনই বউকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো, সাথে শুধু নিলো পানি খাওয়ার পাত্র বা ‘লোটা’।

গহীন জঙ্গলের পথে হাঁটতে হাঁটতে দুজনেই ক্লান্ত হয়ে পড়লো। কোথাও খাওয়ার পানিটুকু পর্যন্ত নেই আর, খাবার তো দূরের কথা। জংলী লতাপাতা খেয়ে তারা কোনোমতে বেঁচে থাকলো। এমনই দুর্দশার মধ্যে তাদের একটি ছেলে হলো। ছোট বাচ্চা, নতুন মা– অথচ মুখে দেবার জন্য পানিও নেই! মনের দুঃখে চাষীর ছেলে এক বিশাল উঁচু গাছে উঠে দেখলো, আশেপাশে পানির কোনো উৎস আছে কি না। তখন তার চোখে পড়লো বেশ খানিকটা দূরের স্বচ্ছ এক হ্রদের উপর। যে-ই ভাবা, সে-ই কাজ। লোটা নিয়ে সে ছুটলো হ্রদের পানে। ওখানে জল খেয়ে, লোটায় জল ভরে ফিরতে যাবে– তখন ইচ্ছে হলো একটু স্নানের। এতটা পথ হেঁটে এসেছে, গরমও প্রচুর। কিন্তু সে তো জানতো না, সেই হ্রদে বাস করে উ ইয়াক জ্যাকোর নামের এক বিশাল ড্রাগন। যে-ই সে জলে নামলো, ড্রাগন এসে তাকে খেয়ে ফেললো।

হ্রদের দিকে আসার আগে চাষীর ছেলে ঝোপের মধ্যে নিজের পরনের ধুতি ছিঁড়ে বেশ কিছু নিশানা রেখে এসেছিল। অনেকক্ষণ তার খোঁজ না পেয়ে তার বউ, বাচ্চাকে কোলে করে সেই নিশানা দেখে এগোতে লাগলো। এসে দেখলো, হ্রদের কাছেই তার বরের লোটাখানা রাখা। মানুষের গন্ধ পেয়ে ড্রাগন আবারো হ্রদের কিনারে এসে উঁকি দিচ্ছিল। দূর থেকে চাষীবউ ভাবলো সে বুঝি মানুষ। তাকে জিজ্ঞেস করলো, “এদিক দিয়ে কাউকে যেতে দেখেছো?” ড্রাগন ছলচাতুরি করলো, “হ্যাঁ। এক লোক এসেছিল বটে। তাকে তো জলের রাজা নিয়ে গেছে। তুমি যাবে তার কাছে?” একটু এগিয়ে তার হাবভাব দেখে তখন চাষীবউ বুঝলো, এ তো দুষ্টু ড্রাগন। এ নিশ্চয়ই তার বরকে খেয়ে ফেলেছে। সে অবশ্য জানতো, ড্রাগন শুকনো মাটিতে টিকতে পারে না। জলের মধ্যেই তার যত রাজত্ব। বাচ্চা আর পানির লোটা নিয়ে চাষীবউ তখন আবার জঙ্গলে ফিরে গেল। বরের দুঃখে, ঘরের দুঃখে সে মাটিতে লুটিয়ে কাঁদতে লাগলো। সে কী চিৎকার করে কান্না, গাছের পাখিও উড়ে গেল। আর পাশে রাখা নবজাতক শিশুটিও তখন তারস্বরে কান্না শুরু করলো। তখন চাষীবউ অবাক হয়ে দেখতে পেল, তার ছেলের কান্না সোনা হয়ে ঝরছে। চোখের জলের প্রতিটি ফোঁটা এক টুকরো স্বর্ণখণ্ড। তখন তার খেয়াল হলো, বরের মুখে শোনা সেই ফকিরের খরগোশের কথা। তবে কি সেদিন সেই খরগোশের মাংসই খেয়েছিল সে? দুয়ে দুয়ে চার মিলে গেল। অকূল পাথারে চাষীবউ এবার যেন দুটো খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে পারলো। ছেলেকে নিয়ে, স্বর্ণগুলো গুছিয়ে সে তখন মানুষের বসতি আছে, এমন এক গ্রামের পথে হাঁটতে লাগলো। ক্রোশ ক্রোশ পথ হাঁটার পর সে একটি গ্রাম খুঁজে পেল। সেই গ্রামের প্রধানের কাছে গিয়ে চাষীবউ সব খুলে বললো। তার কাছে অতগুলো সোনা আছে দেখে, প্রধান তাকে গ্রামে থাকতে দিলেন। ছেলেকে নিয়ে চাষীবউয়ের শুরু হলো নতুন জীবন, নতুন গ্রামে।

মা-ছেলে মিলে ভালোই দিন কেটে যাচ্ছিল। ছেলে যত বড় হচ্ছিল, তত মা ভয় পেত– পাছে কেউ তার ছেলের কান্না দেখে ফেলে! তাইতো সে উ বাবাম দোহকে সবসময় সাবধান করে দিত, কারো সামনে না কাঁদতে। আসলে বাবামের মায়ের মনে লোভও ছিল কম, ছেলের কান্নায় ঝরে পড়া সোনা দিয়ে সে বড়লোক হতে চায়নি, অল্পেই তুষ্ট ছিল সে। ছেলেকে আদরে, সোহাগে সে বড় করতে থাকলো। উ বাবামের বন্ধু ছিল সে রাজ্যের রাজপুত্র। বন্ধুর সাথে প্রায়ই সে ঘুরতে যেত রাজবাড়িতে, শিখে ফেলতো নানা আদব-কায়দা। একবার রাজপুত্র তাকে দুয়ালি অনুষ্ঠানে (হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জুয়া খেলার উৎসব) জুয়া খেলতে ডাকলো। সে খেলার কোনো কিছু না জেনেই কীভাবে যেন প্রতিবার উ বাবাম জিতে যাচ্ছিল। বারবার তাকে জিততে দেখে রাজপুত্রের রাগ চড়ে যায়, সে প্রতিবারই খেলার বাজি বাড়িয়ে দেয়– যাতে উ বাবাম ভয় পেয়ে খেলা থেকে পিছু হটে। কিন্তু হলো এর উল্টোটা। উ বাবামের ভাগ্য এতই ভালো ছিল যে সেই রাজপুত্র জুয়াতে তার সমস্ত ধন-সম্পদ, এমনকি শেষমেশ তার সিংহাসনটিও হারায় উ বাবামের কাছে। রাজপুত্র তখন কোনো উপায় না দেখে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে উ বাবামকে যাচ্ছেতাই গালাগালি করে, “তুমি কি কালো যাদু করছো? তুমি নিশ্চয়ই জাকোর ড্রাগনের ছেলে।” ওদিকে বাবা সম্পর্কে কিছুই জানতো উ বাবাম, তাই সে মাথা পেতে নিচ্ছিল তাদের সব কথা। পরে সে ন্যায়ের আশায় রাজদরবারে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে খেলার সকল বাজি, তার জয় সম্পর্কে খুলে বলে। কিন্তু কোনো প্রমাণ না থাকায় দরবারের সকলে রাজপুত্রের পক্ষ নেয়। তখন উ বাবামকে কয়েকদিন সময় দিয়ে আদেশ ঘোষণা কয়রা হয়, “এই ক’দিনের মধ্যে উপযুক্ত প্রমাণ আনো, নয় তো শূলে চড়ো!” লজ্জায়, অপমানে উ বাবাম দরবার ছেড়ে বেরিয়ে যায়। বাড়িতে গিয়ে মাকে সে বলে মেঝের মধ্যে একটি বড় মাদুর পেতে দিতে। সেই মাদুরে শুয়ে উ বাবাম নিজের সব দুঃখ উজার করে দেয়, তার কান্নার একেকটি ফোঁটা সোনার খণ্ড হয়ে মাদুরে ছড়িয়ে পড়ে। এত সোনাদানা তার মা এ জীবনে একসাথে দেখেনি, তবু সে ছেলের দুঃখে খুশি হতে পারলো না কিছুতেই। ছেলের কান্না থামার পর মা তাকে বহুকাল আগের সব কাহিনি বললো– সেই তার বাবার হারিয়ে যাওয়ার, পানির লোটা ও ড্রাগনের গল্প। বাদ দিলো না সেই ভিনদেশী ফকিরের কথাও। সব শুনে সাহসী উ বাবাম কান্না মুছে উঠে দাঁড়ালো এবং মাকে প্রতিজ্ঞা করলো, “যে করেই হোক আমি সেই ড্রাগন– উ ইয়াক জাকোরকে হত্যা করবো। আমাকে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে হবে!” এই বলে সে বেরিয়ে গেল ড্রাগনের বাড়ির পথে। হ্রদের সামনে গিয়ে দেখতে পেলো এক প্রকাণ্ড কাঠের সিন্দুক, সিন্দুকের ভেতরে রাখা এক রাজকন্যার রেশমি পোশাক আর বহুমূল্য সব রত্ন। পোশাক আর রত্নগুলোকে বের করে নিয়ে উ বাবাম বিভিন্ন আওয়াজ করতে লাগলো, যদি হারিয়ে যাওয়া পথচারী কিংবা সে ড্রাগনের দেখা মেলে। ড্রাগন পানির নিচেই ছিল, আওয়াজ শুনে সে ভাবতে লাগলো উ বাবাম বুঝিবা পানিতে নামবে। কিন্তু না, মায়ের কথামতো সে পানির উপরে শুকনো ভূমিতেই ছিল। কেননা সে জানতো, পানির বাইরে ড্রাগন তাকে কিছু করতে পারবে না। অধৈর্য হয়ে ড্রাগন এবার পানির উপরে মাথা তুললো। উ বাবাম ওঁৎ পেতেই ছিল। যেই ড্রাগন মাথা তুললো, সে তাকে টেনে তুলে আনলো এবং পুরে দিল সেই কাঠের সিন্দুকে। এবারে বহুমূল্য পোশাক, রত্ন আর সিন্দুকভরা ড্রাগন নিয়ে উ বাবাম ফিরে চললো গ্রামের দিকে। ওদিকে গ্রামে সবাই কানাঘুষা করতে লাগলো, উ বাবাম তার অভিযানে সফল হয়েছে! সে প্রমাণ নিয়ে এসেছে। কিন্তু অত জলদি উ বাবাম কাউকে কিছু বললো না, এমনকি তার মাকেও না। মাকে পোশাক আর রত্নগুলো দিয়ে সে খুব সাবধান করে দিল, কোনোভাবেই যেন সিন্দুকের ডালা না খোলে। কিন্তু মায়ের কৌতূহল মনে মনে রয়েই গেল। যেই উ বাবাম বাইরে বেরোলো, তখনই সে ডালা তুলে দেখতে গেল– ভেতরে কী আছে! ওদিকে ড্রাগন তো সবই জানে। তখন সে তার মৃত স্বামী, অর্থাৎ উ বাবামের বাবার রূপ ধরে বসে থাকলো। ডালা খুলে নিজের হারানো স্বামীকে খুঁজে পেয়ে উ বাবামের মা আত্মহারা হয়ে গেল। তখন তার স্বামীরূপী ড্রাগন চাষীবউয়ের সঙ্গে ছলচাতুরি শুরু করলো। সে তাকে বললো, জাকোরের হাত হেকে বাঁচতে চাইলে তার ছেলেকে কিছু দুষ্প্রাপ্য তিনটি জিনিস নিয়ে আসতে হবে। তখন উ বাবামের মা নিজের স্বামীকে ড্রাগনের কাছ থেকে বাঁচাতে ছেলের সঙ্গে মিথ্যে বলা শুরু করলো। সে অসুস্থ হবার ভান করলো এবং ছেলেকে ডেকে ড্রাগনের বলে দেয়া জিনিসগুলো আনতে বললো– “আমার এই অসুখ যে সে অসুখ নয় বাবা! তুমি জঙ্গলে গিয়ে আমার জন্য ওষুধ নিয়ে আসতে পারবে তো?” উ বাবাম ছিল মায়ের বাধ্য সন্তান। সে তার মায়ের কথা কী করে ফেলে? তখনই মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে সে বেরিয়ে পড়লো অভিযানে। সেই জিনিসগুলো ছিল বাঘের দুধ, ভালুকের তাজা রক্ত এবং অজগরের ভেজা চামড়া। একটি একটি করে প্রতিটি দুর্লভ বস্তু নিয়ে আসতে উ বাবাম বনে গেল। একে একে সবকিছু নিয়ে ফিরলোও, কিন্তু কিছুতেই তার মায়ের অসুখ সারলো না। সারবেও বা কী করে? মিথ্যে অসুখ কি আর সারে! তবে মায়ের এমন অদ্ভুত ব্যবহারে উ বাবাম খুব অবাক হলো এবং বনের এক বাঘের ছানার কথা শুনে সে মায়ের উপর গোয়েন্দাগিরি শুরু করলো। এই ছানার সাথে তার দেখা হয়েছিল বাঘের দুধ আনতে গিয়ে। ছানাটি তাকে বলে, “উ বাবাম, তোমার মায়ের তো কোনো অসুখ নেই। তুমি যখন বাড়ি থাকো না, তোমাদের বাড়িতে শুধু ভালো ভালো রান্না হয়। আমি সেই গন্ধ যেন জঙ্গলে বসেও পাই!” উ বাবাম চিন্তায় পড়ে গেলো। মায়ের উপর নজর রাখতে গিয়ে সে জানতে পেল, তার মা আসলে পুরোপুরি সুস্থ এবং প্রতিদিনই কারো জন্য পঞ্চব্যঞ্জন রাঁধে। একদিন আড়াল থেকে সে দেখতে পেল, সিন্দুকের মধ্যে তার বাবার রূপ নিয়ে শুয়ে আছে সেই ড্রাগন। তখন আর তার কিছু বুঝতে বাকি রইলো না। উ বাবাম আর এই ছলচাতুরি নিতে পারলো না। রাগের মাথায় সে ঘরে ঢুকলো এবং মাকে সব বুঝিয়ে বললো। তার মা তখন নিজের ভুল বুঝতে পারলো। তখন উ বাবাম সেই সিন্দুক নিয়ে চললো রাজবাড়ি, যেখানে প্রমাণ না নিয়ে গেলে তাকে শূলে চড়তে হবে। রাজার কাছে গিয়ে উ বাবাম তার জন্মের বৃত্তান্ত, তার বাবার হারিয়ে যাওয়া, ড্রাগনের আক্রমণ, মায়ের তাকে নিয়ে পালিয়ে আসা– সবই একে একে জানালো। এবং সবশেষে প্রমাণরূপে বের করে দিলো ড্রাগনের সিন্দুকখানা। দরবারভর্তি লোকজনের মধ্যে সে তলোয়ারের এক কোপে হত্যা করলো উ ইয়াক জাকোর নামের সেই নিষ্ঠুর ড্রাগনটিকে। সকলে তার নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগলো। রাজাও তখন বাজির শর্ত মোতাবেক উ বাবাম দোহকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে বেছে নিলেন। এর পর বহু বছর ধরে উ বাবাম সেই রাজ্যের রাজা হয়ে প্রজাদের লালন-পালন করে চলেছে।