চলন বিলের ঘাসি দেওয়ানের কিংবদন্তি
Plot Summary
English
About 500 years ago, Shah Makhdum (RA) journeyed from the distant lands of Arabia, through Yemen, to finally settle in Rajshahi, Bangladesh. Accompanying him was Baba Ghasi Dewan (RA). Shah Makhdum (RA) was a revered Islamic saint who, along with numerous disciples, came to this region to spread the teachings of Islam. Among his followers, some dedicated themselves to spreading Islam, while others devoted their lives to serving humanity. Baba Ghasi Dewan (RA) was one of the most notable among them.
He devoted himself to serving humanity in the sacred land of Chalan Beel, which is renowned as the land of the Baro Auliya (twelve saints). His arrival in this region was guided by divine inspiration and the instructions of Shah Makhdum Baba. Baba Ghasi Dewan (RA) traveled from Rajshahi, passing through Natore, and eventually arrived in Singra, a thana within the Natore subdivision. From there, he wandered until he reached a small piece of land between Satpukuria Hijli and Dahiya.
To determine the nature of the crop, Baba Ghasi Dewan (RA) put a single sesame seed into his mouth. Immediately, a divine message was revealed to him: "O great man, whose crop have you eaten without permission?" Troubled by this, Baba began searching for the owner of the land. He eventually discovered that the owner was Kali Pada Ghosh from the Dahiya area. Baba, feeling remorseful, hurried to Ghosh's home and asked for forgiveness for eating just one sesame seed. In return, he expressed his willingness to work for the Ghosh family for 12 years as a way of atonement.
Ghosh quickly realized that Baba Ghasi Dewan (RA) was no ordinary person and agreed to employ him according to the proposed terms. Baba was assigned the task of cutting grass at Ghosh Mahashay's household. Kali Pada Ghosh was involved in the curd business and owned many milk-producing cows. Every day, Baba would take a boat, go out to cut grass, and then return to the Ghosh household with the boat fully loaded with grass.
Many people saw Baba Ghasi Dewan (RA) sleeping on the boat, with his head at one end and his feet at the other. Such was his miraculous power, which later led to him being known as "Ghasi Dewan." However, there is little information about his real name. After working for 12 years without any wages at the Ghosh household, Baba bid farewell to Kali Pada Ghosh and set out once again on a journey to the unknown.
In the heart of Chalan Beel, near the spot where Baba Ghasi Dewan's (RA) shrine is located, there used to be a dangerous whirlpool. Anyone who fell into it was doomed, with no chance of escape. One day, as Baba was passing by this perilous place, he noticed a dead cow floating in the water. He stopped his boat and began eating the raw meat from the carcass. Coincidentally, two young boys were sitting on a nearby jungle-covered mound, witnessing this strange event.
One of the boys was the son of a fisherman, and the other was the son of a barber. Seeing Baba Ghasi Dewan eating the raw meat, they were both puzzled. When they spoke to Baba, he offered them the meat as well, and without hesitation, they ate it. Baba Ghasi Dewan, with his miraculous powers, could make the impossible seem possible, performing such extraordinary acts with ease.
From that moment on, the two boys became devoted followers of Baba Ghasi Dewan. Even today, their graves are located beside Baba's at the shrine. Baba Ghasi Dewan made that dense, jungle-covered mound his dwelling, and over time, it gained popularity. People from various places began visiting just to catch a glimpse of him.
The place in the heart of Chalan Beel remains highly popular even today. Thousands of people visit the shrine, hoping for their various wishes and desires to be fulfilled.
বাংলা
আজ থেকে প্রায় ৫০০ বৎসর পূর্বে সুদূর আরব থেকে ইয়েমেন হয়ে বাংলাদেশের রাজশাহীতে শায়িত শাহ্ মখদুম (রহঃ) এর সঙ্গে এই দেশে আগমন ঘটে বাবা ঘাসী দেওয়ান (রহঃ) এর। শাহ্ মখদুম বাবা (রহঃ) অগনিত ভক্তসহ এদেশে ইসলাম প্রচারে আগমন করেন। ভক্তদের মধ্যে কেউ ইসলাম প্রচার কেউ মানব সেবায় আত্ম নিয়োগ করেন। এদের মধ্যে ঘাসী বাবা (রহঃ) উল্লেখযোগ্য একজন। তিনি বার আওলিয়ার দেশ পূণ্য স্নাত ভূমি চলনবিলের মধ্যে এসে মানব সেবায় আত্ম নিয়োগ করেন। এখানে তার আগমনের কারণ ছিল ঐশীবাণী ও শাহ্ মখদুম বাবার নির্দেশ। রাজশাহী জেলার অন্তর্গত নাটোর মহকুমাধীন সিংড়া থানার মধ্যে সাতপুকুরিয়া হিজলী ও ডাহিয়ার মাঝখানে এসে উপস্থিত হন। বাবা রাজশাহী হতে নাটোর হয়ে সিংড়ায় আসেন এবং সিংড়া হতে ঘুরতে ঘুরতে এক তিল-তিশির জমিতে উপস্থিত হন। তিনি কি ফসল তা পরখ করে দেখার জন্য একটি তিল মুখে দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ঐশীবাণী হয়- “হে মহাপূরুষ তুমি কার জমির ফসল খেয়ে নিলে বিনা অনুমতিতে”? বাবা তখন চিন্তায় পরে যান এবং খোঁজ করতে থাকেন জমির মালিকের। পরে তিনি সন্ধান পান ওই জমির মালিক ডাহিয়া এলাকার কালি পদ ঘোষ। বাবা তখন ব্যস্ত হয়ে তার বাড়িতে ছুটে যান এবং মাত্র একটি তিল খাওয়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বিনিময়ে তিনি ঘোষ বাড়িতে ১২ বৎসর কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ঘোষ সহজে ব্যাপারটা বুঝতে পারে যে ইনি সাধারণ কোনো মানুষ নন এবং শর্তানুসারে কাজে নিয়োগ করেন। তিনি ঘোষ মহাশয়ের বাড়িতে ঘাষ কাটার কাজে নিয়োজিত হয়ে ছিলেন। কালিপদ ঘোষের ছিলো দই এর ব্যবসা। তার বাড়িতে ছিলো অনেকগুলো দুধেল গাভী। প্রতিদিন বাবা নৌকা নিয়ে বের হতেন এবং ঘাস কেটে নৌকা বোঝাই করে ঘোষবাড়ি ফিরতেন। অনেকে তাকে দেখেছে সে নৌকাতে ঘুমাইতে। নৌকার এক পাশে থাকতো বাবার পা তো অন্যপাশে মাথা। এতোটাই গায়েবী শক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। এজন্যই তিনি পরবর্তীতে ঘাসী দেওয়ান নামে পরিচিত হন। তবে তার আসল নাম সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় নাই। ঘোষবাড়িতে ১২ বছর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করার পর তিনি কালিপদ ঘোষের থেকে বিদায় নিয়ে আবার বেরিয়ে পরেন অজানার উদ্দেশ্যে।
চলনবিলের মাঝে যেখানে বাবার মাজার অবস্থিত, সেই জায়গাটার পাশে ছিলো বিলের একটা পানির চক্র। যেখানে একবার পড়ে গেলে সেখান থেকে কেউ বের হতে পারতো না। মৃত্যু ছিলো অবধারিত। সেখান দিয়ে যাবার সময় তিনি দেখতে পেলেন, এক মরা গরু ভেসে যেতে। নৌকা থামিয়ে তিনি সেই মরা গরু থেকে কাঁচা মাংস খেতে শুরু করেন। ঘটনাচক্রে তখন মাজারের সেই জঙ্গলপূর্ণ ঢিবিতে বসে ছিলো দুই বালক। তাদের একজন ছিলো জেলের ছেলে, আরেকজন নাপিতের ছেলে। তারা ঘাসী দেওয়ান বাবার সেই মাংস খাওয়া দেখে দ্বিধায় পড়ে যায়। বাবার সাথে কথা বললে, তিনি তাদেরকেও সেই মাংস খেতে দেয়। আর তারাও নির্দিধায় তা খেয়ে নেয়। গায়েবী শক্তিবলে ঘাসী দেওয়ান বাবা এমন সব অসম্ভব কাজকে সম্ভব করতেন। তারপর থেকে সেই দুই বালক বাবার ভক্ত হয়ে যায়। মাজারে এখনো বাবার কবরের পাশে সেই দুই বালকের কবর বিদ্যমান। ঘাসী দেওয়ান বাবা তারপর সেই জঙ্গলে ভরা ঢিবিতে তার আস্তানা করেন এবং ক্রমশ সেইটা জনপ্রিয় হতে থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসতে শুরু করে বাবাকে এক পলক দেখার জন্য।
চলনবিলের মাঝে জায়গাটা এখনো বহুল জনপ্রিয় এবং হাজার হাজার মানুষ সেখানে যায় নিজেদের বিভিন্ন মনোষ্কামনা পূরণের আশায়।