দেওয়ানা-মদিনা : আলাল ও দুলালের কাহিনী
বাইন্যাচঙের দেওয়ান সোনাফর তার মুমূর্ষু স্ত্রীর পাশে বসে আছেন। সাথে তার দুই ছেলে– আলাল ও দুলাল। মৃত্যুশয্যায় সোনাফরের স্ত্রী সোনাফরকে অনুরোধ করলেন যেন তার মৃত্যুর পর তিনি আর বিয়ে না করেন। তার বিশ্বাস, সৎমা কখনও সৎ সন্তানদের ভালোবাসতে পারেন না। তাই আকাশ-বাতাস, পশুপাখি সকলকে স্বাক্ষী রেখে স্বামীর কাছে তিনি এই প্রতিজ্ঞা নিলেন এবং শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। এদিকে মায়ের মৃত্যুর পর আলাল-দুলাল তাদের মায়ের অভাবে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। সোনাফরও কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না যে, তার স্ত্রী নেই। ছেলেদের এমন দুরবস্থা দেখেও তিনি খুবই চিন্তায় পড়ে গেলেন। ধীরে ধীরে, সোনাফর দেওয়ানি থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। তার অনুপস্থিতিতে দেওয়ানি নষ্ট হতে বসেছে। তা দেখে তার উজির, নাজির সবাই মিলে অনুরোধ করলেন, তিনি যেন আরেকটি বিয়ে করেন। সোনাফর বললেন তিনি আরেকটি বিয়ে করলে, তার দ্বিতীয় স্ত্রী হয়তো তার সন্তাদের ঠিকমতন দেখবে না, কারণ, সৎ মা কখনও আপন হয় না।
উজির বললেন, “সব সতীন এক হয় না, আর আমরা তো আছি।” সোনাফর মনে মনে ভাবলেন, দেওয়ানি ছেড়ে দিলে ভবিষ্যতে আরও সমস্যায় পড়তে হবে। সাতপাঁচ ভেবে তাই তিনি বিয়ে করতে রাজি হলেন। কিন্তু মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন, আলাল-দুলালকে নিজের কাছেই রাখবেন, এতে সৎ মায়ের কোনো সাধ্য হবে না তাদের ক্ষতি করার। বিয়ের পর, সোনাফর আলাল-দুলালকে নিজের সাথেই রাখতেন। দেওয়ানিতে গেলেও তার সাথে নিয়ে যেতেন। কিছুতেই সৎ মায়ের কাছে রাখতেন না। এই দেখে সোনাফরের দ্বিতীয় স্ত্রী কিন্তু হিংসার আগুনে পুড়তে থাকেন। তিনি ভাবেন সতীনের এই কাঁটা দূর না করলে তিনি পুরোপুরি সুখী হবেন না।
তাই তিনি একদিন ছলনা করে কান্না শুরু করলেন। সেই হা-হুতাশী কান্না দেখে সোনাফর জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে নতুন কনে? কী এমন দুঃখ মনে?” তিনি বললেন, আলাল-দুলাল তো তারও সন্তান। কিন্তু তাদেরকে সোনাফর তার কাছে আসতে দেন না শুধুমাত্র তিনি সৎ মা বলে। আরও বলেন, সব সৎ মা তো এক হয় না। তাদের জন্য তার প্রাণ কাঁদে। আর এই অপমান থেকে মৃত্যু অনেক ভালো। তার এই অবস্থা দেখে সোনাফরের মন গলে যায় আর তিনি জানান যে, এখন থেকে আলাল-দুলালকে তার কাছেই দিয়ে যাবেন।
সোনাফর চলে যাওয়ার পর, দ্বিতীয় স্ত্রী ভাবলেন, কীভাবে আলাল-দুলালের বিশ্বাস অর্জন করা যায়। আর তাই, সারারাত ধরে অন্দরমহল সাজালেন আর নিজ হাতে রান্না-বান্না করলেন। আর সকালে যখন সোনাফর আলাল-দুলালকে নিয়ে আসেন, তার স্ত্রী তাদের বুকে টেনে সারা মুখে চুমু খেলেন। সারারাত ধরে নিজের হাতে তাদের খাওয়ান। এমন ভালোবাসা পেয়ে আলাল-দুলাল আর তাদের বাবার সাথে যেতে চায় না। দিন যেতে যেতে, সৎ মা তার ভালোবাসার অভিনয় করে যান আর মনে মনে এই কাঁটা সরানোর চিন্তা আঁটেন। সোনাফর এসব কিছুই বুঝতে পারেন না। তার ছেলেরা আদর-যত্নে আছে ভেবে সোনাফর দেওয়ানিতে মনোনিবেশ করেন। ছেলেদের জন্য আর দুশ্চিন্তাও করেন না। কিন্তু তিনি কি জানতেন, কী শয়তানি বুদ্ধি আঁটছেন তারই স্ত্রী? কেউই জানতো না।
তখন শ্রাবণ মাস, নৌকা বাইচ হচ্ছে। সৎ মা নৌকা বাইচ দেখতে আলাল-দুলালকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা রাজি হয়ে যায়। কিন্তু সৎ মার আসল উদ্দেশ্য ছিল, বাইচ দেখতে যাওয়ার বাহানায় গভীর জলে গেলে, ছেলে দুটিকে পানিতে ফেলে দেয়ার। তাই তিনি খবর দিলেন এক জল্লাদকে। তাকে পুরস্কারস্বরূপ ‘বিশ পুড়া জমি বাড়ি’র বিনিময়ে সেই ফন্দির কথা বললেন।
তারা দুজনে মিলে একটি চমৎকার ময়ূরপঙ্ক্ষী নৌকা বানালো। আর আলাল-দুলালকে সাজিয়ে-গুজিয়ে জল্লাদের সাথে সেই নৌকায় পাঠানো হলো। সেই অতি সুন্দর নৌকা যখন মাঝনদীতে আসলো, তখন জল্লাদ নিজের রূপ বের করলো। আলাল-দুলালকে প্রাণে মারার হুমকি দিলো।
“ইয়াদ কর আল্লার নাম মরণকালের আগে॥ তোমরার যম আমি দুয়ারেতে খাড়া। আমার হাতেতে দুইজন যাইবা যে মারা॥ অখনই মারিবাম পরে ডুবাইয়া দরিয়াতে।”
আলাল-দুলালা বেচারা দুই ছেলে জল্লাদের এই রূপ দেখে খুব ভয় পেয়ে গেলো। আর সৎ মায়ের এমন ছলনার কথা শুনে কেঁদে ফেললো। এদিকে আলাল তার ভাইকে খুবই ভালোবাসতো। তাই জল্লাদকে অনুরোধ করলো, “দুলালকে বাঁচিয়ে রেখে আমাকে মেরে ফেলুন।” এদিকে দুলালও কম যায় না। দুলালও একই অনুরোধ করলো। দুই ভাইয়ের মধ্যে এত ভালোবাসা দেখে পাষাণ জল্লাদের মনও গলে গেলো। তখন সে আর তাদেরকে মারার চিন্তা বাদ দিল। এর বদলে সেই নৌকারই পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বারো ডিঙা সাজানো এক সওদাগরের নৌকায় তাদের তুলে দিয়ে বললো, “ভালো থেকো বাবারা। নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়ে চলে যাও তোমরা।”
সেই সওদাগর কাজলকান্দা গ্রামের ইরাধর নামের এক ব্যাপারীর বাড়ি যাচ্ছিলো ধান কিনতে। কিন্তু কোনো ধান না কিনেই সে আলাল-দুলালকে সেখানে বিক্রি করে দেয়। দু'ভাই খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছিলো। একদিন বড় ভাই আলাল সেখান থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু দুলাল থেকে যায় ব্যাপারীর বাড়িতেই।
ধনুক দরিয়ার পাড়ে, বারো জঙ্গল তেরো ভূঁই অঞ্চলে তখন সেকান্দের নামে এক দেওয়ান বাস করতেন। তার পাখি শিকারের খুব নেশা ছিল। একদিন শিকার করতে গিয়ে তিনি গাছের নিচে দেখতে পেলেন আলালকে । আলালকে দেখে তার খুব ভালো লাগলো। তিনি তাকে সাথে করে বাড়ি নিয়ে গেলেন। আলাল সেখানে কাজ করতে থাকে কোনো মাইনে ছাড়াই। তাকে মাইনের কথা বললে, সে বলে, “এখন নেব না। সব মাইনে এ পরে নেব।” তার কাজে সবাই মুগ্ধ, এমনি সেকান্দরও। দেওয়ান সেকান্দেরের কোনো ছেলে ছিল না। তার ঘরে ছিল দুই অপরূপ সুন্দরী কন্যা। মমিনা ও আমিনা। তাই তিনি আলালকে নিজের ছেলের মতোই দেখতেন। দেওয়ানের মনে ইচ্ছে হলো, তার একটি কন্যার সাথে আলালের বিয়ে দিয়ে তাকে জামাই করে রাখবেন। কিন্তু আলালের বংশপরিচয় জানতে চাইলে সে একেবারে চুপ করে থাকে। তাই সেকান্দের তখন আর বিয়ে দিতে খুব বেশি আগ্রহী হলেন না।
এইভাবে একে একে কেটে গেল বারোটি বছর। এইবার আলাল তার সব বেতন একসাথে চাইলো। দেওয়ান সেকান্দের খুবই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এত টাকা দিয়ে একসাথে কী করবে আলাল?” আলাল তাকে জানায়, সে বাইন্যাচং নামের একটি শহরে বাড়ি করতে চায়। সে বেতনের বদলে ৫০০ শ্রমিক আর ২০০ ফৌজ চায়, যাতে করে সেখানের দেওয়ান সোনাফরের সাথে যুদ্ধ করে বাড়ি করতে পারে। দেওয়ান তার কথায় রাজি হয়ে দাবিমতো সবই তাকে দিয়ে দেয়।
এদিকে সোনাফর কিন্তু ততদিন বেঁচে নেই। দুই পুত্রকে হারানোর শোকে তিনি মারা গেছেন অনেক আগেই। মৃত্যুর আগে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে জন্ম নিয়েছিল এক পুত্রসন্তান। সেই ছেলেই এখন বাইন্যাচঙের দেওয়ান। তার উজির-নাজির, কেউই খুব একটা কাজের নয়। তাই বাইন্যাচঙের দেওয়ানি আগের মতো নেই, প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
আলাল ওদিকে ৫০০ কামলাকে বাড়ি বানাতে দিয়ে বাড়ির জমির আশেপাশে ২০০ ফৌজকে পাহারায় রাখলো। এই খবর পুরো বাইন্যাচঙে ছড়িয়ে গেল। সেখানকার উজির এসে এক চোট নিতে চাইলো। আলালের কাছে সে খাজনা চেয়ে বসলো। কিন্তু আলাল তো খাজনার ধার ধারে না, কারণ সে তার বাবার জায়গায় বাড়ি করতে এসেছে। এই কথা শুনে, বাইন্যাচঙের ফৌজ আর আলালের ফৌজদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে গেলো। যুদ্ধে অবশ্য আলালই জয়ী হলো। আর পরাজয়ের ভয়ে সোনাফরের দ্বিতীয় স্ত্রী, আলাল-দুলালের সৎ মা সেই রাতেই সব ছেড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান।
আলাল বাইন্যাচঙের দেওয়ানি দখল করে নিজের বাড়িতে পৌঁছালো। আর সেই ৫০০ শ্রমিক আর ২০০ ফৌজকে বিভিন্ন পুরস্কারে খুশি করে বিদায় দিল। এবারে দেওয়ান সেকান্দর বুঝতে পারলেন, আলাল বড় ঘরের ছেলে। তাই তিনি আনন্দিত মনে আলালকে তার দুটি মেয়ে থেকে একটিকে বিয়ে করতে বললেন। কিন্তু আলাল তক্ষুনি রাজি হলো, তার যে ভাইকে খুঁজতে যেতে হবে। সেই ভাই, যাকে সে ফেলে এসেছে বারোটি বছর আগে। তবে যাবার আগে দেওয়ানকে কথা দিয়ে গেল, ভাইকে নিয়ে আসার পরই দেওয়ানের মেয়েকে বিয়ে করবে সে।
দেওয়ানের বাড়ি থেকে বের হয়ে আলাল ছদ্মবেশ নিলো। এই ছদ্মবেশেই সে যাবে দুলালকে খুঁজতে। কিন্তু অনেক খুঁজেও ভাইকে না পেয়ে, ক্লান্ত হয়ে ঠাঁই নিলো এক বট গাছের নিচে। বটের পাশ দিয়ে তখন গান গাইতে গাইতে এক রাখালের দল হেঁটে যাচ্ছিল। ভাগ্যের কী আশ্চর্য লিখন! সেই গান ছিল আলাল আর দুলালেরই দুঃখের কাহিনী। আলাল ছেড়ে যাবার পর দুলালের ভাইয়ের জন্য শোকের গল্পগাথা। এই গানের সূত্র ধরেই আলাল খুঁজে পেলো তার ভাইয়ের ঠিকানা–
“এই গান যেই জন শিখাইল আমরারে। সে আইজ না আসিল গরু রাখিবারে॥ সেই না থাকয়ে এই গিরস্থ বাড়ীতে। তার কাছে গেলে তুমি যাও এই পথে॥”
আলাল দুলালকে তার সাথে বাইন্যাচঙে চলে যেতে বলে। দুলাল বলে, সে মদিনা নামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছে আর তার একটা সুরত জামাল নামে তার একটি ছেলেও আছে। সে বৌ-ছেলে ফেলে যাবে না। কিন্তু আলাল তার ভাইকে পরামর্শ দেয়। সে যেন মদিনাকে তালাক দিয়ে নিজের জাতের কাউকে বিয়ে করে। আর দুলাল ভাবে পৈতৃক খানদান বাঁচানোর কথা, দেওয়ানি বাঁচিয়ে রাখার কথা। তাই ভাইয়ের বুদ্ধিতে দুলাল এক নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত নিলো। মদিনার সাথে দেখা না করে সে তালাকনামা লিখে মদিনার ভাইর হাতে দিয়ে এল।এরপর তারা দু'ভাই বাইন্যাচঙে এসে দেওয়ান সেকান্দেরের দুই মেয়েকে বিয়ে করে। আলাল আমিনাকে আর দুলাল মমিনাকে। এদিকের সংসার ভালোই কাটতে থাকে।
ওদিকে মদিনা তালাকনামার চিঠি পেয়ে হাসতে থাকে এই ভেবে যে, দুলাল হয়তো তার সাথে ঠাট্টা করছে। দুলালকে মদিনা এতটাই ভালোবাসতো যে এমনটা সে মানতে পারছে না। দুলালের অপেক্ষায় সে কত না খাবার প্রস্তুত করে সেসব জমিয়ে রাখে, একদিন স্বামী ফিরে এলে খেতে দেবে– সেই আশায়।
“আইজ আসে কাইল আসে এই না ভাবিয়া। মদিনা সুন্দরী দিল কত রাইত গোঁয়াইয়া॥ আইজ বানায় তালের পিডা কাইল বানায় খৈ। ছিক্কাতে তুলিয়া রাখে গামছা-বান্ধা দৈ॥ শাইল ধানের চিড়া কত যতন করিয়া। হাঁড়ীতে ভরিয়া রাখে ছিক্কাতে তুলিয়া॥”
কিন্তু দুলাল তো আর ফিরলো না। কেটে গেল ছয় ছয়টি মাস। মদিনা তবু আশা করে, অন্তত ছেলে সুরত-জামালকে দেখলে তো ছেলের টানে দুলাল ফিরে আসবে। ছেলে তার চোখের মণি। এই কথা ভেবে মদিনা তার ভাইয়ের সাথে সুরত-জামালকে বাইন্যাচঙে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে গিয়ে তাদের দেখা ঠিকই হয় দুলালের সাথে, কিন্তু দুলাল তাদেরকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে। কারণ এ অঞ্চলে কেউ তাদের কথা জানে না। জানলে দুলালের খুব অপমান হবে, ঝামেলা হবে নতুন সংসারে। দুলাল তাদেরকে বলে দেয়, আর যেন এ অঞ্চলে পাও না মাড়ায়।
সব কথা শুনে মদিনা কেঁদে বুক ভাসালো। হলো ‘দেওয়ানা মদিনা’। কেন এমন হলো তার সাথে? পুরনো দিনের স্মৃতি মনে করে করে সে প্রায় পাগল হয়ে যায়। স্বামীর শোকে দিনে দিনে শুকিয়ে সে কঙ্কালসার হয়ে যায়। এভাবেই একদিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মদিনা। ছেলে সুরত-জামালের আর নিজের বলতে কেউ রইলো না যেন। মদিনাকে কবর দেয়া হলো বাড়ির পাশেই। ওদিকে অপমান করে বিদায় দিলেও মনে মনে দুঃখে আছে দুলাল। অনুশোচনা হচ্ছে তার। কাউকে না বলে তাই সে এবার বাইন্যাচঙ থেকে পালালো। হাঁটতে লাগলো কুজকান্দার পথ ধরে । যেতে যেতে তারও একে একে মনে পড়তে লাগলো সেইসব পুরনো দিনের কথা। তার পথে অলক্ষণের চিহ্ন দেখা যায়। কাক ডাকে, চিল ডাকে। দূর থেকে তাকিয়ে দেখে, তার মদিনার প্রিয় গাভীটি অসুস্থ আর দুর্বল হয়ে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে যেন তারই অপেক্ষায়। মনে কু ডাকলো। তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছে দুলাল দেখতে পেল, মদিনা সুন্দরী আর পৃথিবীতে নেই। তারই শোকে হয়েছে গত। মদিনার কবরের পাশে গিয়ে সে বুকফাটা কান্না করতে লাগলো। মাফ চাইলো প্রিয়তমা স্ত্রীর কাছে, যাকে সে বাজে চিন্তায় একসময় ছেড়ে গিয়েছিল।
“পরাণের মদিনা বিবি উঠ্যা কও কথা। আর নাই সে দিবাম আমি তোমার দিলে বেথা। তুমি যদি দেও দেখা মোর পানে চাইয়া। আর না রাখিবাম তোমায় বুকছাড়া কইরা॥”
এবার আলাল দুলালকে নিতে আসলেও সে আর বাইন্যাচঙে ফিরতে চায় না। সে বুঝতে পারলো, সোনা-দানার চেয়ে মনই আসল দৌলত। সে মদিনার কবরের পাশে একটি বাড়ি করে সেখানেই থেকে যায় তার শেষ সময়ের আশায়।
“ফকীর সাজিল দুলাল দেওয়ানগিরি থুইয়া॥ আর নাই সে গেল মিঞা বান্যাচঙ্গের সরে। আখের গণিয়া দেখে কয়বর উপরে॥ দুলালের কান্দনেতে পাথর গল্যা পানি। জালাল গাইনে গায় গীত দুঃখের কাইনী।”