The tale of Kalketu and Fullora

The tale of Kalketu and Fullora

Bengali Title

কালকেতু ও ফুল্লরার আখ্যান

Category
Bengali Folktale
Source

English

A long time before the Goddess Chandi became a household name in Bengal, she wasn't worshipped by anybody at all. However, Chandi longed for the adoration of people, so she decided to make Nilambor, the son of the mighty King of the Gods, Indra, her first devotee. Chandi spoke to her husband, Lord Shiva. They devised a plan to get Nilambor expelled from the divine realm. However, Shiva hesitated, uncertain about banishing someone who hadn't done anything wrong. Undeterred, Chandi crafted a clever scheme. One day, as Nilambor gathered flowers for his prayers, Chandi transformed into a bee and concealed herself among the petals. When Nilambor presented the flowers to Lord Shiva, the bee stung him. Enraged, Shiva cursed Nilambor and his wife out of heaven. The two were reborn as children in the human world, in separate hunter families. Nilambor became Kalketu, and his wife, Chaya, took on the name Fullora.

As Kalketu and Fullora were a match made in heaven, they were destined to be together on Earth as well. When they grew up, they eventually found each other and got married. Their life together was filled with happiness. Kalketu, a skilled hunter, had a spear so sharp that no forest creature, big or small, could escape it. One day, the frightened animals pleaded with Goddess Chandi for help. So, Chandi, ever scheming, decided to torment Kalketu in various ways. Each day, when he went hunting, a spell cast by Chandi made all the animals invisible to him. The couple found themselves in a dire situation, facing hunger every day. During one hunting trip, Kalketu spotted a lizard in front of him. Desperate to catch something, he seized the lizard, even though it was believed to bring bad luck. Returning home, he asked his wife, Fullora, to prepare the lizard while he went to the neighbors to gather some spices.

It turned out that the lizard was none other than the Goddess Chandi in disguise. Once Kalketu left, she changed into a stunning maiden and introduced herself to Fullora as Kalketu's newlywed wife. Fullora pleaded with her to go away, saying, "Please leave my husband alone. What will people say if they see you?" But Chandi refused to leave.

When Kalketu returned, he was astonished to find a beautiful woman in his house. Nevertheless, Kalketu remained faithful and asked her to depart. When she refused once again, Kalketu took out his bow and shot an arrow at her. In that moment, Chandi transformed back into her divine form and caught the arrow. The two mortals felt humbled in the presence of a Goddess. Chandi then made a promise to them, offering wealth beyond their wildest dreams if they agreed to worship her. To demonstrate her pledge, she materialized a pot overflowing with gold coins and presented it to Kalketu.

Initially doubtful, Kalketu took the pot of gold to a pawnbroker for inspection. The broker tried to trick him, claiming the coins were just bronze plated with gold. However, when Kalketu revealed the coins' divine origin, the broker quickly changed his tune, fearing the wrath of the Goddess. He confirmed the gold's purity and paid Kalketu in full.

Blessed by Chandi, Kalketu and Fullora became devoted worshippers, and in return, the Goddess bestowed upon them immense wealth. They cleared a large plot of land in the Gujarat forest, establishing their own kingdom. Their riches caught the eye of a con-man named Bharu Dutta, who tried to deceive them into making him their minister. When Kalketu refused, Bharu Dutta conspired with the King of the nearby Kalinga kingdom, leading to a war. Lacking experience in warfare, Kalketu lost, and the couple ended up in a dungeon, stripped of their wealth.

In their dire situation, Kalketu and Fullora prayed to Chandi for help. The Goddess intervened, appearing before the King of Kalinga and revealing Kalketu's true identity as the son of the almighty Indra. Fearing divine wrath, the King promptly released Kalketu and Fullora, restoring their kingdom. The couple lived a long and prosperous life as king and queen. Upon their eventual passing, they were reunited in heaven as Nilambor and Chaya.

বাংলা

ইন্দ্রপুত্র নীলাম্বর স্বর্গে বেশ সুখে দিন কাটাচ্ছিল। শিবের পুজোতে মননিবেশ করেছিলো নিজেকে। কিন্তু দেবী চণ্ডীর ইচ্ছে হয়েছে পৃথিবীতে তার পুজো প্রচারের। কিন্তু কে করবে তার পুজো প্রচার? চণ্ডী এ-কাজে মনে মনে নীলাম্বরকে মনোনীত করলো। চণ্ডী তার স্বামী শিবকে বললো, 'নীলাম্বরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দাও, সে পৃথিবীতে আমার পুজো প্রচার করবে'। শিব বললো, 'বিনা অপরাধে আমি তাকে কী ক’রে স্বর্গ থেকে বিদায় দিই?' চণ্ডী মনে মনে পরিকল্পনা আঁটলো, সে নীলাম্বরকে পাঠাবেই। একদিন শিবপুজোর জন্যে বাগানে ফুল তুলছিলো নীলাম্বর। চণ্ডী সেখানে গেলো, নিজেকে বিষাক্ত কীটে রুপান্তরিত করলো, এবং নীলাম্বরের তোলা ফুলে গোপনে লুকিয়ে রইলো। নীলাম্বর ফুল দিয়ে শিবপুজো করতে গেলে ফুলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কীট শিবকে দংশন করলো। কীটের কামড়ে শিউরে উঠলো শিব, অভিশাপ দিলো নীলাম্বরকে, "যাও, পৃথিবীতে গিয়ে জন্ম নাও শিকাররি হয়ে।" শিবের অভিশাপে দেবতা নীলাম্বরের সব দেবত্ব বিলীন হয়ে গেলো। বেচারির নিজের কোন অপরাধ ছিলো না, তবুও দৈব দয়ায় তাকে চলে আসতে হল এ কষ্টভরা পৃথিবীতে। সে জন্ম নিলো এক শিকাররির পুত্র হয়ে। অন্যদিকে তার স্ত্রী ছায়াও চ’লে এলো পৃথিবীতে অন্য এক শিকাররির কন্যা হয়ে। নীলাম্বরের নাম হলো কালকেতু, আর ছায়ার নাম হলো ফুল্লরা।

স্বর্গের দম্পতি নীলাম্বর-ছায়া পৃথিবীতে এসেও বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হলো। তারা দুজন বেশ সুখে দিন কাটাতে লাগলো। কালকেতু ছিলো অসাধারণ শিকারী, তার নিক্ষিপ্ত শরে প্রতিদিন প্রাণ হারাতে লাগলো সংখ্যাহীন বনচর পশু। ছোটখাটো দুর্বল পশুদের তো কথাই নেই, এমনকি বাঘ-সিংহরাও ভীত হয়ে উঠলো। বনে পশুদের বাস করা হয়ে উঠলো অসাধ্য। পশুরা ভাবতে লাগলো কী করে রক্ষা পাওয়া যায় এ-শিকারীর তীর থেকে। সব পশু একত্র হয়ে ধরলো তাদের দেবী চণ্ডীকে। বললো, বাঁচাও কালকেতুর তীর থেকে। চণ্ডী বললো, বেশ। শুরু হল চণ্ডীর চক্রান্ত। কালকেতুকে অস্থির করে তুললো নানাভাবে। কালকেতু জীবিকা নির্বাহ করে পশু মেরে। একদিন সে বনে গিয়ে দেখলো বনে কোন পশু নেই। চণ্ডী সেদিন ছল করে বনের পশুদের লুকিয়ে রেখেছিলো। সেদিন কালকেতু কোন শিকার পেলো না, না খেয়ে তাকে দিন কাটাতে হলো। পরদিন আবার সে তীরধনুক নিয়ে শিকারে গেলো। পথে দেখলো সে একটি স্বর্ণগোধিকা অর্থাৎ গুইসাপ। এ জিনিসটি অলক্ষুণে, তাই সে চিন্তিত হয়ে পড়লো, রেগে উঠলো কালকেতু। সে গুইসাপটিকে বেঁধে নিলো। মনে মনে ভাবলো, আজ যদি কোনো শিকার না মেলে তবে এটিকেই খাওয়া যাবে। সেদিন কোনো শিকার মিললো না তার। সে গুইসাপটিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে দেখলো তার প্রতীক্ষায় বসে আছে ফুল্লরা। কিছু রান্না হয় নি। গতকাল তারা খেতে পায় নি, আজো খেতে পাবে না। কালকেতুকে শিকারহীন ফিরে আসতে দেখে প্রায় কেঁদে ফেললো ফুল্লরা। কালকেতুকে বললো, 'এ গোধিকাটিকে আজ রান্না করো, পাশের বাড়ির বিমলাদের থেকে কিছু খুদ এনে রাঁধ, আমি হাটে যাচ্ছি।' এ বলে কালকেতু চলে গেলো।

তার পরেই এলো বিস্ময়, ঘটলো অভাবনীয় ঘটনা। গোধিকাটি আসলে ছিলো দেবী চণ্ডী। ফুল্লরা বিমলাদের বাড়িতে যেতেই সে এক অপরূপ সুন্দরী যুবতীর রূপ ধারণ করলো। বিমলাদের বাড়ি থেকে ফিরে এসে নিজের আঙ্গিনায় এক অপূর্ব সুন্দরী যুবতীকে দেখে অবাক হয়ে গেলো ফুল্লরা। সাথে সাথে হলো ভীতও। ফুল্লরা তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলো। দেবী চণ্ডী ছলনাময়ী, শুরু করলো তার ছলনা। সরলভাবে বললো, 'কালকেতু আমাকে নিয়ে এসেছে।' একথা শুনে ভয় পেলো ফুল্লরা। এতোদিন সে স্বামীকে নিয়ে সুখে ছিল, ভাবলো এবার বুঝি তার সুখের দিন ফুরোলো। ফুল্লরা অনেক বুঝালো যুবতীটিকে। বললো, 'তুমি খুব ভালো, তুমি খুব সুন্দরী। তুমি তোমার নিজের বাড়িতে ফিরে যাও, নইলে মানুষ নানা কথা বলবে।' কিন্তু যুবতী ফুল্লরার কথায় কোনো কান দিলো না। বললো, 'আমি এখানে থাকবো।' এতে কেঁদে ফেললো ফুল্লরা, দৌড়ে চলে গেলো হাটে কালকেতুর কাছে। বললো সব কথা। শুনে কালকেতুও অবাক। সে বাড়ি ফিরে এলো ফুল্লরার সাথে, এবং যুবতীকে দেখে অবাক হলো। কালকেতু বার বার তাকে বললো, তুমি চলে যাও। কিন্তু কোনো কথা বলে না যুবতী। তাতে রেগে গেলো কালকেতু, তীরধনুক জুড়লো, যুবতীকে সে হত্যা করবে। যখন কালকেতু তীর নিক্ষেপ করতে যাবে তখন ঘটলো আরো বিস্ময়কর এক ঘটনা। এবার দেবী চণ্ডী নিজের মুর্তিতে দেখা দিলো। সে আশ্চর্য সুন্দরী মেয়ে পরিণত হলো দেবী চণ্ডীতে। চোখের সামনে এমন অলৌকিক ব্যাপার দেখে ব্যাধ কালকেতু মুগ্ধ হয়ে গেলো। চণ্ডী বললো, তোমরা আমার পুজো প্রচার করো, আমি তোমাদের অজস্র সম্পদ দেবো, রাজ্য দেবো। রাজি হলো কালকেতু-ফুল্লরা। অবশ্য দেবীর কথা প্রথমে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে নি ফুল্লরা, কেননা এ ছিলো কল্পনার অতীত। দেবী সাথে সাথে সাত কলস ধন দান করলো। কালকেতু জীবনে সোনা দেখেনি। সে সোনা লাভের পর সোনা ভাঙ্গাতে যায় মুরারি শীল নামের এক বেণের কাছে। বেণে বেশ চালাক, কালকেতু বোকা। বেণে ভাবলো, দেখি না একটু বাজিয়ে যদি কালকেতুকে ঠকাতে পারি। তাই বেণে মুরারি শীল বললো- এ সোনারূপো নয়, পেতল। তুমি ঘষেমেজে উজ্জ্বল করে এনেছো। কালকেতু বললো, এ আমি দেবীর কাছ থেকে পেয়েছি। তখন বেণের টনক নড়ে। সে তো চিনেছে এ-সোনার মতো সোনা হয় না। তাই বেণে শেষে সোনা রেখে দেয়।

কালকেতু পরে গুজরাটে বন কেটে নির্মাণ করে বিরাট নগর। কালকেতু হয় গুজরাটের রাজা আর ফুল্লরা হয় রাণী। সেখানে ছিলো ভাড়ুদত্ত নামের এক দুষ্টু লোক। দুষ্টুরা মন্ত্রী হতে চায় চিরকালই, সেও এসে কালকেতুর মন্ত্রী হতে চাইলো। কালকেতু তাতে রাজি হলো না। এতে ভাড়ুদত্ত ক্ষেপে গেলো। সে চলে গেলো কলিঙ্গে, সেখানকার রাজাকে নানা কিছু বুঝিয়ে কালকেতুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাজি করালো। বেঁধে গেলো যুদ্ধ। কালকেতু আগে ছিলো ব্যাধ, এখন রাজা। সে যুদ্ধ জানে না। তাই যুদ্ধে হেরে গেলো, এসে পালিয়ে রইলো, বউয়ের পরামর্শ মতো, ধানের গোলার ভেতরে। কলিঙ্গরাজ তাকে বন্দী করে নিয়ে গেলো, কারাগারে কালকেতু স্মরণ করলো দেবী চণ্ডীকে। চণ্ডী কালকেতুর ওপর সব সময় সদয়, কেননা কালকেতু তার ভক্ত। দেবী কলিঙ্গের রাজাকে স্বপ্নে দেখা দিলো। বললো, কালকেতু আমার ভক্ত, তাকে মুক্তি দাও, তার রাজ্য ফিরিয়ে দাও। কলিঙ্গরাজ দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে মুক্তি দিলো কালকেতুকে, ফিরিয়ে দিলো তার রাজ্য। কালকেতু তার রাজ্য ফিরে এসে আবার রাজা হলো, রাজত্ব করতে লাগলো বেশ সুখে। ফুল্লরা তার সুখী রানী। অনেক দিন রজত্ব করে বৃদ্ধ হলো কালকেতু আর ফুল্লরা, এবং এক শুভদিনে মহাসমারোহে আবার নীলাম্বর-ছায়ারূপে ফিরে গেলো স্বর্গে।