The tale of Komola Shundori

The tale of Komola Shundori

Bengali Title

কমলা সুন্দরী

Category
Bengal Legend

Plot Summary

English

In the late 8th century, the vast Gauda Empire was beginning to fracture, giving rise to numerous smaller kingdoms. During this time, the ruler of Pundranagar was King Jayanta. A beloved and just ruler, adored by his subjects.

Meanwhile, King Vinayaditya Jayapira of Kashmir, having conquered several territories, set his sights on Gauda. His next target was Pundranagar. However, before launching an attack, he wanted to thoroughly assess the battlefield. Disguised and under the cover of night, he wandered through the city, unnoticed by anyone. As he moved through the streets, he carefully observed and assessed the state of the kingdom, preparing for the battle ahead.

As Jayapira wandered through the city, he eventually found himself in the courtyard of the Skandhamandir. There, a dance was taking place, captivating everyone around. And why wouldn’t they be mesmerized? It was the performance of Kamala Shundori, the most renowned dancer in the kingdom.

“Come, see for yourselves...

Kamala dances, pausing with grace!”

Jayapira joined the crowd, watching intently. The sound of anklets resonated with the rhythm of the dance, echoing in the air. At one point, the anklets stopped. Kamala, the dancer, prepared a betel leaf and offered it to Jayapira. The regal manner of a king in which he accepted it, even in disguise, betrayed his true identity. Jayapira took the betel leaf from her hand with the grace of a king. In that instant, Kamala realized who he truly was. Yet, she said nothing. The first sight of Jayapira had captivated her so deeply that she couldn’t bring herself to put him in danger.

That very night, they met in secret. Kamala's love for her kingdom was boundless, yet Jayapira was the enemy of that very land. But how can the heart be restrained? Their love blossomed like a full moon illuminating the sky of Pundranagar. Kamala, the dancer, found herself caught in a painful dilemma, torn between her love for her country and her love for Jayapira. It was a situation where loss and sorrow awaited on both sides. What could she do? She was at a loss. All she could do was gaze into Jayapira's eyes and hear the ancient melody of anklets echoing in her heart.

What a twist of fate! Just as Jayapira entered the kingdom, it was besieged by a ferocious lion. The beast terrorized everyone, young and old alike, with daily casualties. The fear of the lion had paralyzed the kingdom; no one dared to move freely for fear of being taken by the beast. With no solution in sight, King Jayanta made a proclamation: whoever could slay the lion would be granted the hand of the princess in marriage.

Jayapira hasn't yet heard of this news. To save both the kingdom and Jayapira himself, Kamala devised a plan. She approached Jayapira and said, “There is no one in this kingdom who can defeat the lion except you. You are a noble king—please save my country from the beast!” Unable to ignore Kamala’s plea, Jayapira agreed to help. His intention was to deal with the lion swiftly and then return home as soon as possible.

Jayapira quickly subdued the lion, but he was astonished when Kamala threw a ring with his name engraved on it at the lion’s face. With a wry smile, Jayapira remarked, “So this is how you plan to reveal the enemy?” Kamala didn’t respond; she simply cried and wept. Seeing her distress, Jayapira’s heart softened. That night, he chose not to return to his own kingdom.

By morning, the kingdom was in uproar. The news spread far and wide— the lion had been slain! The brave hero who had defeated the beast was none other than ‘King Jayapira of Kashmir.’ The king, overjoyed, summoned Jayapira and honored him with his daughter’s hand in marriage. The night in Pundranagar turned into a grand celebration, filled with music and revelry.

In the courtyard of the Skandhamandir, not a single lamp was lit. The dancer’s anklets were silent, and she lay in a disheveled state. Both the kingdom and love were saved, but Kamala Shundori’s heart was broken. Although Jayapira later came to visit her, it is said that on that day, in the Skandhamandir, Kamala placed a garland around Jayapira’s neck.

Two miles south of Mahasthangarh, on the west bank of the Karatoya River, lies the Skandhamandir. Though now in ruins, with no remnants of its original bricks, stones, or carvings, the site is still known by names like ‘Skandher Dhap’ or ‘Kartik’s Dhap’. The significance of this place is mentioned in texts such as ‘Karatoya Mahatmya’ and ‘Rajatarangini’. Historically, the temple was a venue for dance and music performances, and many historians believe that some of Bengal’s earliest plays were staged here.

বাংলা

৮ম শতাব্দীর শেষ দিকের কথা। বিশাল গৌড় সাম্রাজ্যে ভাঙন ধরে তখন চারিদিকে ছোট রাজ্যের উত্থান ঘটেছে। এসময় পুন্ড্রনগরের হর্তাকর্তা ছিলেন রাজা জয়ন্ত। প্রজাদরদী রাজাকে প্রজারাও খুব ভালোবাসতো।

ওদিকে একের পর এক রাজ্য জয় করে এবার গৌড়ের দিকে এগিয়ে আসছেন কাশ্মীররাজ বিনয়াদিত্য জয়াপীর। তিনি পুন্ড্রনগরে ঢুকলেন রাজ্য দখল করে নিতে। কিন্তু আক্রমণের আগে একটু যুদ্ধের ক্ষেত্রটা ভালো করে বুঝে নিতে চান। তাইতো রাতের অন্ধকারে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন ছদ্মবেশে। কেউই তাকে চিনতে পারছে না। তিনিও রাজ্যের হালচাল বুঝে যাচ্ছেন।

এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে জয়াপীর এসে দাঁড়ালেন স্কন্ধমন্দিরের আঙিনায়। সেখানে নাচ হচ্ছে, আশেপাশের সবাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই নাচ দেখছে। দেখবে নাইবা কেন? এ যে রাজ্যের সবচাইতে নামিদামি নর্তকী কমলা সুন্দরীর নাচ।

“তোমরা দেখো গো আসিয়া… কমলায় নৃত্য করে থমকিয়া থমকিয়া!”

জয়াপীরও যোগ দিলেন তাদের সাথে। নাচের মুদ্রার সাথে ঘুঙুর বাজছে, বেজেই চলেছে। এমন এক সময় ঘুঙুর থামলো। নর্তকী এক খিলি পান সাজিয়ে তা তুলে দিলেন জয়াপীরের হাতে। রাজার স্বভাব, ছদ্মবেশেও তা চাপা পড়লো না। রাজার মতোই তার হাত থেকে পান নিলেন জয়াপীর। ব্যস! কমলা বুঝে গেল তার আসল বেশ। যদিও কাউকে বললো না সে। এক দেখাতেই জয়াপীরকে এত ভালো লেগেছে, তাকে বিপদে ফেলতে চায় না কমলা।

সেই রাতেই চুপি চুপি দেখা করলো তারা দুজনে। কমলার তার রাজ্যের প্রতি ভালোবাসার কোনো হিসেব নেই, এদিকে জয়াপীর সেই রাজ্যেরই শত্রু। তবু মন কি আর বারণ মানে? দুজনের মধ্যে ভালোবাসা যেন পুন্ড্রনগরের আকাশে সেদিন পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে আলো ছড়ালো। আর নর্তকী কমলা ফেঁসে গেল দেশপ্রেম ও ব্যক্তিপ্রেমের মাঝখানের এক শাঁখের করাতে। দুদিকেই লোকসান, দুদিকেই হারানোর বেদনা। কী করবে সে? কিছুই জানে না। শুধু জয়াপীরের চোখের দিকে তাকিয়ে সে শোনে এক আদিম ঘুঙুরের বাজনা।

ভাগ্যের কী লিখন, জয়াপীর যখন এ রাজ্যে ঢুকেছেন, ঠিক সেই সময়টাতেই রাজ্য জুড়ে এক বলশালী সিংহের দাপট। ছেলেবুড়ো সকলেই প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে। সিংহের ভয়ে রাজ্য জুড়ে কেউ ভালোমতো চলতে ফিরতে পারে না– পাছে পশুরাজ খাজনা মনে করে প্রাণখানা নিয়ে চম্পট মারে! এ বিপদের কোনো সমাধান না পেয়ে রাজা জয়ন্ত ঘোষণা করে দিলেন, যে এই সিংহকে বধ করতে পারবে– তার সাথেই দেবেন রাজকন্যার বিয়ে।

জয়াপীরের কানে এই খবর এখনো যায়নি। দেশ ও জয়াপীর, উভয়কে বাঁচাতে কমলা এক ফন্দি আঁটলো। জয়াপীরকে গিয়ে সে বললো, “এই সিংহকে মারতে পারে এমন লোক এ রাজ্যে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। আপনি সদয় রাজা, সিংহের হাত থেকে আমার দেশকে রক্ষা করুন!” কমলার কথা তো ফেলতে পারে না, তাই জয়াপীর এগিয়ে গেলেন। তার ইচ্ছে, সিংহ বধের পরই সাততাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাবেন।

সিংহকে কাবু করতে তার বেশি সময় লাগলো না। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, কমলা তার নাম লেখা আংটিখানা সিংহের মুখে ছুঁড়ে মারলো। তখন বাঁকা হাসি হেসে জয়াপীর বললেন, “এই বুঝি দেশের শত্রুকে ধরিয়ে দেবার বুদ্ধি?” কমলা তার জবাবে কিছুই বললো না, শুধু কেঁদে বুক ভাসালো। এই দেখে জয়াপীরেরও মায়া হলো। সে রাতে তিনি আর নিজের রাজ্যে ফিরে গেলেন না।

সকাল হতেই ধুন্ধুমার অবস্থা। রাজ্যজুড়ে শোরগোল, সিংহ মারা পড়েছে! সিংহ বধ করেছে যে সাহসী বীর, তার খোঁজও মিলেছে। সে আর কেউ নয়, ‘কাশ্মীররাজ জয়াপীর!’ এবার আর কী– রাজা খুঁজে আনলেন আরেক রাজাকে। মনের খুশিতে মেয়ে কল্যাণ দেবীর হাত তুলে দিলেন জয়াপীরের হাতে। বিয়ের বাদ্যি-বাজনায় রোশনাই হলো পুন্ড্রনগরের রাত। ওদিকে স্কন্ধমন্দিরের আঙিনায় একটিও বাতি জ্বলেনি। নর্তকীর পায়ে আজ ঘুঙুর নেই। এলো কেশে সে লুটিয়ে রয়েছে। দেশ ও প্রেম– দুটোই বাঁচলো। শুধু মন ভাঙলো কমলা সুন্দরীর। যদিও পরে একবার জয়াপীর এসেছিলেন তার সাথে দেখা করতে। শোনা যায়, এই স্কন্ধমন্দিরেই কমলা সেদিন মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন জয়াপীরের গলায়।

মহাস্থান থেকে দুই মাইল দক্ষিণে এগিয়ে গেলে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে পাওয়া যাবে স্কন্ধমন্দির। যদিও মন্দিরের ইট-পাথর, নকশা কিছুই নেই। এখন আছে শুধু ধ্বংসাবশেষ। অনেকে একে ‘স্কন্ধের ধাপ’ বা ‘কার্তিকের ধাপ’ নামেও চেনে। ‘করতোয়া মাহাত্ম্য’ ও ‘রাজতরঙ্গিনী’ – এই দুই বইতে এ স্থানের কথা পাওয়া যায়। এই মন্দিরটিতে প্রায় সন্ধ্যাতেই নাচগানের আসর বসতো। অনেক ঐতিহাসিকের মতে, বাংলার প্রথম নাটকগুলোও এখানেই মঞ্চায়িত হতো।