কুসুম বিবির পালা
Plot Summary
English
It was a long time ago. In the city of Rome, there lived a childless king named Sher Shah. He had not one, but seven queens in his palace. The youngest of these queens was named Kusum. When this youngest queen became pregnant, the king’s affection for her grew significantly. Because of this, the other six queens could not tolerate Kusum. During childbirth, the senior queen conspired with the midwife and secretly replaced Queen Kusum's baby with a wooden doll, making it seem as though Kusum had given birth to the doll. The real baby was taken to the senior queen's chambers. The queen immediately commanded the midwife, “Take this child away from my sight and kill it with a sharp weapon.” However, the midwife, filled with compassion, couldn’t bring herself to kill the child. Instead, she decided to leave the kingdom and take the baby to another land, sparing its life. Meanwhile, in the town of Shyamsundar, the vizier Kalander also had no children. The midwife, carrying the baby, went to Kalander’s house and offered to sell the child. The midwife told the vizier, “The baby has no father, and the mother passed away during childbirth. The child is now my responsibility—but I am unable to raise it on my own.” After hearing everything, the vizier went to discuss the matter with his wives. The vizier's wives said, "We can keep the baby on one condition—buy us a milking cow! The child will drink its milk and will not suffer any harm." The midwife and the vizier both agreed to this proposal. Soon after, the vizier made a grand announcement throughout the kingdom, with drums beating and fanfare, proclaiming that he had a newborn son. Meanwhile, a servant named Kalu went to inform Sher Shah that his youngest queen, Kusum, had given birth to a wooden doll. The king, refusing to believe this, first went to hear from his six elder queens. Each of them, one by one, confirmed the story. Angered by what he heard, the king imprisoned Queen Kusum and declared that the matter would be judged the following morning in the royal court. The next morning, Queen Kusum was brought to the royal court in chains. In the court, she pleaded, "It was no wooden doll; a son was born to me—known to all, friend and foe alike. My son’s name is Askhan, and the heavens would split open for him." However, since the child was not present, the king berated her. Kusum fell at her husband's feet, begging for mercy. But the king, still enraged, stripped her of her eight ornaments and left her in disgrace. Then the king commanded Kaloo to cut Kusum's hair, pour mud over her head, and hang the wooden doll around her neck, while pushing her out of the kingdom. Along with that, the king also ordered that Queen Kusum be banished to the forest for twelve years. As per the king's orders, this was carried out. The queen was sent deep into the forest. Kusum walked through the forest, and as night fell, she began to feel afraid—thinking that a tiger would eat her in this dense jungle. Then she saw a flickering light a little distance ahead. She thought to herself, “I’ll spend the night there and leave in the morning.” Kusum approached the house and pleaded with the homeowner to allow her to stay for one night. The homeowner agreed but set one condition: she must leave before dawn. After spending the night there, Kusum set out at first light toward her parents' home. Upon arriving, she embraced her mother and, in tears, recounted everything that had happened during her banishment. But Kusum's father did not allow her to enter the house. Ironically, she was now a queen in distress, with nowhere to go. With no other option, she went to her brother's house, but there too, she found no refuge and was driven away. Heartbroken, Kusum retreated into the forest, crying out the name of her newborn son, Askan. In the forest lived countless tigers, and upon hearing the name Askan, they compassionately built her a small hut from palm and bel leaves for shelter. Kusum managed to survive by begging for food, making do with whatever little she could gather each day. Before long, twelve years passed—twelve winters and twelve springs. But could a mother ever forget her child? One day, while going to school through the forest path, little Askan happened to see Kusum. Upon seeing her, he called out from the depths of his heart, "Mother!" With the pain of being separated from her son, Kusum replied, "Come, my child, drink your mother's milk." Askan continued to drink Kusum's milk with unending satisfaction, and meanwhile, the school hours came to an end. After finishing his meal, Kusum asked Askan for food and inquired about his lineage. Askan promised her that he would find out from his mother and would return with food as well. Askan, upon asking the midwife about his true lineage, learned the entire story. Crying, he returned to the forest to meet Kusum. After twelve years, the mother and son were reunited, both overwhelmed with emotion. Then, Askan took his mother, Kusum, to the court of King Sher Shah. There, all the hidden truths from the years were revealed, and King Sher Shah sentenced the elder queen to death, deeply regretting her actions. Finally, everyone was reunited. King Sher Shah began to rule the kingdom happily with Queen Kusum and their son, Askan. Thus, the tale of Queen Kusum came to an end.
বাংলা
সে অনেককাল আগের কথা। রোম শহরে তখন বাস করতেন শেরশাহ নামে এক নিঃসন্তান বাদশা। তার মহলে আবার একটি নয়, ছিলেন একে সাতটি রানি। সবচেয়ে ছোট যে রানি, তার নাম ছিল কুসুম। নিঃসন্তান বাদশার ঘরের এই ছোট রানি যখন গর্ভবতী হলেন, তখন তার প্রতি বাদশার আদর অনেক বেশি বেড়ে গেল। বাকি ছয় রানি এজন্য কুসুমকে সহ্য করতে পারতেন না। সন্তান প্রসবকালে বড় রানি দাইমার সঙ্গে চক্রান্ত করে বিবি কুসুমের বাচ্চার জায়গায় রেখে দেন একটি কাঠের পুতুল- যেন কুসুমই সেই কাঠের পুতুল প্রসব করেছেন। আর বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়া হলো বড় রানির মহলে। রানি দাইমাকে তক্ষুনি আদেশ করলেন, “এই শিশুকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাও, তাকে হত্যা করো কোনো ধারালো অস্ত্রের ঘায়ে”। কিন্তু দাইমার মনে ছিল অনেক মায়া। তিনি শিশুটিকে হত্যা না করে, তাকে নিয়ে রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।
ওদিকে, শ্যামসুন্দর নগরের উজির কলেন্দরের ঘরেও কোনো সন্তান নেই। দাইমা শিশুটিকে নিয়ে কলেন্দরের বাড়িতে গিয়ে শিশু বিক্রির প্রস্তাব জানান। দাইমা উজিরকে বলেন, “শিশুটির বাবা নেই, আর প্রসবকালেই মা মারা গেছে। শিশুটির দায়িত্ব এখন আমার– কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না একে মানুষ করা।” সবটা শুনে উজির তার উজিরানীদের সঙ্গে আলাপে যান। উজিরানীরা বলেন, “বাচ্চা রাখতে পারি এক শর্তে– কিনে দাও দুগ্ধবতী গাভী! সেই দুধ খাবে শিশু, হবে না কোনো ক্ষতি।” এ প্রস্তাবে দাইমা সহ উজির রাজি হয়ে যান। এদিকে ঢাকঢোল পিটিয়ে উজির পুরো রাজ্যে ঘোষণা দেন, তার পুত্রসন্তান হয়েছে।
এদিকে কালু নামের এক দাস গিয়ে শেরশাহকে খবর দিলো, তার ছোট বেগম কুসুম একটি কাঠের পুতুল প্রসব করেছে। বাদশা সেকথা বিশ্বাস না করে প্রথমে তার বড় ছয় বেগমের কাছে শুনতে যান। তারা সকলেই এক এক করে জানায়, কথাটা সত্যি। বাদশা একথা শুনে রেগে গিয়ে রানি কুসুমকে বন্দী করে রাখেন আর রাজ্যময় ঘোষণা করেন, পরদিন সকালে রাজসভায় এর বিচার হবে।
পরদিন সকালে কুসুমকে শিকলে বেঁধে রাজসভায় নিয়ে যাওয়া হয়। কুসুম রাজসভায় বললো, “নয় কোনো কাঠের পুতুল, জন্মেছিল এক পুত্র– জানে সকল শত্রুমিত্র। আসকান নামের ছেলে আমার, আসমান ফাটে তার জন্য।” কিন্তু শিশুটি কাছে না থাকায় বাদশার তিরষ্কার শুনতে হলো কুসুমকে। কুসুম স্বামীর পায়ে পড়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করলো। কিন্তু বাদশা কুসুমের গায়ের অষ্ট-অলংকার কেড়ে নিলেন। তারপর কালুকে বললেন কুসুমের চুল কেটে- মাথায় ঘোল ঢেলে, সেই কাঠের পুতুল গলায় ঝুলিয়ে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করতে। সেইসাথে বাদশা বিবি কুসুমকে ১২ বছর বনবাসের আদেশও দিলেন। বাদশার আদেশ অনুযায়ী সেটাই করা হলো। বিবিকে পাঠানো হলো গহীন বনে।
কুসুম বনে হাঁটতে হাঁটতে রাত নেমে এলো, তার মনে ভয় হলো- এবার এই ঘন জঙ্গলে তাকে বাঘে খেয়ে ফেলবে। তখন সে কিছুদূর সামনে টিমটিম করে একটি আলো জ্বলতে দেখতে পেলো। ভাবলো, আজকের রাতটা ওখানে কাটিয়ে কাল সকালে চলে যাবো। কুসুম বাড়িটির সামনে গিয়ে বাড়িওয়ালাকে একটা রাত থাকার জন্য প্রার্থনা করে। বাড়িওয়ালা রাজি হয় একটি শর্তে। সে যেন ভোর হবার আগেই আবার এখান থেকে চলে যায়। কুসুম সেখানে রাতটা কাটিয়ে ভোরে রওনা হলো তার বাবার বাড়ির উদ্দেশে। সেখানে পৌঁছে কুসুম তার মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে তার বনবাসে আসার সব কথা খুলে বললো। কিন্তু কুসুমের বাবা মেয়েকে বাড়িতে উঠতে দিলেন না। ভাগ্যের পরিহাসে নিরুপায় আজ বাদশার বেগম! কী আর করা, তখন সে যায় তার ভাইয়ের বাড়িতে। কিন্তু হায়, কিন্তু সেখানেও কুসুমের জায়গা হলো না। বিতাড়িত হলো সে। তখন মনের দুঃখে বনের মধ্যে চলে গেলো কুসুম বিবি। বনে গিয়ে কুসুমের প্রসব করা সন্তান আসকানের নাম বলে কাঁদতে লাগলো। বনে ছিলো নয় লক্ষ বাঘ, তারা আসকানের নাম শুনে সেখানে কুসুমকে তালপাতা, বেলপাতা দিয়ে ছোট কুঠুরি বানিয়ে দিলো থাকার জন্য। আর কুসুম ভিক্ষা করে যেটুকু পেতো, তা দিয়েই কোনোভাবে দিন কাটতো।
দেখতে দেখতে বারো বছর পার হলো– বারো শীত, বারো বসন্ত। কিন্তু নাড়ির টান কি ভোলা যায়? একদিন বনের পথ দিয়েই বিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছিল ছোট্ট আসকান। বনের মধ্যে কুসুমের দেখা পেলো সে। কুসুমকে দেখেই মন থেকে তার ডাক বের হলো, “মা!” পুত্রহারা মায়ের ব্যথা বুকে নিয়ে কুসুম তাকে বলে, “এসো বাবা, মায়ের দুধ খেয়ে যাও”। আসকান অবিরাম ধারায় তৃপ্তি নিয়ে কুসুমের দুধ পান করতে লাগলো, আর এদিকে স্কুলের সময় শেষ হয়ে গেলো। দুগ্ধপান শেষে, কুসুম আসকানের কাছে খাবার প্রার্থনা করে এবং তার জন্মপরিচয় জানতে চায়। আসকান তাকে প্রতিশ্রুতি দেয়, সে তার মার থেকে জেনে এসে বলবে আর সঙ্গে খাবারও নিয়ে আসবে।
আসকান সেই দাইমাকে তার আসল জন্মপরিচয় জিজ্ঞেস করলে দাইমা তাকে সব কথা বলে দেয়। আসকান কাঁদতে কাঁদতে চলে যায় সেই বনে, কুসুমের কাছে। বারো বছর পর মা-ছেলের দেখা হয়ে দুজনেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। তারপর আসকান, তার মা কুসুমকে নিয়ে চলে যায় বাদশা শেরশাহের দরবারে। সেখানে এত বছরের লুকোনো সব সত্য প্রকাশিত হয় এবং বাদশা শেরশাহ বড় রানির মৃত্যুদণ্ড দেন। তিনি তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেন।
অবশেষে সবার মিলন হয়। বাদশা শেরশাহ বিবি কুসুম ও পুত্র আসকানকে নিয়ে সুখে রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। এখানেই শেষ হলো কুসুম বিবির পালা।