The tale of Molua

The tale of Molua

Bengali Title

মলুয়ার পালা

Category
Bengali Folktale
Source

Plot Summary

English

At that time, the country was going through an unseasonal period of rain. The autumn paddy was being destroyed by the downpour. During this time, a widow and her son, Chand Binod, were struggling to survive. In search of some extra income, Binod took up hunting kites or eagles. One day, he went to the pond bank in the village of Aralia to hunt kites. As he became exhausted while hunting, he sat under a tree to rest and soon fell asleep. Evening was approaching then. At that moment, Molua, the young daughter of the village chief in Aralia, came to the riverbank to fetch water. As Binod slept, evening approached.   "Who are you, sleeping alone by the riverbank?"   The sister of seven brothers, Molua, came to fetch water,   While the young man lay alone at the water's edge. Seeing him lying under the tree, her heart filled with compassion. She thought, "If his sleep breaks in the middle of the night, where will this foreign traveler go?" Molua wondered where this young man would stay during the night. So, she tapped her water pitcher to make a sound, hoping the noise would wake him from his slumber. Binod awoke to find a beautiful young woman standing before him in the dim evening light. Her beauty seemed to brighten the surroundings like the evening lamp. Seeing her, Binod was both astonished and enchanted. He asked, "Whose daughter are you—whose woman—where is your home?" In response, Molua revealed her identity. Upon learning her identity, Binod surrendered his heart to her. Expressing his deep affection, he said, "I’ve left my soul here at this riverbank!" On the other hand, the young woman Molua was no less captivated. She, too, had fallen for Binod. Seeing his moon-like beautiful face, a wave of spring passed through her heart. She thought to herself: "A foreign man, like the moon I see,   Blushes bloomed on the maiden's youth, tender and free." Enchanted by Molua's beauty, Binod expressed his desire to marry her and sent a matchmaker to her home through his mother. However, this is where the trouble began. Molua’s father objected to the marriage because of Binod's poor status. Although he initially refused, he later agreed. Binod married Molua, and she moved to his home. There, her beauty caught the lustful eyes of the local kazi, who became infatuated with her. The kazi tried to tempt her, saying, "Seeing your beauty, the kazi has become obsessed. I will fill your body with pure gold." In protest, Molua boldly replied, "My husband isn't home, or I would tell you—if he were, I’d strike your cunning head with a broom!" The furious kazi, determined to control Molua, began persecuting Binod. He auctioned off Binod's property and issued a warrant in his name. He demanded a dowry for the marriage and threatened to confiscate their home and land. Despite her family’s dire situation, Molua remained steadfast in her resolve. Binod, feeling weakened by the pressure, asked Molua to return to her father’s house. But Molua dismissed the idea and firmly told Binod: "Even if I eat simple greens and rice, and live under a tree,   At the end of the day, seeing your face will make me happy." The furious kazi, determined to control Molua, began persecuting Binod. He auctioned off Binod's property and issued a warrant in his name. He demanded a dowry for the marriage and threatened to confiscate their home and land. Despite her family’s dire situation, Molua remained steadfast in her resolve. Binod, feeling weakened by the pressure, asked Molua to return to her father’s house. But Molua dismissed the idea and firmly told Binod: "Even if I eat simple greens and rice, and live under a tree,   At the end of the day, seeing your face will make me happy." Molua continued to endure extreme hardship. One day, Binod returned home after earning some money abroad, and their once happy life resumed. Days were going well, but the kazi still couldn't forget Molua. Upon hearing of Binod's return, the kazi sought to intensify the pressure on Molua and enlisted the local Dewan to help. The Dewan, following the kazi's orders, plotted to torture Binod and have him buried alive. Upon learning of the plot, Molua summoned her five brothers using their trained kites, and they rescued Binod. Though Binod was freed, the kazi's men captured Molua and presented her as a gift to the Dewan. When the Dewan expressed his desire to marry her, Molua, holding firm to her principles, told him about a vow she had taken and asked him to wait for three months. Molua endured all the sorrows, hardships, and suffering in her life with a smile, thanks to Binod's love. However, even after escaping from the Dewan's control, Binod's relatives questioned her chastity. Furthermore, influenced by their words, Binod also began to doubt Molua, accusing her of being unworthy to join the family after spending three months in another man's house. Eventually, Binod abandoned her, and their society refused to accept her as well. Though Molua's brothers wanted to take her away, she remained in Binod's home, like a servant. Meanwhile, Binod remarried. One day, when Binod was bitten by a snake, Molua took him to a healer and saved his life. Witnessing this, all the neighbors urged Binod to bring Molua back into his home. In the east, a storm roared fiercely.   There are no shores, no landing places by this sea.   “Let it sink, let it sink, how much farther can it go?   As I drown, I see how far the underworld is.”   The storm raged fiercely in the east,   Where did the beautiful girl, the boat of the mind and heart, go?   Thus ends the tale of Molua,   A tragic story from the Mymensingh Gitika

বাংলা

তখন দেশে অকালবৃষ্টির কাল চলছে। বৃষ্টিতে হেমন্তের ধান নষ্ট হয়ে যায়। সে সময় এক বিধবা ও তার সন্তান চাঁদ বিনোদ খুব কষ্টে তাদের দিনকাল কাটাচ্ছিল। এভাবে যেতে যেতে বিনোদ একটু বাড়তি রোজগারের আশায় কুড়া বা ঈগল পাখি শিকার শুরু করে দেয়। একদিন আড়ালিয়া গ্রামের এক পুকুর ঘাটে কুড়া শিকারের জন্য বিনোদ সেখানে যায়। সে শিকার করতে গিয়ে খুব ক্লান্ত হয়ে গেলে সেখানে একটা গাছের নিচে বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তখন সন্ধ্যার সময় নেমে আসছে এমন। সেই সময়ে নদীর ঘাটে, আড়ালিয়া গ্রামের মোড়লের যুবতি কন্যা মলুয়া জল নিতে আসে।

ঘুমাইতে ঘুমাইতে বিনোদ অইল সন্ধ্যাবেলা। “ঘাটের পারে নিদ্রা যাও কে তুমি একেলা॥” সাত ভাইয়ের বইন মলুয়া জল ভরিতে আসে। নাগর শুইয়া একলা জলের ঘাটে॥

তাকে গাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখে তার মায়া হয়। সে ভাবে, "যাত্রি নিশাকালে যদি ভাঙ্গে নিদ্রা তার, ভিনদেশী পুরুষ বল যাইবে কোথায় আর?" মলুয়া ভাবে, রাতে এই যুবক কোথায় থাকবে? তাই সে তার কলসির জল দিয়ে আওয়াজ করে। যাতে এই আওয়াজে যুবকের ঘুম ভেঙে যায়। বিনোদ ঘুম থেকে উঠে দেখে, সন্ধ্যার আলো-আঁধারে তার সামনে এক সুন্দরী যুবতী দাঁড়িয়ে আছে। কন্যার রূপ যেন সন্ধ্যাবাতির মতোই তার আশপাশ আলো করে আছে। তাকে দেখে বিনোদ একইসাথে অবাক ও মুগ্ধ হয়। বিনোদ মলুয়াকে জিজ্ঞেস করে,"কার বা নারী– কার বা কন্যা– কোথায় বাড়িঘর?" মলুয়াও প্রতিউত্তরে তার পরিচয় দেয়। পরিচয় জেনে নিয়ে মলুয়ার কাছে বিনোদ নিজের হৃদয় সমৰ্পণ করে। হৃদয়ের আকুতি জানিয়ে সে বলে, "পরাণ রাখিয়া গেলাম এই না নদীর ঘাটে!" অন্যদিকে, যুবতি মলুয়াও কম যায় না। সেও যে বিনোদের প্রেমে মজেছে। বিনোদের চাঁদের মতো সুন্দর মুখ দেখে তার মনে বসন্ত বয়ে যায়। সে মনে মনে ভাবে,

"ভিনদেশী পুরুষ দেখি চাঁদের মতন, লাজ রক্ত হইল কন্যার প্রথম যৌবন ৷"

বিনোদ মলুয়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করতে চাইলে তার মা মলুয়ার বাড়িতে ঘটক পাঠায়। কিন্তু এখানেই বাঁধে এক বিপত্তি। বিনোদরা গরিব বলে মলুয়ার বাবা বিয়েতে আপত্তি করে। তবে প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে তা মেনে নেয়। বিনোদ মলুয়াকে বিয়ে করে এরপর মলুয়া শ্বশুরবাড়িতে চলে যায়। সেখানে তার রূপে মুগ্ধ হয়ে সেই দেশের কাজির লোভাতুর দৃষ্টি পড়ে মলুয়ার উপর।

কাজি তাকে লোভ দেখানোর চেষ্টা করে বলে, “তোমার রূপ দেইখ্যা কাজি হইয়াছে ফানা, অঙ্গ ভরিয়া তোমায় দিবো কাঞ্চা সোনা৷” মলুয়া তার প্রতিবাদে বলে, '‘স্বামী মোর ঘরে নাই কী বলিবাম তরে, থাকিলে মারিতাম ঝাটা তর পাকনা শিরে।''

তেজস্বী কাজি মলুয়াকে বশে আনার জন্য বিনোদের উপর নিপীড়ন শুরু করে। বিনোদের সম্পত্তি নিলামে উঠিয়ে তার নামে পরোয়ানা জারি করে। সে বিয়ের জন্য কর দাবি করে বাড়িঘর, জমিজমা বাজেয়াপ্ত করার ভয় দেখায়। কিন্তু মলুয়া পরিবারের এমন দুরবস্থাতেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। বিনোদ এতেই দুর্বল হয়ে পড়ে, আর মলুয়াকে তার বাবার বাড়িতে চলে যেতে বলে। তাতেও মলুয়া নস্যিজ্ঞান করে আর বিনোদের উদ্দেশে বলে, “শাকভাত খাই যদি গাছতলায় থাকি, দিনের শেষে দেখলে মুখ হইবাম খুশি।''

কাজির ষড়যন্ত্রে, মলুয়ার শ্বশুরবাড়িতে অর্থের সংকট দেখা দেয়। মলুয়া তার গয়না-স্বর্ণ বিক্রি করে সংসার চালাতে। কিন্তু বিনোদ সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। মলুয়ার ভাইয়েরা তাকে নিতে আসে, কিন্তু মলুয়া তার বৃদ্ধা শ্বাশুড়ীকে ছেড়ে ব্যাপারে বাড়ি যায়নি। মলুয়া এভাবেই চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছিল। একদিন বিনোদ বিদেশ থেকে কিছু অর্থ উপার্জন করে বাড়ি ফেরে। তাদের সুখের সংসার আগের মতোই কাটতে থাকে। দিনকাল ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু সেই কাজি এখনো মলুয়াকে ভুলতে পারেনি। বিনোদের ফেরার সংবাদ পেয়ে সে মলুয়ার উপর আরো চাপ সৃষ্টির জন্য সেখানকার দেওয়ানকে নিয়োগ দেয়। দেওয়ান বিনোদকে অত্যাচার করে জ্যান্ত কবর দেয়ার পরিকল্পনা করে।

মলুয়া তা জানতে পেরে তার পাঁচ ভাইকে পোষা কুড়ার মাধ্যমে ডেকে বিনোদকে উদ্ধার করে। কিন্তু বিনোদ মুক্তি পেলেও কাজীর লোকজন মলুয়াকে ধরে নিয়ে সেখানকার দেওয়ানের কাছে উপহার হিসেবে দিল। দেওয়ান তাকে বিয়ে করতে চাইলে মলুয়া তার ব্রতের কথা বলে তিনমাস অপেক্ষা করতে বলে।

তিন মাস পর দেওয়ান মলুয়ার কাছে আসলে সে দেওয়ানর মাধ্যমে কাজীকে মৃত্যুর শাস্তি দেয়। এরপর দেওয়ানকে বললো নৌকায় করে কুড়া শিকার করতে। আর এই খবর মলুয়ার ভাইরা পেল। এই ভাইদের সহায়তায় মলুয়া দেওয়ানের হাত থেকে নিজেকে বাঁচায়।

মলুয়া তার জীবনের এই সব দুঃখ, কষ্ট, দুর্ভোগ বিনোদের ভালোবাসার কারণে হাসিমুখে সহ্য করে নেয়। কিন্তু সে দেওয়ানের কবল থেকে রক্ষা পেলেও বিনোদের আত্মীয় স্বজনরা তার সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে। শুধু তাই নয়, স্বজনদের কথা শুনে বিনোদও মলুয়াকে সন্দেহ করে অভিযোগ তুলে, মলুয়া তিনমাস একজন মুসলমানের ঘরে থাকায় তাকে পরিবারে নেয়া সম্ভব নয়। বিনোদও তাকে ত্যাগ করে। তাদের সমাজও তাকে মেনে নেয়নি।

মলুয়াকে তার ভাইরা নিয়ে যেতে চাইলেও সে তার বিনোদের ঘরে দাসীর মতন পড়ে থাকে। ওদিকে বিনোদ আরও একবার বিয়ে করে। একদিন বিনোদকে সাপে কামড়ালে, মলুয়া বিনোদকে এক ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে তার প্রাণ বাঁচায়। এই দেখে পাড়া-পড়শি সকলেই বিনোদকে অনুরোধ করে মলুয়াকে ঘরে তোলার জন্য।

কিন্তু বিনোদের স্বজনরা এতে বিমত পোষণ করলে, মলুয়া তখন রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে নিজের প্রাণ ত্যাগ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। সে নৌকায় উঠে নদীর মাঝখানে চলে যায়। বিনোদের মা, বোন এবং বিনোদ নিজেও অনেক কাকুতি-মিনতি করে মলুয়াকে ফেরানোর জন্যে। মলুয়ার পাঁচভাই আসে সোনার পানসি নিয়ে বোনকে ফিরিয়ে নিতে। কিন্তু মলুয়া আর এই দুঃখের জীবন কাটাতে চায় না। স্বামীকে সতীনের হাতে সঁপে দিয়ে সে মাঝনদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

পূবেতে উঠিল ঝড় গর্জিয়া উঠে দেওয়া। এই সাগরের কূল নাই ঘাটে নাই খেওয়া॥ “ডুবুক ডুবুক ডুবুক নাও আর বা কত দূর। ডুইব্যা দেখি কতদূরে আছে পাতালপুর॥”

পূবেতে গর্জিল দেওয়া ছুটল বিষম বাও। কইবা গেল সুন্দর কন্যা মন-পবনের নাও॥ এভাবেই শেষ হয় মলুয়ার গল্প। মৈমনসিংহ গীতিকার এক করুণ গল্প।