The tale of Sakhina Bibi

The tale of Sakhina Bibi

Bengali Title

সখিনা বিবির কাহিনী

Category
Bengali Folktale
Source

Plot Summary

English

Many years ago, in the village of Kella Tajpur in Mymensingh, lived a Mughal nobleman named Omar Khan. He had a daughter named Sakhina. Unlike other girls of her age, Sakhina didn’t play with dolls. Instead, she had the desire to become a warrior, and she received ample training to fulfill that dream.

In the history of Bengal, the Baro-Bhuiyans were a group of landlords who rebelled against the Mughal Empire to defend the independence of their regions. Among them, the most famous was Isa Khan. He was entrusted with the responsibility of Jangalbari.

Dewan Firoz Khan was the successor of Isa Khan. He governed a vast area in Kishoreganj, located about four miles from Jangalbari. After the death of Isa Khan, Firoz Khan sought to continue his grandfather’s struggle against the Mughals. The atmosphere was tense, with the constant threat of conflict looming over them every day.

Firoz Khan's mother, Amma Begum, was not particularly supportive of his constant involvement in battles. Having witnessed a lifetime of war, she yearned for peace in her later years. One day, she summoned the vizier and expressed her concern: "Vizier Sahib, I am deeply worried about Firoz. If we could arrange his marriage, perhaps he would focus more on his home and less on the endless pursuit of freedom outside. Maybe he will find happiness within the confines of his own household."

And so began the search for a bride for Firoz. Proposals started pouring in from various zamindar families, accompanied by gifts. Firoz Khan was presented with numerous portraits of potential brides, but none of them captured his interest. Then, suddenly, his eyes fell on a picture that had been set aside.

His attention was immediately drawn to the portrait of a young woman, riding a black horse, her eyes blazing as she held up a sword. Firoz couldn’t tear his gaze away. This was exactly what he had been looking for—not just the gentleness of a woman, but the spirit of rebellion that she embodied.

The fiery spirit of rebellion shone brightly in this young woman—perhaps she could be the perfect companion for the freedom-loving Firoz. He bought the portrait from the matchmaker at a high price and then hung it beside his grandfather’s picture, encased in a gleaming golden frame on the wall.

The daring girl in the portrait was none other than Sakhina Bibi, the warrior daughter of Kella Tajpur. Hours would pass as Firoz gazed at the image of Sakhina, sword raised high, her fierce expression captivating him. Days went by like this, and before he even realized it, Firoz found himself deeply in love with Sakhina.

After spending so much time with the portrait, Firoz Khan felt it was time to meet the real person. With this thought in mind, he disguised himself as a fakir and arrived at Kella Tajpur. At that time, Sakhina's father, Omar Khan, was not in good health. Under the guise of a fakir, Firoz's sweet words and attentive care helped Omar Khan recover significantly.

After spending so much time with the portrait, Firoz Khan felt it was time to meet the real person. With this thought in mind, he disguised himself as a fakir and arrived at Kella Tajpur. At that time, Sakhina's father, Omar Khan, was not in good health. Under the guise of a fakir, Firoz's sweet words and attentive care helped Omar Khan recover significantly.

However, despite spending so much time in the palace, Firoz never got a chance to meet Sakhina. Ironically, just when he was about to leave with a heavy heart, fate intervened. On that very day, he encountered Sakhina at the pond's edge in the fort. Their eyes met, and a silent conversation took place between them, a conversation known to no one else. Firoz simply said, “At the pond's edge, with my own tears, I leave my heart’s message for you, Sakhina.”

Sakhina’s father, Omar Khan, was aligned with the Mughal side, while Firoz's entire lineage had fought for independence throughout their lives. From the very beginning, there was a fundamental problem. Upon learning Firoz’s true identity, Omar Khan flatly rejected the relationship.

Firoz's mother sent a marriage proposal, but Omar Khan rejected it. With no other options, Firoz decided to attack Killa Tajpur, rescue Sakhina, and then both of them fled and married. They settled in Jangalbari.

Upon learning of the marriage, Omar Khan declared war against Jangalbari. After a significant battle along the banks of the Narsunda River, Firoz was captured. However, his soldiers continued to fight as much as they could.

Meanwhile, Sakina eagerly awaited Firoz. Her heart was confident that her husband would emerge victorious in the battle. Thus, she sprinkled fragrant rosewater along the path, preparing a variety of sweets and delicacies to be distributed among the villagers.

But where was Firoz? Dressed in a red sari, Sakina looked like a bride anew. At that moment, news arrived from the battlefield: Firoz Khan had been captured. Upon hearing this, the new bride Sakina Bibi immediately transformed into a warrior. She donned her battle gear once more and prepared to lead the troops in Firoz Khan's absence.

No matter what, the fight had to continue. Sakina Bibi, mounted on a white horse, charged out of the Jangalbari fort with determination. Fearlessly, she led her troops into battle. Seeing Sakina on the battlefield reinvigorated the despondent soldiers with new hope. They surged from the Narsunda River to the Shuriya River, turning the waters red with blood. Crossing this river would bring them to Sakina's father's home, where her beloved Firoz was being held captive.

Sakina, ready to drive out all enemies and head to the fort, was suddenly met with a white flag from the opposing side—a sign of peace. Did Omar Khan surrender? As hope began to rise, a messenger arrived with the news: “There is no need for further fighting, Sakina Bibi.” “Firoz Khan has given you a divorce.” Sakina saw the divorce decree, signed by Firoz himself. The bloodshed along the banks of the Shuria River, the struggle for freedom—had it all been for nothing? Was this the betrayal she faced?

Sakina fell slowly from the horse’s back, the commander’s attire slipping from her shoulders. Betrayed, she felt as though a venomous snake had struck her forehead. Thus, Sakina's name vanished from the world. However, in the village of Kumrigram, where she met her end, there still stands a shrine in her memory—Sakina Bibi's mausoleum.

Did Firuz really divorce her? Or was it all a cunning ploy by Sakina's father? Perhaps he did not realize that his scheme would lead to the loss of his own daughter's life. At the shrine built in Sakina's name, it is said that a dervish would often come in the evening, lighting a lamp and shedding tears on Sakina's grave. Though no one knew, it can be inferred that this dervish was none other than the devoted Firuz Khan.

বাংলা

বহু বছর আগে ময়মনসিংহের কেল্লা তাজপুর গ্রামে বাস করতেন মুঘল মসনবদার ওমর খাঁ। তারই মেয়ে ছিল সখিনা। ছোট থেকেই সখিনা অন্য সব মেয়ের মতো পুতুল নিয়ে খেলতো না। তার ইচ্ছে ছিল যোদ্ধা হওয়া। যথেষ্ট প্রশিক্ষণও সে নেয়।

বাংলার ইতিহাসে মুঘল সম্রাটের বিরুদ্ধে নিজ নিজ অঞ্চলের স্বাধীনতায় যে জমিদাররা বিদ্রোহ করতেন, তারাই ছিলেন বারো ভূঁইয়া। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন ঈশা খাঁ। জঙ্গলবাড়ির দায়িত্ব ছিল ঈশা খাঁর উপর।

ঈশা খাঁর উত্তরসূরী ছিল দেওয়ান ফিরোজ খাঁ। জঙ্গলবাড়ি থেকে চার মাইল দূরে কিশোরগঞ্জের এক বিশাল এলাকা জুড়ে ছিল তার দেওয়ানি। ঈশা খাঁর মৃত্যুর পর ফিরোজ খাঁ মুঘলদের সাথে তার নানার লড়াই চালিয়ে যেতে চাইল। প্রতিদিনই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। প্রতিদিনই অশনি সংকেত। এসবে ফিরোজ খাঁর মায়ের অবশ্য তেমন একটা মত ছিল না। সারা জীবন ধরেই তিনি শুধু যুদ্ধ দেখে এসেছেন, শেষ বয়সে তার চাই একটু শান্তি। একদিন আম্মা বেগম ডেকে পাঠালেন উজিরকে, “উজির সাহেব, ফিরোজকে নিয়ে আমার বড় চিন্তা হয়। ওর একটা বিয়েথা দেয়া গেলে হয়তো ঘরে মন ফিরবে। তখন আর বাইরের স্বাধীনতা নিয়ে ছেলে আমার দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলবে না, ঘরেই সুখ খুঁজে নেবে।”

সেই থেকে শুরু হলো ফিরোজের জন্য কনে দেখা। বহু জমিদারের বাড়ি থেকে উপহারসহ বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকলো। একে একে অনেক জমিদারকন্যার ছবি দেখলেন, কিন্তু ফিরোজ খাঁয়ের মন উঠলো না। হঠাৎ এক পাশে সরিয়ে রাখা একটি ছবির দিকে চোখ পড়লো ফিরোজের। তার নজর কাড়লো কালো ঘোড়ায় সওয়ার, হাতে তরবারি উঠিয়ে জ্বলজ্বল চোখে চেয়ে থাআ এক তরুণীর ছবি। কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারলো না ফিরোজ। এই তো চেয়েছে সে। নারীরূপে শুধু কমনীয়তা নয়, তার চাই বিদ্রোহও। এই তরুণীর মধ্যে সেই বিদ্রোহ ঝলমল করে উঠছে– হয়তো সেই হতে পারে স্বাধীনতাকামী ফিরোজের যোগ্য সঙ্গিনী। ঘটকের কাছ থেকে ছবিটি চড়া মূল্যে কিনে নিলো ফিরোজ। এরপর টাঙিয়ে রাখলো তার নানাভাইয়ের ছবির পাশে, দেয়ালে ঝলমল এক সোনার ফ্রেমে।

ছবির সেই ডানপিটে মেয়েটি ছিল সখিনা বিবি, কেল্লা তাজপুরের যুদ্ধবাজ কন্যা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত, ফিরোজ শুধু দেয়ালে তলোয়ার উঁচিয়ে থাকা সখিনার দিকেই তাকিয়ে থাকতো। এভাবে দিনকতক কেটে গেল। নিজের মনের অজান্তেই সখিনার প্রেমে পড়ে গেলো ফিরোজ। অনেক তো ছবির সাথে সময় কাটলো, এইবারে আসল মানুষটাকেও তো দেখা চাই! এই ভেবে একদিন কিলা তাজপুরে ফকিরের ছদ্মবেশে এলো ফিরোজ খাঁ। সে সময়ে সখিনার বাবা ওমর খাঁয়ের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। ফকিরের বেশে ফিরোজের মিষ্টিমধুর কথায়, শুশ্রুষায় অনেকটাই সেরে উঠলেন ওমর খাঁ। তবে এতদিন মহলে সময় কাটিয়েও সখিনার দেখা পেলো না ফিরোজ। ভাগ্যের কী পরিহাস– মনে দুঃখ নিয়ে চলে যাবেন, সেদিনই কিলার পুকুরঘাটে দেখা হয়ে গেল সখিনার সাথে। চোখে চোখ পড়লো। চোখের ভাষায় কথাও হলো। সে কথা আর কোনো কাকপক্ষীরও জানা নেই। মুখে শুধু একটি কথাই বললো ফিরোজ, দিঘির ঘাটে নিজের দু ফোঁটা চোখের জলে সখিনাকে বলে যাচ্ছেন মনের কথা।

সখিনার বাবা ওমর খাঁ মুঘল পক্ষের, ওদিকে ফিরোজের পুরো বংশ সারা জীবন স্বাধীনতার জন্য লড়ে গেছে। গোড়াতেই গলদ হলো। ফিরোজের পরিচয় জানার পর ওমর খাঁ কোনোভাবেই এ সম্পর্ক মেনে নিলেন না। ফিরোজের মা বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেও প্রত্যাখ্যান করে দেন তিনি। আর উপায় না দেখে তখন কেল্লা তাজপুরে আক্রমণ চালায় ফিরোজ, সখিনাকে উদ্ধার করে। এরপর দুজনে পালিয়ে বিয়ে করে জঙ্গলবাড়িতে গিয়ে ওঠে।

বিয়ের খবর পেয়ে ওমর খাঁ যুদ্ধ ঘোষণা করলেন জঙ্গলবাড়ির বিরুদ্ধে। নরসুন্দা নদীর তীরে ফিরোজের ছোট সেনাবাহিনীর সঙ্গে বেশ অনেকটা লড়াইয়ের পর বন্দী হলো ফিরোজ। সৈন্যরা তবু যতটুকু সম্ভব যুদ্ধ চালিয়ে গেলো।

ওদিকে সখিনা অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ফিরোজের। সখিনার মন বলছে, যুদ্ধে তার স্বামীরই জয় হবে। তাইতো সুগন্ধি গোলাপজল ছিটিয়ে পথ চেয়ে আছে সে। গ্রামের সকলের মধ্যে নানান রকম মিষ্টি-মন্ডা বিতরণের জন্য প্রস্তুত করা আছে। কিন্তু কই, ফিরোজ তো এলো না! লাল শাড়ি পরে সখিনা আজ যেন একেবারে নতুন বউ। তখনই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে খবর এলো, বন্দী হয়েছে ফিরোজ খাঁ। এ খবর শুনে নববধূ সখিনা বিবি মুহূর্তেই হয়ে উঠলো যুদ্ধের সিপাহী। গুছিয়ে রাখা যুদ্ধসাজ আবারো গায়ে জড়ালো। ফিরোজ খাঁয়ের অনুপস্থিতিতে সেই হবে সেনাপতি। যে করেই হোক, লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। সাদা ঘোড়ায় চড়ে জঙ্গলবাড়ির দুর্গ থেকে টগবগ করে ছুটে চললো সখিনা বিবি। কাউকে ভয় নেই তার। সখিনাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পেয়ে হতাশ সৈন্যরাও যেন নতুন করে আশার আলো খুঁজে পেলো। নরসুন্দা থেকে শুরিয়া নদী পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়ালো সৈন্যরা। রক্তে লাল হয়ে গেল নদীর জল। এই নদী পার হলেই সখিনার বাবার বাড়ি। সেখানেই বন্দী করে রাখা আছে তার প্রিয়তম ফিরোজকে।

সব শত্রুকে হটিয়ে কেল্লায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত সখিনা। এমন সময়ই অপর পক্ষ থেকে দেখা গেল সাদা পতাকা। শান্তির নিশান। তবে কি ওমর খাঁ হার মেনে নিলেন? একটু আশার সঞ্চার হতেই দূত খবর দিল, “আর যুদ্ধের প্রয়োজন নেই সখিনা বিবি। ফিরোজ খাঁ আপনাকে তালাক দিয়েছেন।” তালাকের দলিল হাতে নিয়ে দেখলো, এ ফিরোজেরই হস্তাক্ষর। যার জন্য এত মানুষের রক্ত বয়ে গেল শুরিয়া নদীর তীরে, সেই তবে ধোঁকা দিলো?

ধীরে ধীরে ঘোড়ার পিঠ থেকে গড়িয়ে পড়লো সখিনার শরীর। খসে পড়লো সেনাপতির পোশাক। প্রতারণার ঘায়ে সখিনার মনে হলো, কোনো বিষধর সাপ তার কপালে দংশন করেছে। এভাবেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেল সখিনার নাম। তবে যেখানে সখিনার মৃত্যু হয়েছিল, সেই কুমড়িগ্রামে আজো আছে সখিনা বিবির মাজার।

তবে ফিরোজ কি সত্যিই তাকে তালাক দিয়েছিল? না, এ সবই ছিল সখিনার পিতার কূট-কৌশল। কিন্তু তিনি হয়তো জানতেন না, তার এ ষড়যন্ত্রে নিজের মেয়েই প্রাণ হারাবে। সখিনার নামে গড়ে ওঠা সেই মাজারে প্রায়ই নাকি এক দরবেশ এসে সন্ধেবেলা বাতি জ্বালিয়ে যেত আর চোখের জলে ভিজিয়ে রাখতো সখিনার কবর। কেউ না জানলেও বুঝে নেয়া যায় সেই দরবেশ আর কেউ নয়, ছিল এক দেওয়ানা দেওয়ান– ফিরোজ খাঁ।