The earliest known reference to today's story dates back 3500 years. The Book of Genesis recounts the tale of Joseph, who was sold into slavery by his jealous brothers. He was subsequently purchased by Potiphar, the captain of the Egyptian Pharaoh's guard. Potiphar's wife, whose name remains undisclosed, attempts to seduce Joseph, and his refusal leads to his imprisonment. Two thousand years later, the Holy Quran also tells a similar rendition of the story. Potiphar is now referred to as Al-Aziz, and the rest of the narrative bears resemblances with some minor variations. Eight hundred years thereafter, the Persian poet Jami assigns a name to the nameless woman, calling her Zulekha. Drawing inspiration from Sufi tradition, he composes a poem that envisions a romance between Yusuf and Zulekha. However, this is no ordinary love. Jami reinterprets Zulekha's infatuation as a yearning for a genuine spiritual connection with God himself. Lastly, in the 15th century, the Bengali poet Shah Muhammad Sagir translates Jami's version, relocating the events to Bengal and incorporating his own material, which encompasses Zulekha's childhood.
“পশ্চিম দিকের রাজা আছিল প্রধান নৃপতি তৈমুছ নামে ইন্দ্রের সমান।”
তৈমুস রাজার কন্যা জোলেখা। বয়স তখন তার খুব বেশি নয়, মাত্র নয় বছর বয়স। তবে আগেকার দিনে তো নারীদের কুড়িতেই বুড়ি হবার একটা চল ছিল, তাই বয়স এখানে বিষয় নয়। সেই বয়সেই জোলেখা স্বপ্নে দেখতে পেল, অতি রূপবান এক পুরুষ। স্বপ্নেই সে পুরুষের প্রেমে পড়লো জোলেখা, মনে হলো– এই তার স্বামী, এই তার ভাগ্য। তবে স্বপ্নই তাকে পথ দেখিয়ে নিয়েছিল। সেই আশ্চর্য পুরুষের স্বপ্ন সে একবার নয়, দেখেছিল তিন তিনবার। প্রথমে আভাস, পরে তার ঠিকানা– সবই জেনেছিল জোলেখা।
জোলেখা অবশ্য নিজেও কম রূপবতী ছিল না। বাবা-মায়ের চোখের মণি, রাজমহলের রাজকুমারী জোলেখাকে সকলেই আদরে-সোহাগে তুষ্ট করে রাখতেন।
“নহলী যৌবন কন্যা সর্বকলা জিত শরৎ চন্দ্রিমা জেহ্ন নক্ষত্র বেষ্টিত।”
সেসময় খুব কম বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত। রাজ-রাজড়ার ঘরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে জোলেখার বিয়েও ছিল তার জীবনের মতোই রহস্যময়। তিনবার যে পুরুষকে স্বপ্নে দেখেছিলেন, তৃতীয় স্বপ্নে জানতে পেলেন– সেই পুরুষ হচ্ছে আসলে মিশরের বাদশা। এরপর আর কী! বাবাকে বলে মিশরের বাদশার সাথেই নিজের বিয়ে ঠিক করালো জোলেখা। জোলেখার পিতা চিঠি পাঠালেন মিশরের বাদশার কাছে, “আমার একটা কন্যা আছে; সে আপনাকে ব্যতীত আর কাউকেই চায় না। আপনি যদি তাকে গ্রহণ করেন, তাহলে রাজ্য-সম্পদ সবই পাবেন।” সে সময়ের বাদশা ছিলেন ফতীফুর, তাকে আজিজ মিসিরও বলা হতো। তিনি বেশ খুশিমনেই এ প্রস্তাব গ্রহণ করলেন। বেশ ধুমধামে বিয়েও হয়ে গেল।
কিন্তু এ কী! বিয়ের প্রথম রাতেই জোলেখার মাথায় বাজ পড়লো। এ তো তার স্বপ্নের পুরুষ নয়। একে তো কোনোদিন দেখেনি সে? তবে কি ভাগ্য ছলনা করলো তার সাথে? ওদিকে আজিজ মিসির সবকিছু সম্পর্কেই বেওয়াকিবহাল। তাই স্বামীর সাথে তারই মতো রূপময়ী এক পরীকে রেখেই জোলেখা তার দিনাতিপাত করলো, নিজে স্বামীর খুব একটা কাছে গেলো না। কেননা বিয়ের পরপরই সে এক আকাশবাণী শুনেছিল, “হে জোলেখা, অধীর হইও না, দুঃখ করিও না। ধৈর্য ধারণ কর। সেই স্বপ্নের পুরুষই তোমার স্বামী, জীবন তোমাকে রাস্তা দেখিয়ে নেবে।” অতঃপর জোলেখা ধৈর্য ধরলো। ধৈর্য ধরে রাজমহলের সংসার চালিয়ে গেল, কিছু ছলনায়, কিছু বাধ্যতায়। দিন যায়, রাত যায়– জোলেখা বসে নিরালায় ভাবে, কোথায় তার ভাগ্যে লেখা স্বামী?
জোলেখার সেই স্বপ্নপুরুষের নাম ছিল ইউসুফ। এক ভাগ্যতাড়িত কিন্তু ভাগ্যকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়া এক মানুষ। ইউসুফের আসল রূপ তার পিতা আর জোলেখা ছাড়া কেউই জানতো না। তাকে হারিয়ে দৃষ্টি হারিয়েছিলেন পিতা ইয়াকুব আর তার জন্যই সর্বহারা, কূলহারা কলঙ্কিনী হয়েছিল জোলেখা নিজে। কিন্তু ইউসুফের সেই অনিন্দ্যসুন্দর রূপেরই বা কী রহস্য? ইউসুফ যখন ক্রীতদাস ছিলেন, তখন একবার ক্লান্তি দূর করতে তিনি নীল নদে ডুব দেন। আর নীল নদের সেই স্পর্শই তাকে এনে দেয় যেন শতগুণ রূপ ও সৌন্দর্য।
“শুদ্ধ সুধাকর রূপ লাবণ্য সুন্দর অতি অদভুত রূপ জিনি পুরন্দর।। ত্রিভুবনে জথেক সমস্ত রূপময় তান মুখ চন্দ্র জ্যোতি সর্বত্র উদএ।।”
তবে পরিবারের দিক দিয়ে ইউসুফের এত ভালো কপাল ছিল না। খুব কম বয়সেই ভাইদের ষড়যন্ত্রে তিনি হয়ে যান এক ক্রীতদাস, মালিকের পিছু পিছু বিদেশ ভ্রমণই তার কাজ। তবে ইউসুফের কিছু অলৌকিক শক্তি ছিল। তিনি মানুষের অনেক বিষয় আগে থেকে বলে দিতে পারতেন, খোলাসা করে দিতে পারতেন বহু রহস্য। ইউসুফের আচার-ব্যবহারও অত্যন্ত ভদ্র হওয়ায় সবাই তাকে বেশ পছন্দও করতো। অনেকে তো তার মোহে অন্ধই হয়ে যেত। হয়তো এও ছিল ইউসুফেরই কোনো জাদুকরী কারবার।
ইউসুফের মালিক তাকে বিক্রির জন্য দেশ-বিদেশে নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে মিশরে গেল। এর পেছনেও অবশ্য ইউসুফেরই মর্জি ছিল। ওদিকে ইউসুফের রূপ দেখে সকলেই মুগ্ধ। খবর পৌঁছালো বাদশার কাছেও– এমন এক দাস এসেছে, তার রূপে দেশ মাতোয়ারা! বাদশা ঠিক করলেন এই দাস খরিদ করবেন। খরিদ না করলেও একবার দেখে তো আসা যায়ই। বাদশার সাথে বেগমও চললেন তার দাসীদের সাথে নিয়ে। জোলেখা বিবির দৃষ্টি যখন দাসের উপর পড়লো, তখনই সে হিতাহিত জ্ঞান সব হারালো। এ-ই তো সে, যাকে স্বপ্নে দেখেছে– খুঁজতে খুঁজতে পাড়ি দিয়েছে মিশরের পথে। মিশরের বাদশা তবে এক ক্রীতদাস মাত্র? তাতে জোলেখার কিছু আসে-যায় না। সে তাকেই চায়। তাই বাদশার সমস্ত সম্পদের বিনিময়ে জোলেখা আবদার করলো এই ক্রীতদাসটি। বাদশাও বেগমের কথা ফেলেন কী করে! অগত্যা মেনে নিলেন। ইউসুফ যুক্ত হলো মিশরের রাজদরবারে। আর তার যত্ন-আত্তির ভার পড়লো বেগমের উপর। কিন্তু এখানে একখানা ঝামেলাও বাঁধলো। জোলেখার কাছে দায়িত্ব দেয়ার সময় আজিজ মিসির বলে দিলেন, “একে নিজের পুত্রের মতো যত্ন নেবে।” এর কারণ ছিল, অলৌকিক গুণের ফলে ইউসুফ বাদশার সব ধন-সম্পদই ফিরিয়ে দিয়েছিল। তাই বাদশা তার প্রতি অনেক খোশদিল ছিলেন।
জোলেখার মনে তো আর ইউসুফের প্রতি মাতৃভাব নেই। তাই সে ক্ষণে ক্ষণেই চেষ্টা করে যায় নিজের প্রেমভাব জাহিরের। আর ইউসুফ এই ভাগ্যচক্র সম্পর্কে এখনো কিছুই জানে না। তাই বারবার সে ফিরিয়ে দেয় জোলেখাকে, বাদশার ইচ্ছেই তার কাছে সব। এভাবেই দিন কাটতে থাকলো– কখনো ঝুটঝামেলায়, কখনো আরামে-আয়েশে। এই সময়টাতে জোলেখা ইউসুফের জন্য একখানা অতি সুন্দর ঘর নির্মাণ করিয়ে দিয়েছিলেন। সে ঘরের কারিগরি যেকোনো স্থাপত্যকে হার মানাতে পারে। সেই চারকোণা ঘরের চারটি স্তম্ভ ছিল রূপার তৈরি, আর ছাদ স্বর্ণের। ঘরের প্রতিটি কোণে রাখা ছিল রূপার তৈরী হরিণশাবক আর স্বর্ণনির্মিত দুটি গোলাম। ঘরের দরজা ছিল আবলুশ কাঠ আর হাতির দাঁত দিয়ে নির্মিত। সেই বিশেষ ঘরের মাঝে আরেকটি ঘর ছিল যার উপর ও নিচ পুরোপুরি কাঁচে ঘেরা। সেখানেই তিনি ইউসুফকে রাখতেন। জোলেখার ইউসুফের প্রতি এইসব কাজ দেখে বাদশা একদিন বুঝতে পারলেন তার অভিসন্ধি। কিন্তু বেগমকে কিছু বললে তারই সম্মানহানি, তাই তিনি ইউসুফকেই কারাগারে পুরলেন। এভাবেই সময় কাটে, বয়োবৃদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আজিজ মিসিরের। তার পরে মিশরের রাজা হন পূর্ব নরপতি। তার শাসনামলে ইউসুফ বন্দীদশা থেকে মুক্তি পান। তিনি রাজাকে রাজ্যচালনায় বিভিন্ন উপদেশ দিয়ে সাহায্য করতেন। এবং নরপতির মৃত্যুর পরে তিনিই মিশরের অধিপতি হন।
ওদিকে আজিজ মিসিরের মৃত্যুর পর জোলেখারও বয়স বেড়েছে অনেকখানি। তার রূপ-জৌলুস, দাসী-বাঁদি কিছুই আর আগের মতো নেই। তিনি তখন থাকেন রাস্তার ধারে, আর ইউসুফের বিরহবেদনায় দিন কাটান। ক্রীতদাস ইউসুফ যখন বাদশাহ, তখন বেগম হলেন ভিখারিণী। বয়সের সাথে চোখের জ্যোতি হারিয়ে জোলেখা হলেন অন্ধ। এই হয়তো ভাগ্যের পরিহাস! ইউসুফ যে পথ দিয়ে যান, জোলেখা সেই পথের পাশে বাসা বেঁধে রাতদিন সেখানেই বসে থাকেন। কিন্তু বাদশার লোকেরা পথের ফকিরকে তার সাথে দেখা করতে দেয় না। জোলেখার অপেক্ষাও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। তবে একদিন তার অপেক্ষা ফুরালো। সেদিন সকালে কোনো ছড়িদার ছাড়াই ইউসুফ বের হয়েছেন ভ্রমণে। তখুনি তিনি দেখলেন এক দীন-দরিদ্রা বৃদ্ধা তার করুণা ভিক্ষা করছে। ভিখারিণীর আর্তনাদে বাদশাহের মন গলে গেল। তিনি বললেন– “কী তোমার প্রার্থনা? সবই করিব পূরণ।” চাতকী যেমন তৃষ্ণার জল পেয়ে শান্ত হয়, জোলেখারও তেমনই মনে হলো। সে বললো, “বর মাগি হয় যেন চক্ষু উন্মুক্ত।” তখুনি তিনি চোখের দৃষ্টি ফিরে পেলেন। চোখে দেখতে পেলেন আবারো ইউসুফের সেই জ্যোতির্ময় চেহারা। এরপ জোলেখা চাইলেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর।
জোলেখা বলিল আজিজ শোনো এ স্বরূপ সপ্তখণ্ড টঙ্গীতে আছিল যেই রূপ সেই রূপ যৌবন ফিরে মোরে দাও তোমার সমান হইতে না পারি– তুমি এই কালে যেন আমার হও!
এই অদ্ভুত প্রস্তাব শুনে ইউসুফ অবাকই হলেন। কারণ তিনি তখন আর জোলেখাকে চিনতে পারছিলেন না। তখনি আকাশ থেকে বাণী ভেসে এলো–
"এই তোমার বিবি হইবে এই তোমার ভাগ্য। তারেই তুমি গ্রহণ করিবে হইবে দুজনের সখ্য।"
এতদিনে নিয়তি পূরণ হলো। দুই মেরুর মিলন ঘটলো। সেই যে জোলেখা স্বপ্নে দেখেছিলেন, মিশরের বাদশার সাথে তার বিয়ে হবে– সে স্বপ্নও সত্যি হলো। নবদম্পতি বাস করতে লাগলেন এক সুরম্য টঙ্গীতে। শাহ সগীরের মতে, এই প্রমোদ টঙ্গীতেই তাদের দুটি ছেলেসন্তান জন্ম নেয়। যদিও একথা অন্য কোথাও লেখা নেই।