কুড়ি টিলার কিংবদন্তি
English
Centuries ago, there was a renowned market called Imambazar, located in the present-day district of Habiganj. Among other things, the market was well-known for its fish shops. However, there was one unpleasant aspect of Imambazar - a nearby garbage dump where people would throw away discarded fish pieces. Every day, someone would come and collect the fish pieces, but no one bothered to find out who this person was. No one, except for an infamous robber named Shamsu Miah.
One evening, after the market had closed for the day, Shamsu Miah secretly began observing. After a while, a Dervish (দরবেশ) dressed in white clothes approached the garbage dump. The curious robber watched with keen interest as the dervish picked up the fish pieces, put them inside his bag, and started walking away. Shamsu Miah began to follow him. The dervish walked to the top of a nearby hill and stopped in front of a giant black rectangular slab of rock. Then, as if by magic, the rock slid to the side and revealed an illuminated tunnel. The dervish casually walked into the tunnel and left the door open. Shamsu Miah hesitated to go in, but the open door was too much of a temptation. He gathered all his courage and followed the dervish inside.
Inside the tunnel was a cave that reminded Shamsu of the story of Aladdin from The Arabian Nights. The whole place was adorned with gold and jewels, like a royal palace. Even the air smelled of sweet fragrance. Shamsu hid behind a rock and watched with awe as seven dervishes gathered around a dining table. The man he had followed from the dump reached inside his bag and pulled out something. But instead of rotten fish, all sorts of delicious food items came out. After setting up the table, the dervish announced that a guest would be joining them and called out to Shamsu Miah. The mighty robber was scared out of his wits. He appeared from behind the rock and joined the dervishes at the table. The old men assured him that they meant no harm and offered him a variety of delicacies. The food was better than anything he had ever tasted in his entire life. After dinner, the dervishes walked him back to the tunnel entrance and told him that he was welcome anytime as long as he kept it a secret.
This incident completely changed Shamsu Miah. He gave up robbery and became a pious man. His family began to wonder what had happened to him and pestered him with questions. But Shamsu held on to his secret as long as he could. Finally, his mother, on her deathbed, asked him to tell the truth as her last wish. With no way out of the situation, Shamsu shared the story of the cave of the seven dervishes. And surely, within three days of the death of his mother, Shamsu himself passed away.
বাংলা
সে বহু শতাব্দী আগের কথা। বর্তমান হবিগঞ্জ জেলায় তখন ইমামবাজার নামে এক প্রসিদ্ধ বাজার ছিল। অন্যান্য বহু জিনিস সহ বাজারের মাছের অনেক নামডাক ছিল। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ বাজারে মাছ কিনতে আসতো। কিন্তু এত খ্যাতি সত্ত্বেও ইমামবাজারের ঠিক পাশেই একটি আবর্জনার স্তুপ ছিলো। মানুষ সেখানে মাছের পঁচা অংশগুলো ফেলে দিতো। আবর্জনা ফেলার পর সেখানে গন্ধে টেকা যেতো না, কিন্তু অবাক ব্যাপার হলো, প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট সময় কেউ একজন এসে সেই পঁচা মাছের টুকরোগুলো আবর্জনা থেকে নিয়ে যেত। কে এই কাজ করে, কেউ জানতো না। অবশ্য জানার জন্য কারো আগ্রহও ছিলনা। বাজার যেমন চলার, তেমনি চলে যেতো। সেই বাজারের খুব কাছেই বাস করতো এক কুখ্যাত ডাকাত। তার নাম ছিল শামসু। শামসুর ভয়ে আশেপাশের মানুষজন ছিল একেবারে নাজেহাল। শামসু স্বভাবে ছিল একটু কৌতূহলী। অন্য কেউ খেয়াল না করলেও এই আবর্জনার বিষয়টিও তার চোখে পড়লো। তার মনে হলো, ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখা দরকার।
যে-ই কথা, সেই কাজ। এক সন্ধ্যায়, বাজার বন্ধের পর, শামসু মিয়া বসে বসে আশেপাশে নজর রাখতে লাগলো। একটু পর, সে খেয়াল করলো আপাদমস্তক সাদা কাপড় পরা এক শান্ত-সৌম্য দরবেশ আবর্জনার স্তুপের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। শামসু অবাক হয়ে দেখলো, দরবেশ ময়লা থেকে মাছের টুকরোগুলো আলাদা করে নিয়ে নিজের থলেতে ভরে চলে যাচ্ছেন। শামসু মন্ত্রমুগ্ধের মতো উঠে তার পেছনে হাঁটা শুরু করলো। দরবেশ কিন্তু পেছনে ফিরে তাকালেন না। বাজারের বেশ কাছেই একটি টিলার উপরে গিয়ে উঠলেন। টিলার উপরে রাখা ছিল একটি বিশাল আয়তাকার কালো পাথর। পাথরটির সামনে দাঁড়াতেই, যাদুমন্ত্রের মতো পাথরটি একপাশে সরে গিয়ে একটি আলোকিত সুড়ঙ্গ দেখা গেল। দরবেশ সুড়ঙ্গের প্রবেশপথ খোলা রেখেই ভেতরে চলে গেলেন। শামসু মিয়ার অস্বস্তি লাগলেও খোলা দরজা দেখে সে নিজের কৌতুহল দমন করতে পারল না। শামসু স্বভাবে ভীতু ছিল না। কিন্তু তেলেসমাতি এসব কারবার দেখে তারও ভয় লাগতে শুরু করলো। তবে নিজেকে সাহস দিয়ে দরবেশের পিছুপিছু ভেতরে ঢুকলো।
সুড়ঙ্গটি দিয়ে এগোতে এগোতে একসময় শামসু একটি গুহায় পৌঁছালো। গুহাটি দেখে শামসুর যেন আরব্য রজনীর সেই আলীবাবার গুহার কথা মনে পড়লো। পুরো জায়গাটা সোনাদানা ও মণিমুক্তো দিয়ে সাজানো, ঠিক যেন রাজপ্রাসাদ! এমনকি বাতাসেও কেমন অচেনা মিষ্টি সুগন্ধ। শামসু একটি পাথরের পেছনে লুকিয়ে থেকে দেখলো, সে যে দরবেশের পিছু পিছু এসেছে– তিনিসহ সাতজন দরবেশ একটি খাবার টেবিল ঘিরে দাঁড়ানো। তার পরিচিত দরবেশটি তখন থলের ভেতর হাত দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বের করতে লাগলো। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, পঁচা মাছের বদলে থলে থেকে বের হলো বিভিন্ন সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্য। টেবিল সাজানোর পর, দেখা গেল সেখানে সাতটি নয়, আটটি থালা রাখা। দরবেশটি তখন বলে উঠলেন, “আজ কিন্তু আমরা একা নই। আজ আমাদের সাথে আছেন একজন অতিথিও। সবাইকে তাকে স্বাগত জানাও।” এই বলে দরবেশ শামসুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এসো, শামসু।”
দুঃসাহসী ডাকাত শামসুর তখন ভয়ে বুক কাঁপতে লাগলো। এমন অদ্ভুত ঘটনা সে বাপের জন্মে দেখেনি। তবু দরবেশের আহ্বান সে ফেলতে পারলো না। সে যেন জাদুমন্ত্রে বশ হয়ে আছে। আস্তে আস্তে শামসু পাথরের পেছন থেকে বের হয়ে দরবেশদের সঙ্গে টেবিলে বসলো। তখন দরবেশরা তাকে আশ্বস্ত করলেন, তারা তার কোনো ক্ষতি করবে না। এত সুস্বাদু খাবার শামসু জীবনে কখনো খায়নি। খাবারের পর, দরবেশরা তাকে সুড়ঙ্গের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। এত আপ্যায়নের পর তারা তাকে বললেন,
“শামসু ডাকাত, তুমি আমাদের এই গুহায় যতবার ইচ্ছে আসবে– কেউ তোমাকে বাধা দেবে না। কিন্তু মনে রাখবে, আমাদের এই সভার কথা বাইরের কাউকে কখনো বলা যাবে না। বললেই নির্ঘাৎ প্রাণ হারাবে। মনে রেখো কিন্তু!”
এই ঘটনা শামসু মিয়াকে পুরোপুরি বদলে দিলো। সে ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে ধর্মকর্মে মন দিলো। এলাকায় লোকজন, তার পরিবারের মানুষ সবাই অবাক হলো। তবে সেইসাথে খুশিও হলো। অনেকে তাকে বারবার জিজ্ঞেসও করতে লাগলো যে কী হয়েছে। কিন্তু শামসু কোনো উপায়েই গুহার রহস্য ফাঁস করলো না। এভাবেই কেটে গেল অনেকদিন। শামসু সৎপথে ভালোই উপার্জন করতে শিখেছে। একদিন শামসুর মৃত্যুপথযাত্রী মা নিজের শেষ ইচ্ছে হিসেবে শামসুর কাছে সত্যটা জানতে চাইলেন। মায়ের অনুরোধ ঠেলতে না পেরে শামসু সেই গুহা ও সাত দরবেশের গল্প বলে দিলো। এবং তার পরেই, সেই দরবেশদের সাবধানবাণী ফলে গেল। শামসুর মায়ের মৃত্যুর তিনদিনের মধ্যেই মারা গেল শামসুও। শোনা যায়, শামসুর কাহিনী শুনে পরে এক লোভী লোক সেই পাথুরে গুহার সামনে গিয়েছিল। কিন্তু সে কোনো গুহা বা দরবেশের খোঁজ পায়নি। রাগের চোটে লোকটি সেই পাথরে কুড়াল মারে। সেই লোকটিও প্রাণ হারায় মাত্র তিনদিনের মাথায়।