The prince who lived in the kitchen

The prince who lived in the kitchen

Bengali Title

পাহাইল্যা রাজপুত্র

Category
Bengali Folktale

বাংলা

কয়েকশ বছর পূর্বে আম্মক নামে এক রাজা ছিলেন। রাজার ছিল সাতটি পুত্র কিন্তু সবচেয়ে ছোট পুত্র ছিলো অন্য সবার থেকে আলাদা। সে সারাদিন চুপচাপ থাকতো আর মেয়েদের মতো রান্নার কাজ করতো। এজন্য তার নাম রাখা হয় 'পাহাইল্যা'। বছরের পর বছর রাজার কাছে অপমানিত হতে হতে একদিন সে মনের ক্ষোভে রাজ্য ছেড়ে চলে যায়।

পথ চলতে চলতে পাহাইল্যা এক বনের মধ্যে এসে উপস্থিত হয়। সেখানে সে দেখে একটি কুঁড়েঘর এবং ঘরের সামনে একটি ছাগল বাঁধা। সেখানেই সে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং রাতের খাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে পাহাইল্যা উঠে দেখে তার ঘোড়া নেই। আসে পাশে আর কাওকে না দেখে ছাগলটির উপর তার মনে সন্দেহ জাগে। পরের রাতে সে ছাগলের গতিবিধি লক্ষ্য করে এবং যেমনটি সে সন্দেহ করেছিল, রাত গভীর হওয়া মাত্রই ছাগলটি তার ছদ্দবেশে ছেড়ে একটি রাক্ষসীর রূপ ধারণ করে। ঘটনাটি দেখে পাহাইল্যা দৌড়ে জঙ্গলের ভিতর চলে যায় কিন্তু রাক্ষসটি একটা মেয়ের রূপ নিয়ে তার পিছনে পিছনে দৌড়াতে থাকে।

পাহাইল্যা যেতে যেতে এক রাজার বাড়িতে গিয়ে উঠে। পাহাইল্যা রাজাকে বলে যে, আপনি আমায় রক্ষা করেন। এই মেয়ে আমার জীবন নষ্ট করার জন্য এসেছে। মেয়ে বলে - মহারাজ! সে আমার স্বামী। আমাকে রেখে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছে। আমি তাকে চাই। রাজা পাহাইল্যাকে বলে- তুমি এই মেয়েকে না নিলে ১ হাজার মুদ্রা নিয়ে ছেড়ে দাও। আমি একে বিয়ে করবো। পাহাইল্যা রাজি হয়ে মুদ্রা নিয়ে চলে যায় সেই রাজ্যের এক অসহায় বুড়ির বাড়িতে।

সেদিন থেকে রাক্ষসী দিনের বেলায় রাণীর বেশে থাকে এবং রাতের বেলায় রাজ্যের মানুষজনদের ধরে এনে খায়। রাজ্যে এ নিয়ে খুব ভীতির জন্ম নেয়। অনেকে রাজ্য ছেড়ে চলেও যায়। রাজা অনেক ভেবেও এর সমাধান করতে পারেন না। পাহাইল্যা একথা শুনতে পেলে সে রাজার কাছে গিয়ে বলে, আমি আপনার দারোয়ান হয়ে এর মোকাবিলা করতে চাই। রাজা এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। সেদিন থেকে পাহাইল্যা রাতে সেই রাক্ষসী রানীর দালানের সামনে বসে তরোয়াল হাতে পাহারায় থাকে যেন রাক্ষসী বের হয়ে কাউকে খেতে না পারে। এতে করে রাজ্য যেমন রক্ষা পায় তেমনি রানীর শরীরও দিন দিন খারাপ হতে থাকে মানুষ না খাওয়ার জন্য।

রাক্ষসী রানী পাহাইল্যাকে রাজ্য থেকে সরানোর জন্য রাজার কাছে বলে- "আমার দেশে একটা গাভী আছে যার আকার ইঁদুরের মতো কিন্তু প্রতিদিন ৭-৮ বার করে দুধ দেয়। আপনি যদি পাহাইল্যাকে পাঠিয়ে গাভীটি নিয়ে আসেন তবে আমার জন্য আর দুধ কিনতে হবে না।" রাজা একথা শুনে পাহাইল্যাকে আদেশ দেন সেই গাভীটি নিয়ে আসার। পাহাইল্যা রাজ্য ত্যাগ করে যাত্রা শুরু করলো রাক্ষস নগরীর দিকে। পথে দেখা হলো এক দরবেশের সাথে। দরবেশ জাদুবিদ্যার সাহায্যে পাহাইল্যা কে একটি কাকে রূপান্তরিত করলো। এভাবে সে ডানা মেলে উড়ে গেলো রাক্ষসদের দেশে এবং নিয়ে এলো সেই অদ্ভুত গাভীটি।

পাহাইল্যা ফিরলে আবার বিপদে পড়ে যান রানী। রাতে পাহাইল্যা তরোয়াল হাতে পাহারায় থাকে জন্য বের হয়ে মানুষ খেতে পারেনা। এভাবে কিছুদিন চলার পর রানী আবার রাজাকে বলে- "আমার দেশে এক ধানের বীজ আছে যা বপন করলে একদিনেই পাকা ধান পাওয়া যায়। সেই ধান এনে চাষ করলে রাজ্যে আর খাবারের সমস্যা থাকবেনা।" রাজা একথা শুনে পাহাইল্যাকে বলে রানীর দেশ থেকে সে ধানবীজ আনতে। এবার রাণী তার হাতে একটি পত্র দিয়ে বললো "এটি আমার মায়ের কাছে পৌঁছে দিয়ো"।

পাহাইল্যা রাজ্য ত্যাগ করে আবারো রাক্ষস নগরীর দিকে যাত্রা শুরু করে। এবার পাহাইল্যার দেখা হলো আরো শক্তিশালী এক দরবেশের সাথে। আঠারো বছর ধরে তপস্যা করতে করতে দরবেশের শরীর গাছের শিকড়ের সাথে মিশে গেছে। পাহাইল্যা দরবেশকে সব খুলে বললো এবং রানীর দেয়া পত্র দেখালো। দরবেশ পত্র খুলে দেখে সেখানে রাক্ষসের ভাষায় লেখা "মা, এই যুবক আমার পরম শত্রু। এর জন্য আমি শিকার বন্ধ হয়ে গেছে। একে দেখা মাত্রই মেরে ফেলবেন।" দরবেশ জাদুবলে পত্রের লেখা পাল্টে দিলেন এবং তাকে তার গন্তব্যে রওনা দিতে বললেন। পাহাইল্যা আবারো আগের মতো ডানা মেলে রাক্ষসের দেশে পৌছালো। এবার সে সোজা চলে গেলো রাক্ষসের মায়ের কাছে এবং তাকে পত্র দেখালো। সেখানে লেখা ছিল "মা, এই যুবকটি আপনার নাতি। এর ভালো করে যত্ন নিবেন এবং ওকে ধানবীজ দেখিয়ে দিবেন।"

এভাবে পাহাইল্যা রাক্ষসদের সাথে থাকতে শুরু করলো। একদিন সে ঘরের উত্তর দিকে ঘুরতে গিয়ে একটি পুকুর আবিষ্কার করলো যার পানি রক্তের মতো লাল। ঘরে ফিরে এসে সে রাক্ষসীর মা-কে জিজ্ঞেস করলো পুকুরের কথা। রাক্ষসীর মা নানা রকম অজুহাত দিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু অনেক কাকুতি মিনতির পর উনি সব খুলে বললেন। রাক্ষসরা সেই পুকুরে গোসল করে বলে ওদের ঘামে পুকুরের পানি লাল। রাক্ষসদের কেউ বিপদে পড়লে পুকুরের শাপলা ফুলগুলির রং পাল্টে কালো হয়ে যায়। আর যখন শাপলার রং সাদা থাকে তার মানে রাক্ষসরা নিরাপদে আছে। পুকুরের ঠিক মাঝখানে বড় ফুলটি শাপলাদের রাজা। সেই ফুলটির মূলের নিচে মাটির ভিতর আছে একটু সিন্দুক। সেই সিন্দুকের ভিতর আছে একটি ভোমরা এবং সেই ভোমরার ভিতরেই আছে সমস্ত রাক্ষসদের প্রাণ। একদিন যখন রাক্ষসরা শিকারে বের হলো তখন পাহাইল্যা সুকৌশলে পুকুরের নিচ থেকে প্রাণ-ভোমরাটি জোগাড় করে আবার পাখি হয়ে নিজ রাজ্যে উড়ে চলে যায়।

পাহাইল্যা ফিরে এসে দেখে রাক্ষসী রানী রাজ্যের অর্ধেক প্রজাদের খেয়ে ফেলেছে। পাহাইল্যা তখন রাজাকে বলে রাজদরবারে জরুরী বৈঠক ডাকতে। বৈঠক ডাকা হলে পাহাইল্যা সবার সামনে রাক্ষসী রানীর আসল রূপ প্রকাশ করে। ধরা পরে যাওয়ার পর রাণী ছুটে আসে পাহাইল্যাকে মারার জন্য। কিন্তু রাণী কিছু করার আগেই পাহাইল্যা ভোমরাটির শিরচ্ছেদ করে রাক্ষসীর হত্যা করে। রাজা এবং রাজ্যের সবাই পাহাইল্যার উপর অনেক খুশি হয়ে তাকে অনেক ধন-সম্পদ দান করেন এবং রাজপ্রাসাদে রেখে রাজ্য পরিচালনার ভার দেন।