মহুয়ার পালা
English
In the heart of a dense forest, nestled within the Garo Hills, lived a notorious bandit leader named Humra Dakaat. His life was one of lawlessness and plunder, marked by the fear he instilled in the hearts of villagers. One fateful night, while raiding the home of a wealthy Brahmin, Humra's gaze fell upon a six-month-old girl, her beauty as radiant as the moon. This innocent child stirred a change within him, awakening a long-dormant emotion: love. Unable to leave her behind, Humra took the child and raised her as his own. Years passed, and the stolen child, named Mahua Sundari for her breathtaking beauty, blossomed into a young woman. Humra, now a snake charmer, showered her with affection, teaching her the secrets of his trade. Their bond transcended the boundaries of their unconventional family, woven together by love and mutual respect. Dewan Nader Chand, the son of the zamindar of Bamankanda village, sat lost in thought under the starry sky. He was supposed to be leading a meeting, but his mind was far away, captivated by a rumor he had heard: a group of snake charmers had arrived in the area, and among them was a girl of unparalleled beauty. Consumed by curiosity, Nader Chand abruptly ended the meeting and sought permission from his mother to host the snake charmers at their palace. He knew that, as the zamindar's son, he could easily arrange such entertainment, for their lavish home often played host to grand dances, songs, and diverse events. His mother readily agreed, and soon Humra and his troupe arrived at the palace. As Mahua, the beautiful young woman Nader Chand had heard so much about, began her mesmerizing snake charming performance, his heart knew no bounds. He was smitten, utterly captivated by her grace and captivating presence. From that moment on, Nader Chand could only think of Mahua. He yearned for her presence, his love for her blooming with each passing day. Finally, unable to bear the silence any longer, he confronted her, confessing his fervent love. To his immense joy, Mahua, drawn to his passion and charm, revealed her own affection for him Nader Chand, a nobleman, and Mahua, the daughter of a snake charmer, belonged to different worlds. Yet, their love refused to be bound by societal norms. They met in secret, their stolen glances and whispered words fueling their passion. One midnight under the moonlit sky of Chaitra, Nader Chand awoke with his beloved Mahua on his mind. He reached for his cherished flute and began to play, his melody carrying through the night air like a love song. Mahua, hearing the familiar notes, instantly recognized Nader Chand's call. Like a moth drawn to a flame, she dashed out of the house, her heart pounding with anticipation. Reaching the riverbank, she found Nader Chand sitting there, his flute serenading the night. Their eyes met, and a spark ignited. They embraced, their bodies clinging to each other as if they were one. In a passionate whisper, Mahua confessed her love: "I want to leave everything behind and run away with you. I am madly in love with you, and every moment without you is an eternity." Their embrace, however, was witnessed by Humra, who watched from a distance. Fear and apprehension gripped him as he realized the depth of their connection. He knew their love would face insurmountable challenges due to their unequal social status. To prevent further complications, Humra took a drastic step. Under the cloak of darkness, he fled the village with Mahua and his team, leaving Nader Chand heartbroken and alone. Nader Chand, his heart shattered into a million pieces, felt the pull of madness tugging at his soul. He fabricated a story about going on a pilgrimage, but his true destination was Mahua. He searched for her tirelessly for three months, his eyes scouring every face he passed, asking if they had seen a girl of her breathtaking beauty. Finally, as the first signs of winter painted the month of Agrahayana, Nader Chand found Mahua on the banks of the river Kansa. It was as if life had flooded back into her veins the moment she laid eyes on him. With a joyous heart, she fetched water from the river, cooked a delicious meal, and served it to him with her own hands. Humra, however, was consumed by worry upon learning of Nader Chand's arrival. One night, he roused Mahua from her sleep and spoke with a heavy heart, "For sixteen years, I have raised you alone, enduring countless hardships. You have always followed my word without question. But now, a stranger has come to threaten our happiness, and I cannot tolerate it." With these heavy words, Humra placed a dagger in Mahua's trembling hand and uttered a chilling command, "While Nader Chand sleeps, plunge this dagger into his chest and end his life." But Mahua's love for Nader Chand burned brighter than any fear her father could instill. She could not bring herself to kill the man who held her heart. Instead, under the cloak of night, they crossed the river in a small boat and sought refuge in the depths of the forest. Six months had passed, and Nader Chand and Mahua had built a haven of happiness within the embrace of the forest. However, complacency often follows joy, and their idyllic life was shattered when Humra and his band of snake charmers appeared in their sanctuary. Humra handed Mahua a poisoned knife, its purpose weighing heavily in her hand. But her love for Nader Chand burned brighter than any fear or obligation. With a heart brimming with love and sorrow, she plunged the blade into her own chest, finding solace in death rather than betraying her love. Nader Chand, witnessing his beloved's selfless sacrifice, was overcome by grief. Unable to bear the thought of a world without her, he took the same blade and followed her into the embrace of the afterlife. In that moment, their souls intertwined, forever united beyond the veil of life.
বাংলা
একসময় দেশে এক ডাকাত সর্দার ছিলো। নাম ছিল তার হুমরা ডাকাত। রাতের অন্ধকারে একবার হুমরা ডাকাত তার দলবল নিয়ে হানা দেয় সম্পদশালী এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে। লুটপাট চালিয়ে বের হয়ে যাবার সময় তার চোখ পরে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ছয় মাস বয়সী মেয়ের উপর। শিশুটির স্বর্গীয় সৌন্দর্যের কাছে তার অপহরণকৃত সব ধন-সম্পত্তি নিমিষেই তুচ্ছ হয়ে যায়। ব্রাহ্মণের চোখ ফাঁকি দিয়ে শিশুটিকে চুরি করে নিয়ে আসে সে।
গারো পাহাড়ের পর হিমানী পর্বত। এখানে গভীর এক বনে বাস করতো হুমরা ডাকাত। চুরি করে আনা শিশুটি তার কাছেই বড় হতে থাকে। মেয়েটিকে আনার পর থেকে হুমরার মধ্যে অনেক পরিবর্তন চলে আসে। সে ভালোবাসতে শেখে, এক সময় ডাকাতি করাও ছেড়ে দেয়। তখন জীবিকার তাগিদে সে যোগ দেয় বেদের দলে। হুমরা ডাকাত হয়ে যায় হুমরা বেদে।
চোখের পলকে কেটে যায় ১৬টি বছর। কন্যা সন্তানের উপচে পড়া রূপ হুমরার অন্ধকার ঘরকে আলোকিত করে রাখে। তাই পালক বাবা-মা রূপে-গুণে এই অতুলনীয় সুন্দরী মেয়ের নাম রাখে "মহুয়া সুন্দরী"। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সেই মেয়ে হয়ে যায় বেদের মেয়ে। হুমরা তাকে খেলা ও বেদের কৌশল শেখায়। মহুয়াও বাবার সাথে সাপ খেলা দেখায়।
বামনকান্দা গ্রামের জমিদারের ছেলে দেওয়ান নদের চাঁদ। বাবার আদেশে এক সন্ধ্যায় তিনি সভায় বসেন খোলা আকাশের নিচে। কিন্তু সভায় তার মন নেই, তাকিয়ে আছেন তারা ভরা আকাশের দিকে। তারই বিশ্বস্ত একজনের কাছে খবর পেয়েছেন এলাকাতে এক বেদের দল এসেছে, দলের সাথে এক অসম্ভব সুন্দরী মেয়েও এসেছে যার তুলনা বামনকান্দা তো দূরের কথা গোটা জমিদারীতেই নেই। তাই নদের চাঁদ সভাভঙ্গ করে অন্দরমহলে পৌঁছে মায়ের কাছে অনুমতির জন্য । যেহেতু জমিদার খুবই অবস্থাপন্ন ছিলেন তাই সকলের বিনোদনের জন্য তার প্রাসাদে প্রায়ই নাচ গান ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হতো। তাই মায়ের অনুমতি পেয়ে এবারও অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ করা হয় হুমরা বেদের দলকে।
আমন্ত্রণ পেয়ে হুমরা তার দলবল নিয়ে জমিদারের প্রাসাদে যায় সাপের খেলা দেখানোর জন্য। মহুয়ার খেলা দেখানোর কৌশল দেখে সবাই মুগ্ধ হয়। অন্যদিকে তাকে দেখা মাত্রই প্রেমে পড়ে যায় নদের চাঁদ। মহুয়াকে দেখার পর থেকে নদের চাঁদ সবসময় শুধু তার কথাই ভাবতে থাকে। সে বুঝে যায় যে, সে প্রেমে পড়ে গেছে। কিন্তু অনেকদিন দেখা নেই মহুয়ার। নদের চাঁদ ভাবে মহুয়া বুঝি তাকে উপেক্ষা করে যাচ্ছে। এক সন্ধ্যায় মহুয়ার পথ আগলে দাঁড়ায় নদের এবং কোনো দ্বিধাবোধ না করেই মহুয়াকে তার প্রেমের কথা জানায়। নদের চাঁদও ছিলো বেশ সুদর্শন যুবক। মহুয়ারও তাকে ভালো লেগে যায় এবং তারা একজন আরেকজনের প্রতি ভালোবাসার বন্ধনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
চৈত্র মাসের এক মধ্যরাতে হঠাৎ নদের চাঁদের ঘুম ভেঙে যায়। প্রিয় মহুয়ার কথা মনে করে তার প্রিয় বাঁশিটি হাতে নিয়ে বাজাতে শুরু করে। অন্যদিকে যখন মহুয়া এই বাঁশির সূর শুনতে পায় তখন সে বুঝতে পরে যে নদের চাঁদ তাকে ডাকছে। মহুয়া তখন পাগলের মতো করে ঘর থেকে বের হয়ে নদীর ঘাটে এসে দেখে নদের চাঁদ সেখানে বসে বাঁশি বাজাচ্ছে। তখন মহুয়া এবং নদের চাঁদ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। জড়িয়ে থাকা অবস্থায় মহুয়া বলে "আমি বাবা-মা, ঘর-বাড়ি সব ছেড়ে তোমার সাথে অন্য কোথাও চলে যেতে চাই। আমি তোমার প্রেমে পাগল হয়ে গেছি।এক মুহুর্ত তোমাকে না দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই।" মহুয়া এবং নদের চাঁদের প্রেম দূরে লুকিয়ে থেকে হুমরা বেদে সব দেখে ফেলে। অসম অবস্থানের প্রেম নিয়ে বেদের মনে জেগে ওঠে ভয় আর শঙ্কা। পরিস্থিতি এড়াতে সে গভীর রাতে মহুয়া আর দলবল নিয়ে পালিয়ে যায় গ্রাম থেকে।
ওদিকে মহুয়ার বিরহে চাঁদ ঠাকুরের পাগল প্রায় অবস্থা। তীর্থের নামে সে বেরিয়ে পড়ে মহুয়ার খোঁজে। এমন ভাবে নদের চাঁদ তিন মাস ধরে মহুয়াকে খুজে, কিন্তু কোথাও তার সন্ধান পায় না। পথে যাকেই পায় তাকেই মহুয়ার রূপের গঠন এবং খেলা দেখাবার পরিচয় দিয়ে জিজ্ঞেস করে মহুয়াকে কোথাও দেখেছে কিনা। অগ্রহায়ণ মাসে যখন হালকা শীত পরে তখন অবশেষে কংস নদীর পাড়ে নদের চাঁদ মহুয়ার সন্ধান পেল। নদের চাঁদকে দেখে মহুয়ার যেন দেহে প্রাণ ফিরে এলো। সে খুশি মনে নদীর জল আনতে গেলো এবং সুন্দর সুন্দর রান্না করে নদের চাঁদকে খাওয়াতে লাগল। হুমরা বেদে এই দিকে নদের চাঁদের আগমনের কথা শুনে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ল। এক রাতে ঘুমন্ত মহুয়াকে সে জাগিয়ে বলল "১৬ বছর ধরে তোমাকে কত কষ্ট করে লালন পালন করেছি। তুমি কখনই আমার অবাধ্য হও নি। এক ভিনদেশী পুরুষ এসেছে আমাদের সুখ নষ্ট করতে, যেটা আমি কোনওভাবেই সহ্য করতে পারছি না।" এই বলে হুমরা বেদে মহুয়ার হাতে একটি ছুড়ি দিয়ে বলল, "ঘুমন্ত অবস্থায় নদের চাঁদের বুকের মধ্যে এই ছুড়িটা গেথে দিয়ে তাকে মেরে ফেলো।" কিন্তু বাবার আদেশের ওপর জিতে যায় মহুয়ার প্রেম। সে মারতে পারে না চাঁদকে, ডিঙা নৌকায় নদী পারি দিয়ে বনে পালিয়ে যায় তারা। এভাবে কাটে ছয় মাস।
নদের চাঁদ আর মহুয়া বনের মধ্যেই পেতে ফেলে সুখের সংসার। কিন্তু প্রেম যেখানে খরস্রোতা, ভাঙনও সেখানে মারাত্মক। একদিন সে বনেও হাজির হয় হুমরা বেদের দল। এবারও হুমরার সামনে দাঁড়িয়ে মহুয়ার হাতে বিষ লাগানো ছুরি তুলে দেয় চাঁদকে মারার জন্য। কিন্তু মহুয়া তো নদের চাঁদকে সত্যিকারের ভালোবেসেছিলো, সে কি করে মারবে তাকে? তাই ছুরিটি সে নিজের বুকেই গেঁথে দেয় এবং মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে। এদিকে নদের চাঁদ নিজের প্রানের চেয়েও প্রিয় প্রিয়তমার এই আত্মত্যাগ সহ্য করতে না পেরে প্রেমের প্রতিদান সরূপ একইভাবে ছুরিটি তার বুকেও গেঁথে দেয়। দুজনই লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। চির বিদায় নেয় এ পৃথিবী থেকে। অবশেষে দুজনের মিলন হয় একত্রে মাটি চাপা পড়ে।